১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, শুক্রবার, ৯:৫৫

জলবায়ু ফান্ডের আরো ১৭৩ কোটি টাকা ফেরত দিতে পারছে না ফারমার্স ব্যাংক

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সহায়তা চেয়ে ফান্ড এমডির চিঠি

দুর্নীতিগ্রস্ত ফারমার্স ব্যাংকে ৫০৮ কোটি টাকার জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের অর্থ রেখে মহাবিপদে পড়ে গেছে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়। উপরের চাপে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এই অর্থ ফারমার্স ব্যাংকে রাখা হয়েছিল ‘স্থায়ী আমানত’ বা এফডিআর হিসেবে। কিন্তু মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর এ অর্থ ফেরত দিতে পারছে না ফারমার্স ব্যাংক। প্রথম দফায় মেয়াদ উত্তীর্ণ ২২০ কোটি টাকা ফারমার্স ব্যাংকের কাছে ফেরত চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু এ বিষয়ে কোনো সাড়া দেয়নি ফারমার্স ব্যাংক। এ জন্য পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে অনেক দেরদরবারও করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের দ্বারস্থও হয়েছিল পরিবেশ মন্ত্রণালয়। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এখন আমানতের মেয়াদ উত্তীর্ণ আরো ১৭৩ কোটি ১২ লাখ টাকাও ফেরত দিচ্ছে না ফারমার্স ব্যাংক। এ জন্য আবারো বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দীপক কান্তি পাল। তিনি স¤প্রতি একটি পত্র লেখে এই ব্যাপারে সহায়তা চান। চিঠির একটি কপি অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিবের কাছেও পাঠানো হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট এক সূত্র জানায়।
চিঠিতে বলা হয়েছে, দি ফারমার্স ব্যাংক লিমিটেড ঢাকায় এর বিভিন্ন শাখায় জলবায়ু পরিবর্তন ফান্ডের মোট ৫০৮ কোটি ১৩ লাখ ২৯ হাজার টাকা এক বছর মেয়াদে স্থায়ী আমানত হিসেবে রক্ষিত আছে। রক্ষিত স্থায়ী আমানতের মধ্যে মেয়াদ উত্তীর্ণ ২২০ কোটি ৬৯ লাখ ৭১ হাজার ৬৮০ কোটি টাকা নগদায়ন করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা /নির্দেশনা দেয়ার জন্য বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে অনুরোধ করা হয়েছিল। সে পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে গত ২৩ জানুয়ারি জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের মেয়াদ উত্তীর্ণ ২২০ কোটি ৬৯ লাখ ৭১ হাজার ৬৮০ টাকার স্থায়ী আমানত পর্যায়ক্রমে পরিশোধ করার জন্য ফারমার্স ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে চিঠি দেয়া হয়।
চিঠিতে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, ফারমার্স ব্যাংক মতিঝিল শাখায় রক্ষিত জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ডের ১৭৩ কোটি ১২ লাখ ৬৩ হাজার ৯৫০ টাকার আরো একটি এফডিআর ২১ জানুয়ারি মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে। সেটি নগদায়নের জন্য গত ১৪ জানুয়ারি এবং চলতি ফেব্রæয়ারি মাসের ৬ তারিখে তাগিদপত্র দেয়া হয়। কিন্তু দি ফারমার্স ব্যাংক মতিঝিল শাখা অদ্যাবধি স্থায়ী আমানতসমূহ সুদাসলসহ নগদায়ন করেনি।
এ পরিস্থিতিতে ব্যাংকটির মতিঝিল শাখায় রক্ষিত জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ডের ১৭৩ কোটি ১২ লাখ ৬৩ হাজার ৯৫০ টাকা নগদায়ন করার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়ার জন্য গর্ভনরকে অনুরোধ করা হয়েছে।
ফারমার্স ব্যাংকে জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্টের অর্থ রাখা নিয়ে সংসদে বিবৃতিও দিয়েছেন পরিবেশ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। তিনি এই ব্যাংকে অর্থ রাখা নিয়ে ক্ষোভও প্রকাশ করেন। শুধু তাই নয়, দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) পক্ষ থেকে বিবৃতি দেয়া হয়েছিল। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক এই বিবৃতিতে বলেছেন, ‘ফারমার্স ব্যাংকে জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের গচ্ছিত ৫০৮ কোটি টাকা আমানতের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পর চাহিদা অনুযায়ী ফেরত দিতে ব্যর্থতার ঘটনা শুধু উদ্বেগজনকই নয়, পুরো ব্যাংকিং খাতের জন্য অশনিসঙ্কেতও।’
তিনি বলেছেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবেলায় বাংলাদেশ সরকার নিজস্ব অর্থায়নে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট তহবিল গঠনের উদ্যোগ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রশংসিত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সেই তহবিলের অর্থ তুলনামূলকভাবে সুখ্যাতিসম্পন্ন ও বিশ্বাসযোগ্য প্রতিষ্ঠানে জমা না রেখে কোন যুক্তিতে, কার স্বার্থে ফারমার্স ব্যাংকে অধিক মুনাফার নামে রাখা হলো, সেই প্রশ্নই এখন সবার।’
তহবিলটি পরিচালনায় সংশ্লিষ্ট সবার স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও শুদ্ধাচার নিশ্চিতের আহŸান জানিয়ে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিযোজন কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় তহবিল ছাড়ে বিলম্ব হলে তিগ্রস্ত অঞ্চল ও জনগোষ্ঠীর ঝুঁকি আরো বৃদ্ধি পাবে, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এর থেকে উত্তরণে জলবায়ু তহবিলের অর্থ বিনিয়োগের জন্য সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়নের আহŸান জানায় টিআইবি।’

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/294187