১ জুলাই ২০২৪, সোমবার, ৮:২২

গ্রামাঞ্চলে ১০-১৬ ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ থাকছে না

ঈদের ছুটি শেষে শিল্প-কারখানা ও অফিস-আদালতের কার্যক্রম পুরোদমে শুরু হওয়ায় বেড়েছে বিদ্যুতের চাহিদা। কিন্তু জ্বালানিসংকটের কারণে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না। সারা দেশে তীব্র গরমের মধ্যে লোডশেডিংয়ে জনজীবন তাই বিপর্যস্ত। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা থাকছে না বিদ্যুৎ।

এতে শিল্পের উৎপাদন ব্যাহত হওয়াসহ চলমান এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় বিঘ্ন ঘটছে।
ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার কালের কণ্ঠ প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে দেখা গেছে, বেশ কয়েক দিন ধরেই গ্রামাঞ্চলে দিনে-রাতে গড়ে ১০ থেকে ১৬ ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিং হচ্ছে।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) সূত্রে জানা গেছে, ভাসমান দুটি এলএনজি টার্মিনালের মধ্যে একটি ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে এক মাসেরও বেশি ধরে বন্ধ। এতে জাতীয় গ্রিডে এলএনজি সরবরাহ প্রায় ৪৫০ মিলিয়ন ঘনফুট কমে যাওয়ায় বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ কমে গেছে।

অন্যদিকে ঈদের ছুটির সময় চাহিদা কম থাকায় আদানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট বন্ধ রেখে রক্ষণাবেক্ষণ শুরু হয়। এর মধ্যে হঠাৎ করে গত শুক্রবার আদানির দ্বিতীয় ইউনিটটিও কারিগরি ত্রুটিতে বন্ধ হয়ে গেছে। কেন্দ্রটির দুটি ইউনিট থেকে গড়ে প্রায় এক হাজার ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যেত। এ ছাড়া পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৬৬০ মেগাওয়াট সক্ষমতার একটি ইউনিট রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ২৫ জুন থেকে বন্ধ রয়েছে।

এসব কারণে সার্বিক বিদ্যুৎ সরবরাহে বড় ঘাটতি তৈরি হয়েছে।
জ্বালানিসংকটের কারণে সরকার চাইলেই বাড়তি বিদ্যুৎ উৎপাদনে যেতে পারছে না। এখন ঘাটতি বিদ্যুতের পুরোটাই দেশের গ্রামাঞ্চলে লোডশেডিংয়ের মাধ্যমে পূরণ করা হচ্ছে। তবে দেশজুড়ে বিভিন্ন জায়গায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় বিদ্যুতের চাহিদা কিছুটা কম বলে ঘাটতিটা ব্যাপক আকারে বোঝা যাচ্ছে না।

জানতে চাইলে বিপিডিবির সদস্য (উৎপাদন) খন্দকার মোকাম্মেল হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আদানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সামগ্রিক বিদ্যুৎ সরবরাহে কিছুটা প্রভাব পড়েছে।

তবে বৃষ্টিতে আবহাওয়া ঠাণ্ডা থাকায় পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক অবস্থায় আছে। তার পরও কিছু ঘাটতি থাকায় বিভিন্ন এলাকায় লোডশেডিং করতে হচ্ছে। কয়েক দিনের মধ্যেই আদানির কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হবে। এখনকার সংকট সাময়িক। আশা করছি কিছুদিন পর সমস্যা থাকবে না।’

জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সঞ্চালনের দায়িত্বে থাকা একমাত্র রাষ্ট্রীয় সংস্থা পাওয়ার গ্রিড কম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) সূত্রে জানা গেছে, গতকাল রবিবার দুপুর ১টার দিকে লোডশেডিং হয়েছে ৬৫৩ মেগাওয়াট। তখন ১৩ হাজার ২৫০ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন হয় ১২ হাজার ৫৬৬ মেগাওয়াট। তবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, রবিবার বৃষ্টির কারণে চাহিদা অনেকটাই কম থাকলেও দিনের বেলা বিদ্যুতের চাহিদা ও সরবরাহে এক হাজার থেকে দেড় হাজার মেগাওয়াটের বেশি ঘাটতি ছিল।

দেশের প্রায় ৮০ শতাংশ গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহের দায়িত্বে রয়েছে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি)। এই প্রতিষ্ঠানের বিতরণ এলাকায়ই এখন সবচেয়ে বেশি লোডশেডিং হচ্ছে। আরইবির জোনভিত্তিক লোডশেডিং তথ্যে দেখা গেছে, গতকাল বিকেল ৩টার দিকে এই বিতরণ কম্পানিকে ৬৮১ মেগাওয়াট লোডশেডিং করতে হয়েছে।

বরিশাল : বরিশালে দুই ঘণ্টা পর পর এক ঘণ্টা লোডশেডিং হওয়ার কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর উৎপাদন কমে গেছে। এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হওয়ায় ভোগান্তির মধ্যে পড়েছে পরীক্ষার্থীরা। বরিশালের প্রতিটি পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে শিক্ষার্থীদের মোমবাতি সংগ্রহ করে কেন্দ্রে যেতে বলা হয়েছে।

বরিশালের সবচেয়ে বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান বিসিক শিল্পনগরীর ফরচুন কম্পানিজ লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমরা চাহিদার ৬০ শতাংশ বিদ্যুৎ পাচ্ছি না। ফলে আগে যে পণ্য উৎপাদন করতাম তার অর্ধেকও উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে না।’
বগুড়া : ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে এলাকার শিল্প-কারখানায় উৎপাদন চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি কামাল মিয়া বলেন, জেলাজুড়ে থাকা এক হাজারের বেশি হালকা প্রকৌশল শিল্প-কারখানা লোডশেডিংয়ের কারণে চালু রাখাই দুষ্কর হয়ে পড়েছে। এক ঘণ্টা পর পর লোডশেডিং হওয়ায় শ্রমিকরা কাজ করতে পারছেন চার ঘণ্টা, কিন্তু তাঁদের বেতন দিতে হচ্ছে আট ঘণ্টারই।

সুনামগঞ্জ : সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলে দিনরাত মিলিয়ে ১৬ থেকে ১৮ ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। উপজেলার বাসিন্দা মো. সবুজ মিয়া বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে টানা লোডশেডিং লেগেই আছে। রাতে বিদ্যুৎ না থাকায় বাচ্চাদের পড়াশোনার ক্ষতি হচ্ছে। যেহেতু বর্ষাকাল, তাই অন্ধকারে সাপের উপদ্রবের ভয়ও আছে।’

নোয়াখালী : নোয়াখালী জেলা শহরের বাসিন্দারা দিনে ছয় ঘণ্টাও বিদ্যুৎ পাচ্ছে না। দিনের পাশাপাশি রাতেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকায় শহরবাসী দুর্বিষহ জীবন কাটাচ্ছে। লোডশেডিং চলমান থাকায় এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের পড়াশোনায়ও ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে।
কক্সবাজার : কক্সবাজারের চকরিয়া ও পেকুয়ায় চাহিদার অর্ধেকও বিদ্যুৎ সরবরাহ দেওয়া হচ্ছে না। বাসাবাড়ির ফ্রিজের খাদ্যসামগ্রীও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

https://www.kalerkantho.com/print-edition/last-page/2024/07/01/1402130