আমীরে জামায়াত

ডা. শফিকুর রহমান বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ইসলামিক রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সম্মানিত আমীর।

বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে ডা. শফিকুর রহমান এক অনন্য নাম। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর চতুর্থ আমীর হিসেবে তিনি নির্বাচিত হন। এদেশের ইসলামপন্থী তৌহিদী জনতার আস্থার প্রতীক ডা. শফিকুর রহমান। ব্যক্তিগত, পারিবারিক, পেশাগত ও জাতীয় রাজনৈতিক জীবনে তিনি সততা, যোগ্যতা, মেধার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। দেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও গণমানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন। জামায়াতে ইসলামীর আন্দোলনকে সারা দেশে ছড়িয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে ডা. শফিকুর রহমান- এর ভূমিকা উল্লেখ করার মত। সংগঠনকে তৃণমূল পর্যন্ত পৌঁছানো ও সুস্থ সংগঠন হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে তিনি অবিশ্রান্তভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

 

ব্যক্তিজীবন

ডা. শফিকুর রহমান বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে এক অনন্য নাম। এদেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠায় যারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন তাদের মধ্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান অন্যতম। ব্যক্তিগত, পারিবারিক, পেশাগত ও জাতীয় রাজনৈতিক জীবনে তিনি সততা, যোগ্যতা, মেধার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। দেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও গণমানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন। 

জন্ম :
জাতির এই সাহসী সন্তান ও প্রতিভাবান রাজনীতিবিদ ১৯৫৮ সালের ৩১ অক্টোবর মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া থানার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মোহাম্মদ আবরু মিয়া এবং মাতার নাম খতিবুন্নেছা। শফিকুর রহমান এর তিন ভাই ও এক বোন রয়েছে। ভাই-বোনদের মধ্যে তিনি তৃতীয়। 

শিক্ষা ও ক্যারিয়ার :
ডা. শফিকুর রহমান ১৯৭৪ সালে স্থানীয় বরমচাল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এস এস সি এবং ১৯৭৬ সালে সিলেট এম সি কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে এইচ এস সি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তিনি ১৯৮৩ সালে সিলেট মেডিকেল কলেজ (বর্তমান এম এ জি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ) থেকে এমবিবিএস ডিগ্রী অর্জনের পর চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি রাজনীতিতে আত্মনিয়োগ করেন।

রাজনৈতিক জীবন :
বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী ডাঃ শফিকুর রহমান জাসদ ছাত্রলীগের মাধ্যমে ছাত্র রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন। ১৯৭৩ সালে জাসদ ছাত্রলীগে যোগদান করেন। ১৯৭৭ সালে দ্বীন প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়দীপ্ত কাফেলা বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরে যোগদান করেন। পরবর্তিতে এই সংগঠনের সিলেট মেডিকেল কলেজ শাখার সভাপতি এবং সিলেট শহর শাখার সভাপতির দয়িত্ব পালন করেন।

১৯৮৪ সালে জামায়াতে ইসলামীতে যোগদানের মাধ্যমে তিনি বৃহত্তর রাজনীতিতে পদার্পন করেন। এরপর সিলেট শহর, জেলা ও মহানগরী আমীর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৬ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত জামায়াত ইসলামীর সেক্রেটারী জেনারেল হিসেবে নিযুক্ত হয়ে সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৯ সালের ১২ নভেম্বর জামায়াতে ইসলামীর রুকনগণের (সদস্য) প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে আমীর নির্বাচিত হন এবং ২০১৯ সালের ৫ ডিসেম্বর ২০২০-২০২২ কার্যকালের জন্য তিনি আমীরে জামায়াত হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। 

একনজরে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীতে উল্লেখযোগ্য দায়িত্বসমুহ:
১৯৮৫ : কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার নির্বচিত সদস্য
১৯৮৬-৮৮ : সিলেট জেলা সেক্রেটারী
১৯৮৯-৯১ : সিলেট জেলা নায়েবে আমীর
১৯৯১-৯৮ :

সিলেট জেলা আমীর
১৯৯৮ : কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য
১৯৯৮-২০০৭ : সিলেট মহানগর আমীর
২০১০ : এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারী জেনারেল
২০১১ : নির্বাহী পরিষদ সদস্য
২০১১-২০১৬ : ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারী জেনারেল
২০১৭-২০১৯ : সেক্রেটারী জেনারেল
২০২০ : আমীরে জামায়াত (অদ্যবধি) 

পারিবারিক জীবনঃ
ডা. শফিকুর রহমান ১৯৮৫ সালে ডা. আমিনা বেগমের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ডাঃ আমিনা বেগম অষ্টম জাতীয় সংসদের সদস্য ছিলেন। তিনি দুই মেয়ে ও এক ছেলের জনক। বড় মেয়ে এফসিপিএস (কার্ডিওলোজি) অধ্যয়নরত এবং একটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেজিস্ট্রারার হিসেবে কর্মরত। ছোট মেয়ে এমবিবিএস ও এমপিএইচ ডিগ্রী অর্জনের পর এখন একটি বেসরকারী মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক হিসাবে কর্মরত আছেন। একমাত্র ছেলে এমবিবিএস ৫ম বর্ষে (শেষ বর্ষ) অধ্যয়নরত।

সামাজিক কাজ :
জননেতা ডা. শফিকুর রহমান প্রখ্যাত রাজনীতিকই নন বরং তিনি একজন খ্যাতিমান সমাজ সেবক, বলিষ্ঠ সংগঠক এবং সফল উদ্যোক্তা। তিনি একটি বেসরকারী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। একনজরে আমরা ডা. শফিকুর রহমানের সামাজিক কাজের কিছু অংশ দেখবো।
১. একটি বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান
২. একটি হাইস্কুল ও কলেজ এর গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান হিসাবে বিভিন্ন মেয়াদে দায়িত্ব পালন
৩. একাধিক হাইস্কুলের ম্যানেজিং কমিটির চেয়ারম্যান হিসাবে বিভিন্ন মেয়াদে দায়িত্ব পালন
৪. একটি কামিল মাদ্রাসার গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন
৫. একাধিক ইয়াতিমখানা প্রতিষ্ঠার উদ্যোক্তা
৬. একাধিক দাতব্য হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা
৭. কয়েকটি মসজিদ প্রতিষ্ঠা
৮. ছাত্রজীবনে মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র থাকা অবস্থায় স্বেচ্ছায় রক্তদানকারী ক্লাব ”পালস” প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি হিসাবে দায়িত্বপালন।
৯. একাধিক পাঠাগার প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা
১০. সিলেট কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের আজীবন সদস্য
১১. বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির আজীবন সদস্য
১২. বাংলাদেশ মেডিক্যাল এসোসিয়েশন (বিএমএ) এর আজীবন সদস্য
১৩. সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এর সদস্য

বিদেশ ভ্রমনঃ
তিনি আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সভা সেমিনারে যোগদানের জন্য যুক্তরাজ্য, ইতালি, জার্মানী, অষ্ট্রিয়া, স্পেন, গ্রীস, তুরস্ক, বেলজিয়াম, আয়ারল্যান্ড, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ফিলিফাইন্স, ব্রুনাই ও মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেন। 

উল্লেখযোগ্য ঘটনাবলী

সাবেক আমীরে জামায়াত জনাব মকবুল আহমাদ এর উল্লেখযোগ্য ঘটনা- 'আল্লাহর সন্তুষ্টি জীবনের লক্ষ্য'

জনাব মকবুল আহমাদের জীবনের উদ্দেশ্য হলো মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। এ লক্ষ্যে তিনি তার জীবনকে সাজানোর চেষ্টা করেছেন। বিভিন্ন আলোচনা, শিক্ষা বৈঠক, শিক্ষাশিবির, দায়িত্বশীল বৈঠক ও বিভিন্ন সভায় তিনি মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নিজের জীবন কেন্দ্রীভূত করার বিষয়কে সামনে রেখে বক্তব্য উপস্থাপন করতেন। তিনি স্কুল জীবনের ঘটনা উল্লেখ করে বলেনঃ “স্কুল জীবনে আমার আর একটা সুন্দর ঘটনা মনে পড়ে। আমরা যখন ছাত্র ছিলাম প্রায়ই একটা রচনা আসত ‘তোমার জীবনের উদ্দেশ্য কী (Your aim in life)।’ কেউ কেউ লিখত ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, মন্ত্রী ইত্যাদি হবো। আমরাও লিখেছি, নাম্বার পেয়েছি, আবার শিক্ষকতার জীবনে ছাত্ররা লিখেছে আমরা নাম্বারও দিয়েছি।

কিন্তু ইসলামী আন্দোলনে যোগ দেয়ার পর, ‘কুল ইন্না ছালাতি, ওয়া নুসুকি, ওয়া মাহ-ইয়া ইয়া, ওয়া মামাতি, লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন’। এ আয়াতের তরজমা মর্মার্থ জানার পর জীবনের ধারণা, উদ্দেশ্য সব বদলে গেল। অনেক জায়গায় আলোচনায় এটা বলার চেষ্টা করি আমার জীবনের উদ্দেশ্য কখনো ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, মন্ত্রী প্রভাবশালী নেতা হওয়া উল্লেখ করার মতো বিষয় হতে পারে না। বড়জোর জীবনে কী প্রফেশন Choice করবো তার জন্য এটা বলা যায়। সত্যিকার মানুষের জীবনের লক্ষ্য তাই হওয়া উচিত যা আমাদের স্রষ্টা, প্রতিপালক মহান আল্লাহ তার কোরআনে আমাদের জীবনের উদ্দেশ্য লক্ষ্য কী হওয়া উচিত তা বলে দিয়েছেন। ‘কুল ইন্না ছালাতি, ওয়া নুসুকি, ওয়া মাহ-ইয়া ইয়া, ওয়া মামাতি, লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন’ (সূরা আন’আম-১৬২) অর্থাৎ আমার নামাজ, আমার কুরবানি, আমার জীবন, আমার মৃত্যু সবই মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহর জন্য। যখনই যেখানে কথা বলেছি, তখনই এ Reference এনেছি সবাই অনুভব করেছে এটাই তো আসলে আমাদের জীবনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য হওয়া উচিত। আমি জীবনে যত কাজ করব সবই এ লক্ষ্যকে সামনে রেখেই করব। যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন, অস্তিত্ব দান করেছেন, আমাকে প্রতিপালন করেছেন, সুখ শান্তি জীবনোপকরণ দিয়েছেন- তাকেই সবসময় কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ রেখে তার আদেশ নিষেধ মেনে চলার মধ্যেই আমাদের সকল কল্যাণ নিহিত। বর্তমানে আমরা যা দেখছি, যত জুলুম-নির্যাতন, অন্যায় অবিচার, মানুষের অবর্ণনীয় দুঃখ কষ্ট, মানুষ নিজ প্রতিপালককে না জানা, না মানা, তার নির্দেশিত পথে না চলার কারণেই হচ্ছে। দুর্ভাগ্য এ কারণেই এ অধপতন হচ্ছে তাও জানে না। লেখাপড়ায় টেকনোলজি জানা, জীবনের সুখ-সুবিধা বেশি পাওয়ার পদ্ধতিই প্রধান। কিন্তু তার স্রষ্টাকে জানার কোনো চেষ্টা নেই।”