আমীরে জামায়াত

2016-10-15

মতিউর রহমান আকন্দ

আমীরে জামায়াত জননেতা মকবুল আহমাদ প্রসঙ্গে

॥এক॥
যে কোন আন্দোলনের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি সম্পর্কে জানার জন্য জনমনে কৌতূহল থাকা খুবই স্বাভাবিক। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী একাধারে একটি ইসলামী আন্দোলন ও রাজনৈতিক দল। বর্তমান বিশ্বে এ দলটি বহুল আলোচিত। বাংলাদেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এ দলটি আল্লাহ তায়ালার অশেষ মেহেরবানীতে বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে। সরকারের অব্যাহত জুলুম-নিপীড়ন, হত্যা, গুম, রিমান্ডের নামে নির্যাতনসহ হেন নিপীড়ন নেই যা জামায়াতের ওপর চালানো হচ্ছে না। সরকারের সকল নিপীড়ন মোকাবেলা করে জামায়াত তার আদর্শের ঝান্ডা ধারণ করে সামনে এগিয়ে চলেছে। দেশের শান্তিপ্রিয় ও গণতন্ত্রমনা নাগরিকগণ নিজেদের জীবনের নিরাপত্তা, শান্তি ও স্বস্তির জন্য জামায়াতকেই তাদের প্রিয় ঠিকানা হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছে। জামায়াতের প্রতি মানুষের সহানুভূতি ও ভালবাসা অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

জামায়াতে ইসলামীর আমীর শহীদ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারী জেনারেল শহীদ জনাব আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, সিনিয়র সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল শহীদ জনাব মুহাম্মাদ কামারুজ্জামান, সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল শহীদ জনাব আবদুল কাদের মোল্লা, সংগঠনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য শহীদ জনাব মীর কাসেম আলীকে সরকার ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় ফাঁসি কার্যকরের নামে হত্যা করে তাদের উপর চরম জুলুম ও অন্যায় করেছে। সরকারের এ জুলুমের ফলে জনগণের অন্তরে জামায়াতের অবস্থান আরো মজবুত হয়েছে।

আমীরে জামায়াত মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীকে শহীদ করার পর গঠনতন্ত্র মোতাবেক জামায়াতের আমীর নির্বাচিত হন শহীদ আমীরে জামায়াতের ঘনিষ্ঠ সহকর্মী ও পরিচ্ছন্ন ব্যক্তিত্বের অধিকারী জনাব মকবুল আহমাদ। যিনি দীর্ঘ ছয় বছর ভারপ্রাপ্ত আমীরের দায়িত্ব পালন করেছেন। আমীরে জামায়াত হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পরই তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার শুরু হয়। মিথ্যা, বানোয়াট কল্পকাহিনী রচনা করে আমীরে জামায়াতের সম্মান-মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করার অপচেষ্টা চালানো হয়।

আমীর নির্বাচিত হওয়ার পর একটি বিশেষ মহল কর্তৃক তাকে ১৯৭১ সালের ঘটনায় জড়িয়ে বিভিন্ন অপপ্রচার চালাতে থাকে। তাদের উদ্দেশ্য হলো আমীরে জামায়াত জনাব মকবুল আহমদের ব্যক্তিত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করা এবং তাকে ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় জড়িয়ে তার উপর জুলুম করা। অপপ্রচারকারীদের এ তৎপরতায় জনগণের মাঝে পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে যে, যিনি জামায়াতের আমীর হবেন তাকেই তারা অপপ্রচারের টার্গেটে পরিণত করবে। অপপ্রচারকারীদের এসব বক্তব্যের সাথে জনাব মকবুল আহমদের কোন সম্পর্ক নেই। তিনি জন্মলগ্ন থেকে এ যাবত পর্যন্ত যেভাবে জীবন যাপনে অভ্যস্ত তাতে তার মত একজন ব্যক্তির পক্ষে কোন ধরনের বিতর্কিত কর্মকান্ডে সংশ্লিষ্ট হওয়ার প্রশ্নই আসেনা। তার জীবন সম্পর্কে জানলেই স্পষ্ট বুঝা যাবে তিনি কেমন ব্যক্তি, কি তার পরিচয়? এ প্রেক্ষিতে আমীরে জামায়াত জনাব মকবুল আহমাদের সংক্ষিপ্ত পরিচয় তুলে ধরা হলো।

॥দুই॥
জন্ম
জনাব মকবুল আহমাদ ১০ই জৈষ্ঠ্য ১৩৪৫ সালে ফেনী জেলার দাগন ভূঁইয়া থানার পূর্ব চন্দ্রপুর ইউনিয়নের ওমরাবাদ গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। দিনটি ছিল মঙ্গলবার। বাদ ফজর পূর্বাকাশে সূর্য উদিত হবার মুহূর্তে দুনিয়ায় আগমন করেন জনাব মকবুল আহমাদ। তারা ৫ ভাই ও ৩ বোন। তিনি ভাইবোনদের মধ্যে পঞ্চম।

তার পিতা আলহাজ্জ নাদেরুজ্জামান একজন গণ্যমান্য ন্যায় বিচারক হিসেবে এলাকায় ব্যাপক পরিচিত ছিলেন। মাতা আনজিরের নেসা একজন গৃহিণী ছিলেন। তার মা গরীব ও অভাবী মানুষদেরকে বেশ সাহায্য করতেন ও তাদের সুখ-দুঃখের কথা দরদ দিয়ে শুনতেন। এ জন্য গরীব, অভাবী ও অসহায় মানুষগুলো তাকে খুবই আপন মনে করতো। গরীব মহিলারা প্রায়ই গৃহস্থালীর জিনিস ও বিভিন্ন সহযোগিতা নিতে তার কাছে আসত।


জনাব মকবুল আহমাদের পিতা ন্যায়পরায়ণ লোক ছিলেন। এলাকার মানুষ তার কাছে সমস্যা সমাধানের জন্য আসত। তিনি সকলের সাথে ইনসাফপূর্ণ আচরণ করতেন। সামাজিক কর্মকান্ডেও তিনি খুবই আগ্রহী ছিলেন। এলাকার ছোটখাট বিচার সালিশে ন্যায় ইনসাফের কারণে তিনি খুবই সুনাম অর্জন করেছিলেন। প্রতি রমজানে এলাকার গরীব লোকদের নিয়ে ইফতারের আয়োজন করতেন। ইফতার শেষে ভাত-ডাল-গোশ্ত দিয়ে খাবার ব্যবস্থা করতেন তিনি। তার এ সামাজিক অনুষ্ঠানের কারণে তিনি সকলের নিকট সম্মানের পাত্র ছিলেন। কুরবানীর ঈদের পর দিন এলাকার লোকদেরকে মেহমানদারী করতেন তিনি। গোস্ত রুটি দিয়ে তাদের আপ্যায়ন করতেন। এটা ছিল আনন্দ ও খুশির সমাবেশ। এ খুশির অনুষ্ঠানে পাড়া প্রতিবেশী সকলেই শামিল হতো।

পিতা-মাতার সাদাসিধে অনাড়ম্বরপূর্ণ জীবন-যাপন এবং সামাজিক কার্যক্রমের প্রভাব সন্তান হিসেবে জনাব মকবুল আহমাদের ওপরে পরে। সেই বাল্যকাল থেকে শুরু করে আজও তিনি বাবা-মার সেই সামাজিকতা ও পরোপকারিতা নিজের মধ্যে ধারণ করে মানুষের জন্য কল্যাণকর কিছু করার চেষ্টা করেন।

বাল্য শিক্ষা
জনাব মকবুল আহমাদ বাল্যকালে নিজ গ্রামের মসজিদে (মক্তবে) সূরা, ক্বিরাত, কুরআন পাঠে এলাকার অন্যান্য ছেলেদের সাথে দল বেধে অংশগ্রহণ করতেন। উৎসবের মত ছিল সে দিনগুলো। নিজ গ্রামেই তিনি চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। তখন গ্রামের প্রাইমারী স্কুলে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্তই লেখাপড়া হত। নিজ গ্রামের প্রাইমারী স্কুলের লেখাপড়া শেষ করে তিনি দাগন ভূঁইয়া আতাতুর্ক হাইস্কুলে ভর্তি হন। তিনি স্কুলে ক্লাসের ফার্স্ট বয় ছিলেন। ভাল ছাত্র হিসেবে তিনি সর্বমহলে পরিচিত ছিলেন। এ জন্য সকলেই তাকে খুব সমীহ করতো। আতাতুর্ক হাইস্কুলে ৪ বছর পড়াশুনার পর অষ্টম শ্রেণিতে তিনি প্রথম স্থান অধিকার করেন। স্কুলের প্রধান শিক্ষক মরহুম জালাল আহমদ বি.এ.বি.টি সাহেব ফেনী চলে যাওয়ায় জনাব মকবুল আহমাদকেও ফেনীতে ট্রান্সফার করা হয়। ঐ সময় তিনি আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে লজিং থেকে লেখাপড়া করতেন। বাড়ির লজিং মাস্টার ও পরিবারের সদস্যরা তাকে খুবই আদর ও স্নেহ করতেন। আজও জনাব মকবুল আহমাদ তাদের জন্য প্রাণ খুলে দোয়া করেন।

স্কুল জীবনে সাপ্তাহিক ছুটিতে এক/দেড় দিনের জন্য বাড়িতে যেতেন। কোন কোন সময় বিশেষ করে স্কুলের বার্ষিক ছুটির সময় একাধারে ১৫/২০ দিন নিজ এলাকায় থাকতেন। ছুটির সময় সমবয়সী আত্মীয় ও বন্ধু বান্ধবদের নিয়ে খেলাধুলায় মত্ত থাকতেন ও বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে যেতেন।

কলেজ জীবন
ফেনী কলেজের ছাত্র থাকা অবস্থায় ১৯৬২ সালে স্কুল/কলেজের বেশ কয়েকজন ছাত্র নিয়ে তিনি ‘ওমরাবাদ পল্লী মঙ্গল সমিতি’ নামে একটি সমাজকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। পুকুরের কচুরি পানা পরিষ্কার, রাস্তাঘাট মেরামতসহ জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণ করেন। তার এ সমাজকল্যাণমূলক কর্মকা- এলাকায় ব্যাপক সাড়া জাগায়। কলেজ জীবনে কলেজের বার্ষিক মিলাদুন্নবীর অনুষ্ঠানে কলেজের তদানীন্তন অধ্যক্ষ ওবায়দুল্লাহ মজুমদার যিনি এক সময় আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী ছিলেন তার উদ্যোগে বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক অধ্যাপক গোলাম আযমকে সীরাতুন্নবী আলোচনার জন্য প্রধান বক্তা হিসেবে দাওয়াত দেয়া হয়। তিনি ‘নবী (সাঃ) জীবনের আদর্শ’ এ বিষয়ে খুবই হৃদয়গ্রাহী আলোচনা পেশ করেন। এ আলোচনা তার মনে বেশ দাগ কাটে। তখন থেকেই জনাব মকবুল আহমাদ নবীর জীবনী পড়া ও কোরআন বুঝার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে ইসলামী বই পুস্তক পড়তে আরও বেশী আগ্রহী হন।

সীরাতের এ আলোচনা জনাব মকবুল আহমাদের ওপর ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে। আলোচনা শুনে তিনি বুঝতে সক্ষম হন সমাজের মূল সমস্যা সৎ, যোগ্য লোক তৈরী না হওয়া। এ জন্য সার্বিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে সমাজে চরিত্রবান নেতৃত্ব সৃষ্টি করে জনগণের সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করা ইসলামী আন্দোলনের অন্যতম প্রধান কাজ।

অধ্যাপক গোলাম আযমের বক্তব্য থেকে তিনি নবীর (সাঃ) জীবন ও নবীর পথ সম্পর্কে বুঝতে সক্ষম হন। জনাব মকবুল আহমাদ আরো হৃদয়াঙ্গম করেন যে, জনগণের দুঃখদুর্দশা লাঘব করার জন্য মানুষের মধ্যে প্রথমেই সত্য ও সততার বীজ বপন করেছিলেন নবী করিম (সাঃ)। মানুষের যিনি স্রষ্টা তাকে চেনা, তার হুকুম জানা, সে অনুযায়ী নিজকে ও সমাজকে গঠনের চেষ্টা করা। রাসূল (সাঃ) জনগণের কল্যাণের জন্য ‘হিলফুল ফুজুল’ নামক জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব দেন। তার কাজ ছিল ছোট ছেলেমেয়েদের শিক্ষা দেয়া, জনগণের দুঃখ দুর্দশা লাঘবের জন্য গরীব দুঃখীদের সাহায্য সহযোগিতা করা। অত্যাচারীদের জুলুম থেকে মানুষকে রক্ষা করা। কিন্তু হিলফুল ফুজুল থেকে সমাজ উপকৃত হলেও সমাজের অন্যায় অত্যাচার সমূলে উৎপটিত হচ্ছে না। রাসূল (সাঃ) পেরেশানীতে দিন কাটাচ্ছেন। হেরা গুহায় ধ্যানমগ্ন অবস্থায় তার দিন যাচ্ছিল। কিছুদিনের মধ্যে আল্লাহর পক্ষ থেকে নাজিল হলো মহাগ্রন্থ আল কোরআন। মানুষকে আল্লাহর পথে আহ্বানের নির্দেশে আসলো। ঘোষণা করা হলোঃ “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সাঃ)।” আল্লাহকে চেনা, তার নবীকে মানা ছাড়া সমাজ পরিপূর্ণভাবে পরিবর্তন হয়ে বাস্তবে একটা কল্যাণকামী সমাজ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে না। রাসূল (সাঃ) সমাজের লোকদের কাছে মানুষের স্রষ্টা আল্লাহর পরিচয় তুলে ধরলেন। একদিন তিনি ছাফা পাহাড়ের উপর উঠলেন এবং জনগণকে ডেকে বললেন, “পাহাড়ের অপর দিকে কি আছে তোমরা কেউ দেখেছ? আমি যদি বলি দুশমন লুকিয়ে আছে, তোমরা তা বিশ্বাস করবে?” তারা বলল, হ্যাঁ বিশ্বাস করব, কারণ আপনি পাহাড়ের উপরে আছেন তাই দেখছেন। তদুপরি আপনি আল-আমিন! বিশ্বাসী!! আপনার কথা অসত্য হতে পারে না। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বললেন, আমি আল্লাহর নবী, আমি বলছি এ দুনিয়ার একজন সৃষ্টি কর্তা আছেন, এক, একক, লা-শরীক, সকল শক্তির মালিক। আসমান ও জমিনে তারই রাজত্ব, তাকে মেনে তার কথা (আল-কুরআন) অনুযায়ী চললে তোমরা এ দুনিয়াতে শান্তিতে বসবাস করবে, আর মৃত্যুর পর অনন্তকালের জন্য কল্যাণের বাসস্থান (বেহেস্ত) পাবে।

পরের ইতিহাস অত্যন্ত পরিষ্কার। যে লোকগুলো দীর্ঘদিন তাকে আল-আমীন, আস-সাদিক (বিশ্বস্ত) বলে আসছেন, তারাই নিজ স্বার্থে, পূর্ব পুরুষের দোহাই দিয়ে আল্লাহর বানী এবং কালেমার দাওয়াতের আলোকে চলতে অস্বীকার করলেন। কিন্তু নবীর (সাঃ) বিরোধীতা সত্ত্বেও পরম ধৈর্য সহকারে সত্যের দাওয়াত তিনি দিয়ে যেতে লাগলেন। শেষ পর্যন্ত তাকে কোরাইশ নেতারা সুযোগ সুবিধা, সুন্দরী রমনী ও ক্ষমতার লোভ দেখাতে লাগলেন। কিন্তু তিনি তাদের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে, জনগণকে মহা সত্যের ডাক দিয়ে যেতে লাগলেন। আর প্রতিউত্তরে রাসূল (সাঃ) বললেন, তোমাদের ধারণা আমি সুযোগ সুবিধা, নেতৃত্ব লাভ ও ক্ষমতায় আরোহনের চেষ্টা করছি- এটা মোটেই ঠিক নয়। তোমরা যদি আমার এক হাতে সূর্য আর এক হাতে চন্দ্রও এনে দাও আমি এ মহা সত্যের দাওয়াত থেকে পিছপা হবো না। তার উপরে অত্যাচার-জুলুম চলতে লাগলো। প্রাণে মেরে ফেলার যড়যন্ত্র হলো। সবকিছুকে উপেক্ষা করে তিনি তার মিশন চালিয়ে যেতে লাগলেন। অতঃপর তাদের অত্যাচারে নিজ জন্মভূমি থেকে হিজরত (আদর্শের জন্য দুনিয়ার সহায় সম্পদ সব ত্যাগ) করে মদীনায় গিয়ে উপস্থিত হলেন।

আপাতঃ দৃষ্টিতে ঝামেলা গেল। কাফের, কুরাইশ, নবীর দুশমনরা খুশি হলো। কিন্তু এ খুশি বেশী দিন রইলো না। তারা ষড়যন্ত্র করল, মহানবী (সাঃ) এখান থেকে চলে গেলেন মদীনায়। মদীনায় গিয়ে শক্তি সঞ্চয় করে আমাদের উপর আঘাত হানবে। তারা এ ধারণায় মদীনায় আক্রমণের পরিকল্পনা নিল।

নবী (সাঃ) আল্লাহর ইশারায় একটি ক্ষুদ্র দল নিয়ে প্রতিপক্ষ কুরাইশদের মোকাবিলায় অগ্রসর হলেন। দুশমনরা প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে এগিয়ে গেল। ঐতিহাসিক বদর ময়দানে মুখোমুখী হলো। এ অসমযুদ্ধে আল্লাহর সাহায্যে মুসলিম বাহিনী শৌর্য বীর্য প্রদর্শন করে বিজয় লাভ করে। ইতিহাসে এ যুদ্ধের অনেক পর্যালোচনা হয়েছে। কিন্তু ইংরেজ, খৃষ্টান, ইহুদী, অমুসলিম ইতিহাসবিদরা আজও স্থির করতে পারলেন না এ অসমযুদ্ধে কিভাবে মুসলিমরা জয়ী হলো। যারা মহান আল্লাহর অসীম ক্ষমতায় বিশ্বাসী তারা দেখলো মুজাহিদদের ঈমানী শক্তি, ন্যায় সততার শক্তি ও আল্লাহর সাহায্যে এ বিজয় সম্ভব হয়েছে।

অধ্যাপক গোলাম আযম সাহেব সুদীর্ঘ প্রায় দেড় ঘণ্টার বক্তব্যে নবী (সাঃ) জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বললেন, কোন আদর্শবাদী দল যদি আল্লাহর উপরে নির্ভর করে নিজদেরকে তৈরী করে তবে আল্লাহর সাহায্যে তারা সফলকাম হতে পারবে।
অধ্যাপক সাহেব দ্বিতীয় যে কথাটি বললেন তা হলো ইসলামের জয়-পরাজয়ের ধারণা (Conception) আলাদা। দ্বীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে যদি জয়ী হন আপনি কামিয়াব (বিজয়ী), যদি জয়ী না হন তবুও সফল। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য জীবনের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত সকল বাধাবিপত্তি মোকাবিলা করে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়াই সফলতা। দুনিয়ায় প্রচলিত জয় পরাজয় ও ইসলামী আন্দোলনের জয় পরাজয় এক রকম নয়।

জনাব মকবুল আহমাদ ছাত্রজীবনে ফেনী কলেজে শুনা অধ্যাপক গোলাম আযমের সে বক্তৃতা আজও ভুলতে পারেন না। জীবনের দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে সে কথা এখনও তার মনে পড়ে। ঈদে মিলাদুন্নবীতে গিয়ে সুর করে দুরূদ পড়া শেষে মিষ্টি, ফিরনী, বিরানী খাওয়া কম আনন্দদায়ক নয়। কিন্তু সীরাতুন্নবী (সা.) এর আলোচনায় জীবনের চলার পথের যে আলো পাওয়া যায় সেটাই নবী জীবনের শিক্ষা এটা অধ্যাপক গোলাম আযমের আলোচনায় শ্রোতাদের নিকট পরিষ্কার হয়। সেদিন থেকে জনাব মকবুল আহমাদ ইসলামী আন্দোলনে ব্যাপকভাবে সক্রিয় হন। অধ্যাপক গোলাম আযমের ব্যক্তিত্ব, জ্ঞানগর্ভ আলোচনা তার জীবনের গতিকে পাল্টে দেয়।


খেলাধুলা
জনাব মকবুল আহমদ একজন ক্রীড়ামোদী ব্যক্তি। তিনি ফেনী কলেজে থাকা অবস্থায় স্পোর্টস এ অংশগ্রহণ করেন। তিনি কলেজে সাঁতার প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন এবং ১ম পুরস্কার পান। তিনি মাঝে মাঝে গ্রামে ফুটবল খেলায় অংশগ্রহণ করতেন। ঐ সময় গোল্লাছুট, হাডুডু খেলার প্রচলন ছিল। তিনি এসবগুলোতে মাঝে মাঝে অংশগ্রহণ করতেন।

কর্মজীবন
জনাব মকবুল আহমদের কর্মজীবন শুরু হয় সরকারী চাকুরীতে যোগদানের মাধ্যমে। প্রথমে একটি ব্যাংকে তার চাকুরী হয়েছিল। কিন্তু তিনি ব্যাংকে চাকুরী করতে অস্বীকৃতি জানান। এ ব্যাপারে পরিবারে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। তিনি ১৯৬২ সালে ঢাকায় পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকারের পাবলিকেশন্স বিভাগে যোগদান করেন। প্রথম থেকে সরকারী চাকুরী না করার একটা প্রবনতা ছিল। স্বাধীনভাবে জীবন পরিচালনার জন্য সরকারী চাকুরী ছেড়ে এক বছর পর তিনি শিক্ষকতার পেশায় চলে যান। শিক্ষকতায় নিজের জ্ঞান অর্জন ও অর্জিত জ্ঞান কল্যাণকর কাজে বিতরণ করে ভবিষ্যৎ নাগরিকদের গড়ে তোলা যায়। তার মধ্যে এরকম একটা অনুভূতি সুপ্তভাবে হলেও ছিল। জনাব মকবুল আহমদের মাঝে বি.এ পাস করে সাংবাদিকতায় উচ্চতর ডিগ্রী নেয়ার আগ্রহ ছিল। তিনি সরিষাদী হাইস্কুলে ৪ বছর ও ফেনী সেন্ট্রাল হাইস্কুলে ৩ বছর শিক্ষকতা করেন। তিনি সাধারণত ইংরেজী, বাংলা, ভূগোল, ইতিহাস এ বিষয়গুলোই পড়াতেন। শিক্ষকতা জীবনে তিনি ছাত্র, শিক্ষক, অভিভাবকসহ সকল মহলে সুনাম ও সুখ্যাতি অর্জন করেন। সরিষাদী হাইস্কুল ম্যানেজিং কমিটিতে তিনি ৪ বছর শিক্ষক প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত সদস্য ছিলেন।

স্কুলে বাংলা সাহিত্য পড়ানোর সময় মহৎ লোকদের জীবনী এবং তাদের জীবনের সুন্দর দিকগুলো আকর্ষণীয় ভাষায় বুঝিয়ে দিতেন। তিনি একজন আদর্শ শিক্ষক হিসেবে ছেলেদেরকে চরিত্রবান নাগরিক রূপে গড়ে তুলতে চেষ্টা করতেন। ক্লাসে লেখাপড়া শেষে ৮ম-৯ম শ্রেণীর ছাত্রদের আচার-আচরণ, নৈতিক দিক, পিতামাতাকে সম্মান ও প্রতিবেশীদের সাথে সম্পর্কের ব্যাপারে বিভিন্ন বিষয় আলোচনা করতেন। ছাত্রদের মধ্যে কোন মনোমালিন্য হলে তিনি তা মিটিয়ে দিতেন।
https://goo.gl/EAvimv


১৯৭১ সালে জনাব মকবুল আহমাদ দৈনিক সংগ্রামের বিশেষ সংবাদদাতা হিসেবে কাজ করেন। কক্সবাজারের চিংড়ির উপরে তার প্রতিবেদন বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করে। তিনি লিখেছিলেন বাংলাদেশের Black Gold, সৌদী Liquid Gold-কে ছাড়িয়ে যাবে। এ চিংড়ি পৃথিবীর বাজারে সুনাম অর্জন করেছিল।

যেভাবে সংগঠনে এলেন
ফেনীতে ৯ম শ্রেণীর ছাত্র থাকাকালে ফেনীর সুপরিচিত আলেম জনাব আব্দুস সাত্তার সাহেব জনাব মকবুল আহমদকে ইসলামী আন্দোলনের দাওয়াত দেন। প্রথম প্রথম তিনি এ দাওয়াতের গুরুত্ব দেননি। বরং মন্তব্য করতেন ‘আমরা রাজনীতি করিনা’।
জনাব আব্দুস সাত্তার সাহেব মকবুল আহমদের পেছনে লেগেই ছিলেন; এক পর্যায়ে জনাব মকবুল আহমদ দাওয়াতে সাড়া দেন। সে দাওয়াত পেয়ে তিনি ইসলামী আন্দোলনে শরীক হন। জীবনের অনেক ধাপ অতিক্রম করে তিনি আজ বাংলাদেশের সর্ববহৎ ইসলামী সংগঠন জামায়াতে ইসলামীর আমীর। ইসলামের দাওয়াত দেয়ার কারণে তিনি কৃতজ্ঞ চিত্তে জনাব আব্দুস সাত্তারের জন্য দোয়া করেন। মাঝে মাঝে তার জন্য বইসহ বিভিন্ন উপহার পাঠান।

আল্লাহর সন্তুষ্টি জীবনের লক্ষ্য
জনাব মকবুল আহমাদের জীবনের উদ্দেশ্য হলো মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। এ লক্ষ্যে তিনি তার জীবনকে সাজানোর চেষ্টা করেছেন। বিভিন্ন আলোচনা, শিক্ষা বৈঠক, শিক্ষা শিবির, দায়িত্বশীল বৈঠক ও বিভিন্ন সভায় তিনি মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নিজের জীবন কেন্দ্রীভূত করার বিষয়কে সামনে রেখে বক্তব্য উপস্থাপন করতেন। তিনি স্কুল জীবনের ঘটনা উল্লেখ করে বলেনঃ

“স্কুল জীবনে আমার আর একটা সুন্দর ঘটনা মনে পড়ে। আমরা যখন ছাত্র ছিলাম প্রায়ই একটা রচনা আসত ‘তোমার জীবনের উদ্দেশ্য কি (Your aim in life)।’ কেউ কেউ লিখত ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, মন্ত্রী ইত্যাদি হবো। আমরাও লিখেছি, নাম্বার পেয়েছি, আবার শিক্ষকতার জীবনে ছাত্ররা লিখেছে আমরা নাম্বারও দিয়েছি। কিন্তু ইসলামী আন্দোলনে যোগ দেয়ার পর, ‘ক্বুল ইন্না ছালাতি, ওয়া নুসুকি, ওয়া মাহ-ইয়া ইয়া, ওয়া মামাতি, লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন’। এ আয়াতের তরজমা মর্মার্থ জানার পর জীবনের ধারণা, উদ্দেশ্য সব বদলিয়ে গেল। অনেক জায়গায় আলোচনায় এটা বলার চেষ্টা করি আমার জীবনের উদ্দেশ্য কখনো ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, মন্ত্রী প্রভাবশালী নেতা হওয়া উল্লেখ করার মত বিষয় হতে পারে না। বড় জোর জীবনে কি প্রফেশন Choice করবো তার জন্য এটা বলা যায়।

সত্যিকার মানুষের জীবনের লক্ষ্য তাই হওয়া উচিত যা আমাদের স্রষ্টা, প্রতিপালক মহান আল্লাহ তার কোরআনে আমাদের জীবনের উদ্দেশ্য লক্ষ্য কি হওয়া উচিত তা বলে দিয়েছেন।

‘ক্বুল ইন্না ছালাতি, ওয়া নুসুকি, ওয়া মাহ-ইয়া ইয়া, ওয়া মামাতি, লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন’ (সূরা আন’আম-১৬২)
অর্থাৎ ঃ আমার নামাজ, আমার কুরবানী, আমার জীবন, আমার মৃত্যু সবই মহান রাব্বুল আলামীন আল্লাহর জন্য।

যখনই যেখানে কথা বলেছি, তখনই এ Reference এনেছি সবাই অনুভব করেছে এটাইতো আসলে আমাদের জীবনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য হওয়া উচিত। আমি জীবনে যত কাজ করব সবই এ লক্ষ্যকে সামনে রেখেই করবো। যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন, অস্তিত্ব দান করেছেন, আমাকে প্রতিপালন করেছেন, সুখ শান্তি জীবনোপকরণ দিয়েছেন- তাকেই সবসময় কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ রেখে তার আদেশ নিষেধ মেনে চলার মধ্যেই আমাদের সকল কল্যাণ নিহিত।

বর্তমানে আমরা যা দেখছি, যত জুলুম-নির্যাতন, অন্যায় অবিচার, মানুষের অবর্ণনীয় দুঃখ কষ্ট, মানুষ নিজ প্রতিপালককে না জানা, না মানা, তার নির্দেশিত পথে না চলার কারণেই হচ্ছে। দুর্ভাগ্য এ কারণেই এ অধপতন হচ্ছে তাও জানে না। লেখাপড়ায় টেকনোলজি জানা, জীবনের সুখ-সুবিধা বেশী পাওয়ার পদ্ধতিই প্রধান। কিন্তু তার স্রষ্টাকে জানার কোন চেষ্টা নেই।

সাংগঠনিক জীবন
সরিষাদী স্কুলে শিক্ষকতাকালে তিনি ইসলামী আন্দোলনে সক্রিয় হন। স্কুলের প্রধান শিক্ষক এটা পছন্দ করতেন না। এ সময় জামায়াত সাংগঠনিক প্রয়োজনে তাকে মহকুমা শহর ফেনীতে যাতে তিনি চলে যান সে বিষয় উদ্বুদ্ধ করে। ফেনী সেন্ট্রাল হাইস্কুলে শিক্ষকতার কাজ নিয়ে তিনি শহরে স্থানান্তরীত হন। এভাবে তার নতুন জীবন শুরু হয়।
ফেনীতে ব্যাপক দাওয়াতী ও সাংগঠনিক কাজের সুযোগ সৃষ্টি করে কাজকে তৃণমূলে নেয়ার চেষ্টায় শরীক হন তিনি। ঐ সময় আল্লাহর মেহেরবানীতে কাজ দ্রুত গতিতে বাড়তে থাকে।

তিনি তার সাংগঠনিক জীবনে ছোট ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রামের ইউনিট, থানা, মহকুমা ও শহর ইউনিটের দায়িত্ব পালন করেন। পরে জেলা, বিভাগ, কেন্দ্রে সাংগঠনিক সম্পাদক, সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল, নায়েবে আমীরের দায়িত্ব পালন করেন। সাংগঠনিক জীবনে মহান আল্লাহর মেহেরবানীতে অধ্যাপক গোলাম আযম, মরহুম আব্বাস আলী খান, মাওলানা একেএম ইউসুফ, মাওলানা আব্দুর রহীম, প্রফেসর ওসমান রমজ, জনাব আবদুল খালেক (আখাউড়া) মাওলানা আবদুল জাব্বার (কিশোরগঞ্জ), সাবেক এমপি জনাব মাস্টার সফিকুল্লাহ, অধ্যাপক মাওলানা সাইয়েদ মুহাম্মদ আলীর মত প্রাজ্ঞ, জ্ঞানী-গুণী লোকদের সাহচার্য লাভ করার সৌভাগ্য অর্জন করেন।

তিনি চট্টগ্রাম বিভাগে কাজ করার সুযোগ পান। সে সময় ট্রেনে, বাসে বেশ ভীড় হতো তাই বাসের ছাদের উপরে বসেও সিলেট, শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ সফর করেন।

ফেনী মহকুমায় দায়িত্ব পালনের সময় কোন কোন দিন সকালে পান্তা ভাত খেয়ে দাওয়াতী বই ব্যাগে নিয়ে ফেনী থেকে সোনাগাজী ১৪/১৫ মাইল কর্দমাক্ত রাস্তা পায়ে হেটে সফর করেন। দীর্ঘ পথ হেটে ক্লান্ত হয়ে পড়ায় রেস্ট নিয়ে পরদিন সাংগঠনিক কাজ শুরু করতেন। সফরে ২/১ দিন কাটিয়ে আবার ফেনী শহরে ফিরে আসতেন। তখন ফেনী সোনাগাজী রোড আকাবাকা ছিল এবং পাকা না হওয়ায় রাস্তায় খুব কাদা হতো। চলাচল খুবই কষ্টকর ছিল। সকল কষ্ট হজম করে আল্লাহর দ্বীনের কাজ করতেন তিনি এবং এখনও করে যাচ্ছেন।

১৯৭০ সালের নির্বাচন ও জনাব মকবুল আহমদ
১৯৭০-এ নির্বাচনে জানব মকবুল আহমদকে প্রাদেশিক পরিষদের এম.পি.এ (Member of the Provincial Assembly) প্রার্থী করা হয়। তিনি স্কুলে শিক্ষকতা ইস্তেফা দিয়ে নির্বাচনী কাজে নিয়োজিত হন।
সে সময় প্রাদেশিক পরিষদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন ফাজিলপুরের একজন Advocate। জাতীয় পরিষদের জামায়াত প্রার্থী ছিলেন বিচারপতি একেএম বাকের সাহেব। (Justice A.K.M Baqer) আওয়ামী লীগের ছিলেন জনাব খাজা আহমদ। নির্বাচন খুব জমজমাট হয়। ২/১ বার বিরোধীদের হামলার শিকার হতে হয়েছে। নির্বাচনে ব্যাপক জালিয়াতি ও কেন্দ্র দখল করে আওয়ামী লীগ বিজয় ছিনিয়ে নেয়। কোন কোন ক্ষেত্রে জামায়াতের Agent-কে কেন্দ্রে ঢুকতেও দেয়া হয়নি। প্রতিবাদ করা সত্ত্বেও প্রশাসন কোন প্রতিকার করেনি।

বাংলাদেশ আমলে সংসদ নির্বাচনের সময় একটি ঘটনা বেশ উল্লেখযোগ্য। জামায়াতের লোকেরা বিধ্বস্ত, হতাশ, আওয়ামী লীগের জুলুম, অত্যাচার ও নির্যাতনে। একবার জনাব মকবুল আহমাদের সাথে নির্বাচনে জয়নাল হাজারীর সাথে Contest হয়।
নমিনেশন Submit এর দিন D.C. অফিসে হাজারীর সঙ্গে তার দেখা হয়। জনাব হাজারী হাসি মুখে হ্যান্ডশেক করে বললেন, মকবুল সাহেব আপনি একজন নীতিবান, ভাল লোক, আপনার সাথে নির্বাচনী প্রতিযোগিতা হবে সত্যি আমি খুব খুশী। উত্তরে জনাব মকবুল আহমাদ বললেন, ‘দোয়া করবেন’।

নির্বাচনে হাজারী বাহিনী প্রায় সব কেন্দ্র দখল করে ব্যাপক জালিয়াতি করে ভোট ছিনতাই করেছে। এ অবস্থা দেখে জামায়াতের কয়েকজন কর্মী বলে ‘হাজারী তো সব কেন্দ্র দখল করে নিয়ে যাচ্ছে’। অলাতলী বাজার (ফেনী থানার রাজাপুর ইউনিয়নের একটি ভোট কেন্দ্র) জামায়াতের প্রভাব একটু বেশী। জামায়াতের লোকেরা সকাল সকাল ভোট দিয়ে দিয়েছে তখন কেন্দ্র একেবারে খালি। কর্মীরা বলল আমরা চিন্তা করেছি দরজা বন্ধ করে সীল মারব। জনাব মকবুল আহমাদ এটা শোনার পর বলেন, ‘এটা করা যাবে না। যদি তোমরা আমাকে এ ধরনের জাল ভোট দিয়ে এম.পি বানাও তবে আমি তো আসল এম.পি হবো না, হবো নকল এম.পি। তদুপরি তোমরা আমার কাছে ন্যায় অন্যায় অনেক দাবী নিয়ে আসবে। তখন আমি বলব এটা তো অন্যায় এটা তোমাদের চাহিদানুযায়ী দেয়া যাবে না। তখন তোমরা আমার মুখের উপর বলবে, সেদিন দরজা বন্ধ করে সীল মেরে এম.পি বানালাম সেটা কোন ধরনের ন্যায় ছিল? আজ আমাদের কাজের সময় আপনি ন্যায় অন্যায়ের প্রশ্ন উঠাচ্ছেন। তখন জবাব দেয়ার কিছু থাকবে না। এ কথা শুনে কর্মীরা চুপ হয়ে গেল।

আমাদের ধৈর্য ধরতে হবে। জনগণের সত্যিকার সমর্থন নিয়েই আমাদেরকে আসতে হবে। একজন কর্মী বলে উঠল (সে অবশ্য আমার ছাত্রও) স্যার আপনি যে সব কথা বলেন তাতে একশ বছরেও এম.পি হতে পারবেন না।’
জনাব মকবুল আহমাদ বলেন, ‘এম.পি হলাম না তাতে কি হলো, আমরা যদি নির্বাচিত হই অনেক কাজ দায়-দায়িত্ব। নির্বাচিত না হলে আবার জনগণকে এ অন্যায় জালিয়াতির নির্বাচনের বিরুদ্ধে বলতে পারব। আমরা মানুষকে ন্যায়ের পথে কার্যকর শক্তি হিসেবে সংগ্রামী রূপে তৈরী করতে পারব। এ পন্থায় যদি ৫০/১০০ বছর লাগে তবুও ভাল। আমরা মানুষের মনে ন্যায় অন্যায় পার্থক্য করার অনুভূতি সৃষ্টি করতে চাই। এটাই আমাদের সফলতা। এম.পি হওয়া না হওয়াই সফলতা, ব্যর্থতা নয়।’
জনাব মকবুল আহমাদ মনে করেন, সমাজ পরিবর্তনের জন্য একদল সৎ ও যোগ্য লোকের প্রয়োজন। ধৈর্যের সাথে সে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। প্রচলিত রাজনৈতিক স্রোতে গা ভাসিয়ে ধৈর্যচ্যুত হয়ে ইসলামী আন্দোলনের মূল পথ থেকে বিচ্যুত হওয়া যাবে না।

১৯৭১ সালে জনাব মকবুল আহমাদের অবস্থান
১৯৭০ সালে প্রথম সাধারণ নির্বাচনের ফলাফল থেকে প্রমাণিত হলো যে, কোন একটি রাজনৈতিক দলই সমগ্র পাকিস্তানের জনগণের সমর্থন লাভ করবে না। আওয়ামী লীগ শুধু পূর্ব পাকিস্তানে জনপ্রিয়, পশ্চিম পাকিস্তানে রাওয়াল পিন্ডি ছাড়া আর কোথাও আওয়ামী লীগ কোন প্রার্থী দাড় করাতে সক্ষম হয়নি। গোটা পাকিস্তানের ৩০০ আসন বিশিষ্ট গণপরিষদের দেশের এ অংশে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে ১৬০টি আসনে আওয়ামী লীগ বিজয় লাভ করে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। পূর্ব পাকিস্তানের জাতীয় সংসদের ১৬২টি আসনের মধ্যে ১৬০টি আসন আওয়ামী লীগ দখল করে। একটি আসনে জনাব নূরুল আমীন ও আরেকটিতে পার্বত্য চট্টগ্রামে রাজা ত্রিদিব রায় জয় লাভ করেন।

ইয়াহইয়া খান শেখ মুজিবকে পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রী বলে ঘোষণা করেন। এ সময় ভুট্টোর ভূমিকা দেশে এক সংকট সৃষ্টি করে। সংকট থেকে উত্তরণের জন্য জামায়াতের পক্ষ থেকে অধ্যাপক গোলাম আযম ভুট্টোর বিরুদ্ধে বিবৃতি দিতে থাকেন এবং শেখ মুজিবের হাতে ক্ষমতা তুলে দেবার দাবী জানাতে থাকেন। অধ্যাপক গোলাম আযমের ঐ বিবৃতিসমূহ তদানীন্তন সময়ের জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এ দাবী মেনে নিয়ে শেখ মুজিবের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করলে রাজনৈতিক সংকটের অবসান ঘটতো। কিন্তু তা না করে ক্ষমতা হস্তান্তরে গড়িমসি করা হয়।

ইয়াহইয়া খান ’৭১-এর ৩ মার্চ ঢাকায় গণপরিষদের প্রথম অধিবেশন আহ্বান করেন। ভুট্টোর বিরোধীতার কারণে ৩ মার্চের অধিবেশন মূলতবীর ঘোষণা দেন ইয়াহইয়া।
১ মার্চ রেডিওতে প্রচারের সাথে সাথে বিক্ষুব্ধ জনতা মাঠে নেমে যায়। ফলে ১৯৭১ সালের ১ মার্চ থেকে পূর্ব পাকিস্তান অচল হয়ে পড়ে। এ সংকটের ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর অপারেশন শুরু হয়। সারাদেশে সেনাবাহিনীর ক্র্যাকডাউন চলতে থাকে।

১৯৭১ সালের এ সংকটময় মুহূর্তে জনাব মকবুল আহমাদ ফেনীতে, বৃহত্তর নোয়াখালীতে সংগঠনের বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন। ৭১ সালের ২৬ মার্চের পরই পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ লাভ করে। ঐ সময় তিনি নিজ বাড়িতে ছিলেন। তিনি এলাকার লোকজনকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেন। একদিন আওয়ামী লীগের লোকেরা স্থানীয় পূর্ব চন্দ্রপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তুজু মিয়ার (আসল নাম সামছুল হক, মুসলিম লীগের লোক ছিলেন) বাড়িতে হামলা চালায়। অভিযোগ তার বাড়িতে গোপন রেডিও আছে, যা পাকিস্তানী খবর দেয়। হামলার পরে দেখা গেল সে বাড়িতে এরকম কিছুই নেই। তুজু মিয়ার কোন ছেলে ছিল না। ২/৩টি মেয়ে ছিল। তারা ভয়ে জড়সড় হয়ে যায়। মিথ্যার উপর ভিত্তি করে এ ধরনের বহু হামলা আওয়ামী লীগ ঘটিয়েছে।

অনেক আলেম, ওলামা ও মুসলিম লীগ নেতাকে বেশ অপমান ও অপদস্থ করা হয়েছে। সে সময় মার্চ মাসে এরকম অনেক হামলা ও লুটপাট হয়েছে।

ফেনীতে দুষ্কৃতিকারীরা বেশ লুটপাট, চুরি, ডাকাতি করেছে। জামায়াতের তখন বেশী লোকজন ছিল না। সংগঠনও ছিল খুব দুর্বল। সারাদেশে মাত্র একজন মাত্র এম.পি.এ ছিলেন। বগুড়ার মাওলানা আব্দুর রহমান ফকির। ইউনিয়ন চেয়ারম্যানও ছিলেন ২/১ জন।
১৯৭১ সালে জনাব মকবুল আহমাদ নিজ এলাকার বিপদগ্রস্ত লোকজনকে নানাভাবে সহযোগিতা করেন। কোন ধরনের অনৈতিক, বেআইনী ও মানুষের জন্য অকল্যাণকর কাজে তিনি জড়িত হননি। তার এলাকার কোন লোক এ কথা বলতে পারবেনা যে, জনাব মকবুল আহমাদ কাউকে একটি কটু কথা বলেছেন। তার এলাকায় সর্বস্তরের সচেতন ও বিবেকবান জনগণ এ বিষয়ে স্বাক্ষী।

দক্ষ সংগঠক হিসেবে জনাব মকবুল আহমাদ
জনাব মকবুল আহমাদ সংগঠনের ভিতরে ও বাইরে অর্থাৎ সর্বমহলে একজন পরিচ্ছন্ন মানুষ হিসেবে পরিচিত। সারা জীবন তিনি সাংগঠনিক কর্মকান্ডে ব্যস্ত ছিলেন। ইসলামী আন্দোলনের দাওয়াতী তৎপরতা বিস্তৃত করার লক্ষ্যে তিনি ব্যক্তিগত যোগাযোগের পাশাপাশি বই বিতরণে অভ্যস্ত। জনশক্তির মান উন্নয়ন, নেতৃত্ব তৈরী ও সাংগঠনিক আভ্যন্তরীণ কর্মকা- মজবুতের জন্য তিনি ইসলামের সুমহান আদর্শে মানুষকে উদ্ভুদ্ধ করার লক্ষ্যে সদা তৎপর ছিলেন।

রাজনৈতিক আন্দোলন
জনাব মকবুল আহমাদ বাংলাদেশকে একটি কল্যাণমূলক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে কার্যকর ভূমিকা পালন করেন। বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তিনি বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৮২ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন, ১৯৯১-১৯৯৬ পর্যন্ত কেয়ারটেকার সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন, ১৯৯৬-২০০১ সাল পর্যন্ত আওয়ামী দুঃশাসন থেকে দেশ ও জাতিকে উদ্ধারের জন্য জনশক্তিকে মাঠে ময়দানে সুসংগঠিত করেন। বিভিন্ন সভা-সমাবেশে বক্তব্য রাখেন। ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের লক্ষ্যে চারদলীয় জোটের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের বৈঠকে যোগদান করেন। তিনি ঢাকা, চট্টগ্রাম, বগুড়া, রাজশাহী, চাঁপাই নবাবগঞ্জ ও দিনাজপুরের মহাসমাবেশে বেশ গঠনমূলক বক্তব্য রাখেন।

সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করলে তিনি গণতন্ত্রে উত্তরণের লক্ষ্যে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন। ২০০৯ সালে সাজানো নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে দেশে ভয়াবহ রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি করে। এ সংকট থেকে জাতিকে উদ্ধার করার জন্য তিনি বিশ দলীয় জোটের বিভিন্ন সমাবেশে যোগ দেন। https://goo.gl/lTOS16

সামাজিক কার্যক্রম
জনাব মকবুল আহমাদ বেশীর ভাগ সময়ই সাংগঠনিক কাজে জড়িত ছিলেন। তিনি সংগঠনের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন। তার প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত বিভিন্ন শিক্ষা ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান থেকে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে জনগণের সেবায় নিয়োজিত রয়েছে। প্রতি বছর শতাধিক গরীব প্রতিভাবান ছাত্রদেরকে এসব প্রতিষ্ঠান থেকে এককালীন বৃত্তি প্রদান করা হয়।

বিদেশ ভ্রমণ ও হজ্জ পালনের অনুভূতি
জনাব মকবুল আহমাদ রাবেতার আমন্ত্রণে আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগদানের উদ্দেশ্যে সৌদী আরবের রিয়াদ সফর করেন। রাবেতা আয়োজিত এ সম্মেলনে তিনি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রতিনিধিত্ব করেন। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত বিভিন্ন ইসলামী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, লেখক, গবেষক, শিক্ষাবিদ, চিন্তাবিদ ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনের সমাদৃত ব্যক্তিবর্গও এ সকল সম্মেলনে যোগদান করেন।

প্রবাসী সংগঠনের আমন্ত্রণে সাংগঠনিক সফরে তিনি জাপান ও মালয়েশিয়া সফর করেন। জাপান সফর শেষে তিনি সফরের অভিজ্ঞতার আলোকে রচনা করেন- ‘জাপান সফর-দেখার অনেক শিখার অনেক’। তার রচিত এ গ্রন্থটি সুখপাঠ্য বই হিসেবে সমাদৃত। তিনি সৌদী আরব সরকারের রাবেতা আলমে আল ইসলামীর মেহমান হিসাবে প্রথম হজ্জ্ব পালন করেন। এরপর ২০০৩ সালে আবার হজ্জ্ব পালন করেন। জনাব মকবুল আহমাদ হজ্জ্বের অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, ‘খানায়ে কাবা দর্শন সে এক অকল্পনীয় অব্যক্ত অনুভূতি। সারা দুনিয়ার মানুষ, খোদাপ্রেমে সবকিছু ছেড়ে দুনিয়া ত্যাগী ফকিরের বেশে এক কাপড় পড়ে কাবা প্রদক্ষিণ আমার মনে বিরাট প্রভাব পড়েছে। সারা দুনিয়ার মুসলমানদের ঐক্যের জন্য মহান রাব্বুল আলামীন যে ব্যবস্থা করেছেন তার দ্বারা মুসলিম বিশ্বের ঐক্যের বিরাট বন্ধন উপলব্ধি করেছি।

হজ্জের শিক্ষা উপলব্ধি করা ও কাজে লাগানোর প্রচেষ্টা হিসাবেই ইসলামী আন্দোলন (ইকামাতে দ্বীনের) প্রেরণা অনেক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। সারা জীবন অন্য কোন কাজকে আর প্রাধান্য দেইনি বা দিতে পারিনি।

ভারপ্রাপ্ত আমীর হিসেবে দায়িত্ব পালন
২০১০ সালের ২৯ জুন জামায়াতে ইসলামীর আমীর শহীদ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, শহীদ আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী গ্রেফতার হলে জনাব মকবুল আহমাদ ভারপ্রাপ্ত আমীর হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। সুদীর্ঘ সাড়ে ছয় বছর তিনি এ দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় জামায়াতের উপর অবর্ণনীয় অত্যাচার অবিচার, বহু কর্মীকে গুম, খুন ও পঙ্গু করার অমানবিক সরকারী প্রচেষ্টা চলে। এ সময় তিনি ধৈর্যহারা হননি। আইনী সীমার মধ্যে চলার এবং সংগঠনকে খোদাভীতি ও নিয়ম শৃঙ্খলার মধ্যে রাখার সাধ্যমত চেষ্টা করেন।

জামায়াতের সংগঠনের শৃঙ্খলার কারণে হাজার হাজার (রুকন) সদস্য কর্মী ছবরের সাথে কাজ করায় সারা দেশের মানুষের মধ্যে একটি ইতিবাচক ধারণার সৃষ্টি হয়েছে। হাজার হাজার কর্মী কারাবরণ করে কারাভ্যন্তরে ইসলামের শিক্ষা অনুযায়ী নিজদেরকে গঠন করতে সক্ষম হয়। জেল থেকে মুক্তি লাভ করে তারা আরো ভালো মজবুত কর্মী ও সমাজ সচেতন হয়েছে।

সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও কর্মীবৃন্দ ত্যাগ কুরবানী ও আনুগত্যের মধ্যে যেভাবে কাজ করেছেন তাতে আমীরে জামায়াত হিসেবে তিনি আরো উদ্বুদ্ধ হন।


ভারপ্রাপ্ত আমীর হিসেবে সারা দেশের বড় বড় সমাবেশগুলোতে তিনি বক্তব্য রেখেছেন। তার বক্তব্যে কারও বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক ও উস্কানীমূলক বক্তব্য না দিয়ে তিনি দেশের সমস্যা উপলব্ধি করে সবাইকে নিয়ে সমস্যা সমাধানের জন্য আহ্বান জানান। তিনি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও সকল দলের অংশগ্রহণে নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য আন্দোলনে সোচ্চার হওয়ার লক্ষ্যে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান। তিনি রাজনীতির একটা স্বচ্ছ সাবলীল ধারা চালুর চেষ্টা করেন।

আমীরে জামায়াতসহ শীর্ষ ৫ নেতার ফাঁসি সম্পর্কে
জনাব মকবুল আহমাদ সরকারের জুলুম-নিপীড়নের মাঝেও সংগঠনকে যথার্থভাবে পরিচালনায় কার্যকর ভূমিকা পালন করেন। জামায়াত নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে দায়ের করা ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় তিনি রাজনৈতিক লড়াইয়ে নেতৃত্ব দেন। আইনগতভাবে মোকাবেলার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেন। অন্যায়ভাবে ফাঁসি দেয়ার পর তিনি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি দিয়ে সরকারের রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের প্রতিবাদ জানান। জনাব মকবুল আহমাদের নেতৃত্বে দেশে বিদেশে সরকারের জুলুম-নির্যাতন ও সাজানো বিচারের বিরুদ্ধে ব্যাপক জনমত গড়ে উঠে। জাতিসংঘ, ঐঁসধহ জরমযঃং ডধঃপয সবাই বিচারের জন্য ব্যবহৃত আইনকে একটি কালো আইন হিসেবে আখ্যায়িত করেন। জামায়াত নেতাদের ফাঁসি না দিতে জাতিসংঘ, বিভিন্ন রাষ্ট্র, মানবাধিকার সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান আহ্বান জানান। সরকার কারো কথায় কর্ণপাত করেনি। ফলে এ সরকারের বিরুদ্ধে সারা দুনিয়ায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। জনাব মকবুল আহমাদ মনে করেন, আদালতে আখেরাতে আমাদের নেতৃবৃন্দ নিশ্চিতভাবে ন্যায় বিচার পাবেন।

তিনি বলেন, মহামতি সক্রেটিস, ইতিহাস বিখ্যাত নেত্রী জোয়ান অবআর্ক কতজনকেই তো Judicial Killing করেছে। আদালত তখনও ছিল। কিন্তু ১০০ বছর পরে তাদেরকে জাতীয় হিরোর মর্যাদা দিয়ে ইতিহাস নতুনভাবে লেখা হয়েছে।
জনাব মকবুল আহমাদ বলেন, যে মানুষগুলো সারা জীবন চুরি, ডাকাতি, মানুষ খুন অথবা অন্য কোন অন্যায় করেনি তারা হঠাৎ ’৭১ এ খুনী হয়ে হাজার হাজার মানুষ হত্যা করল এটা কি করে সম্ভব? আবার জোট সরকারের আমলে ২ জন মন্ত্রী দুর্নীতিমুক্ত ও যোগ্য হিসেবে Far East Economic Review-এর মত পত্রিকায় স্বীকৃতি লাভ করেন।

আমীরে জামায়াত হিসেবে শপথ
জনাব মকবুল আহমাদ স্বাস্থ্যগত কারণে জামায়াতের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চেয়েছিলেন। কিন্তু জামায়াত নেতৃবৃন্দ তা গ্রহণ করেননি। সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা আমীর নির্বাচনের জন্য ৩ সদস্যের একটি প্যানেল নির্বাচিত করেন। সারা দেশের রুকনগণ সেই প্যানেল থেকে জনাব মকবুল আহমাদকে আমীর নির্বাচিত করেন। এ বছর ১৭ অক্টোবর তিনি আমীর হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। সেদিন তিনি তার দীর্ঘ বক্তব্যে জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানান। এর পরপরই শুরু হয় তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার। জনাব মকবুল আহমাদ বলেন, এ দায়িত্বে যদি সাধারণ লোককেও বসানো হয় তার বিরুদ্ধে এভাবে অভিযোগ আসবে, আসতেই থাকবে। এটা রাজনৈতিক বিদ্বেষ ও সংকীর্ণতার কারণে চলতেই থাকবে।

মিথ্যা অভিযোগ ও অপপ্রচার সম্পর্কে
আমীরে জামায়াত হিসেবে ১৭ অক্টোবর ২০১৬ শপথ নিয়ে তিনি জাতির উদ্দেশ্যে জাতীয় ঐক্য, সংহতি ও অগ্রগতিকে সামনে রেখে যে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য প্রদান করেন তা দেশে-বিদেশে সর্বমহলে ব্যাপকভাবে অভিনন্দিত হয় এবং দেশী-বিদেশী অনেক গণমাধ্যমে তার এ ঐতিহাসিক বক্তব্য অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে প্রচারিত হয়। কিন্তু অতীব দুঃখের বিষয় জনাব মকবুল আহমাদ আমীর হিসেবে শপথ গ্রহণ করার পর দু’একটি স্থানীয় পত্রিকা, অনলাইন ও জাতীয় পত্রিকায় জনাব মকবুল আহমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত খবর পরিবেশিত হতে থাকে। জামায়াতের পক্ষ থেকে এর তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানানো হয়। দেশের বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, কলামিষ্ট, লেখক, রাজনীতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিবর্গ ও সচেতন জনতা এ অপপ্রচারে বিস্মিত হন। আমীর হিসেবে শপথ নেয়ার পর তাকে ’৭১-এর ঘটনায় জড়িয়ে সংবাদ পরিবেশন সকলকে হতভম্ব করে। প্রকৃতপক্ষে আমীরে জামায়াত জনাব মকবুল আহমাদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগসমূহ সর্বৈব মিথ্যা। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ফেনীতে যেসব ঘটনা ঘটেছে তার সাথে জনাব মকবুল আহমাদের কোন সংশ্লিষ্টতা নেই।

ফেনী জেলার দাগনভূঞা থানার উত্তর লালপুরে ১০ জন হিন্দু ও একজন মুসলিম হত্যা এবং বাড়িঘর অগ্নিসংযোগের ঘটনার সাথে মকবুল আহমাদকে জড়িয়ে যে খবর দু’একটি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে তা অনুসন্ধান চালিয়ে দেখা গিয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের লোকেরা কেউ মকবুল আহমাদকে অভিযুক্ত করেনি। উত্তর লালপুরের হত্যাকা- ও অগ্নিসংযোগের জন্য জনৈক হিন্দু ভদ্রলোক জানিয়েছেন ১৯৭১ সালের এ হামলার জন্য দায়ী লাতু ও শাহাবুদ্দিন নামক ২ জন লোক। তারা ইতিমধ্যে মারা গিয়েছেন। তারা স্পষ্টতই উল্লেখ করেছেন মকবুল আহমাদ সাহেব এ ঘটনার সাথে কোন ভাবেই সম্পৃক্ত নন। আমরা তাকে দেখেনি। তার নাম শুনেছি। তিনি অত্যন্ত ভালো মানুষ বলে লোকমুখে শুনেছি। আরো শুনেছি তিনি মানুষের উপকার করেন। কারো ক্ষতি করেন না। ১৯৭১ সালে ঐ ভদ্রলোকের বয়স ছিল ১২/১৩ বছর। তিনি বললেন আজও সে ঘটনার কথা আমার মনে পড়ে। অনেকে পীস কমিটির সভাপতি হিসেবে তার নাম উল্লেখ করেন, যা সর্বৈব মিথ্যা। পীস কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন খাজা আহমদ এম.পি.এ তার বাড়ি ফেনীর বারাহীপুর গ্রামে। সেক্রেটারি ছিলেন জনৈক মকবুল আহমদ এডভোকেট। তার বাসা ছিল ফেনী জহিরিয়া মসজিদের নিকট, তার বাড়ি ছিল দাগনভূঞা থানার ছিলনীয়া এলাকায়। মকবুল আহমাদকে দায়ী করার এটাও একটা ভিত্তি। এ মকবুল আহমাদ এডভোকেট ছিলেন সেটা চাপিয়ে রেখে মিথ্যার বেসাতী করছেন কিছু লোক। শান্তি কমিটির সভাপতি সেক্রেটারি হওয়াতো দূরের কথা তিনি শান্তি কমিটির সাধারণ সদস্যও ছিলেন না। শুধু তাই নয়, রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস ইত্যাদি বাহিনীর সাথেও তিনি জড়িত ছিলেন না।

খুশিপুর গ্রামের আহসান উল্লাহকে হত্যার জন্য জনাব মকবুল আহমাদ নির্দেশ দিয়েছেন মর্মে যে সব খবর প্রচারিত হয়েছে তার মধ্যে সত্যের লেশমাত্র নেই। আহসান উল্লাহর স্ত্রী সালেহা বেগম এবং তার ভাই মুজিবুল হক মকবুল আহমাদকে অভিযুক্ত করে যেসব কথাবার্তা প্রচার করা হয়েছে তার নিন্দা জানিয়েছেন। তারা বলেছেন যে, আহসানউল্লাহ তার সাত মাস বয়সী ছেলের অসুস্থতার খবর পেয়ে তাকে দেখার জন্য বাড়ি এসেছিলেন এবং পরে তিনি বাড়ি থেকে ছিলনীয়া বাজারে যান এবং সেখান থেকে ফেরত আসেননি। তার লাশ কোথাও পাওয়া যায়নি। এর সাথে জনাব মকবুল আহমাদের কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। তারা মকবুল আহমাদ সম্পর্কে জানান, তার মত একজন ভালো মানুষের বিরুদ্ধে আমাদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করার প্রশ্নই আসে না। যারা তার বিরুদ্ধে কথা বলছেন তারা মিথ্যা কথা বলছেন।

১৯ নভেম্বর ২০১৬ শনিবার বাংলা ট্রিবিউন ও দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় “জামায়াত আমীর মকবুলের চিঠিতে একাত্তরে হত্যার প্রমাণ” শীর্ষক একটি মিথ্যা রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। রিপোর্টটিতে জামায়াতে ইসলামীর ফেনী মহকুমার প্যাড ব্যবহার করে মহকুমা আমীর হিসেবে জনাব মকবুল আহমাদ কর্তৃক রেডিও পাকিস্তান চট্টগ্রামে ভারপ্রাপ্ত ডিউটি অফিসার জনাব ফজলুল হককে স্বহস্তে ইংরেজীতে একটি চিঠি লেখেছেন বলে দেখানো হয়েছে। চিঠিতে ছাত্র ইউনিয়ন (মেনন গ্রুপ) এর নেতা মাওলানা ওয়েজউদ্দিনের চট্টগ্রাম যাবার তথ্য দিয়ে তাকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রে মুক্তিবাহিনীর প্রধান সহায়ক শক্তি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তার গতিবিধি সনাক্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করা হয়েছে ........ ইত্যাদি ইত্যাদি।

চিঠিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট এবং পরিকল্পিতভাবে ‘সৃজন’ করা হয়েছে। কতগুলো বিষয় সামনে আনলেই এ চিঠি মিথ্যা হওয়ার বিষয়ে ধারণা পেতে কারো কষ্ট হওয়ার কথা নয়ঃ
১.১৯৭১ সালে ফেনী মহকুমা জামায়াতের কোন আমীর ছিল না। এ ধরনের কোন পদও ছিল না। মহকুমার দায়িত্বশীলকে বলা হতো ‘নাজেম’। জনাব মকবুল আহমাদ নাজেমও ছিলেন না।
২.চিঠির শুরুতেই সালাম দেয়া হয়নি। জামায়াতের কোন নেতা বা দায়িত্বশীল কাউকে চিঠি লেখলে শুরুতেই ‘আস্সালামু আলাইকুম’ উল্লেখ করে থাকে। অথচ এ চিঠিতে তা উল্লেখ নেই। এটা চিঠি মিথ্যা হওয়ার অন্যতম প্রমাণ।
৩.জামায়াতের নেতার পক্ষ থেকে চিঠি চট্টগ্রামের কোন জামায়াত নেতার কাছে না লিখে লিখা হয়েছে চট্টগ্রামের রেডিও পাকিস্তানের ডিউটি অফিসারকে।
৪.চিঠিতে স্বাক্ষর দেয়া হয়েছে ‘মকবুল আহমাদ বি.এ’ লিখে। স্বাক্ষরের সময় কেউ বি.এ/এম.এ লিখে স্বাক্ষর দেয় তা কত বড় ডাহা মিথ্যা তা সহজেই অনুমান করা যায়।
৫.চিঠির লেখা মকবুল আহমাদের নয়, স্বক্ষরও তার নয়। জামায়াতের পক্ষ থেকে এ চিঠির কঠোর প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।
৬.চিঠিতে নামের যে বানান লেখা হয়েছে ঐ বানানের সাথে মকবুল আহমাদের নামের বানানের মিল নেই।
১৯৯১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মকবুল আহমাদ জামায়াত মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী প্রচারণায় নামলে আওয়ামী লীগ নেতা হাজারী এ চিঠি তৈরী করে জনাব মকবুল আহমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণা চালান। ঐ সময় জামায়াতের পক্ষ থেকে এর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয় এবং পত্রিকায় তা ছাপা হয় তখন তারা চুপসে যায়। মাঝখানে এ নিয়ে আর কোন আলোচনা নেই। জনাব মকবুল আহমাদ আমীর হওয়ার পর দীর্ঘ ২৫ বছর পর আবার এ চিঠির আগমন ঘটেছে। মূলত: মকবুল আহমাদকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্যই এ চিঠির আবির্ভাব। এমনকি তিনি ভারপ্রাপ্ত আমীরের দায়িত্ব পালনকালেও এ ধরনের কোন চিঠির আলামত প্রকাশ হয়নি।

জনাব মাওলানা ওয়েজউদ্দিনের স্ত্রী হোসনে আরা বেগম চৌধুরী ও কন্যা সৈয়দা ওয়াসিমা পারভীন এনী জীবিত আছেন। ওয়েজউদ্দিনের কন্যার নিকট অপপ্রচারকারীরা গিয়েছিল ওয়েজউদ্দিনের হত্যাকা-ের জন্য মকবুল আহমাদকে অভিযুক্ত করে অভিযোগ দায়েরের জন্য প্ররোচিত করতে। কন্যা ওয়াসিমা পারভীন তাদের কথায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, ‘আপনারা কারা? এতদিন কোথায় ছিলেন? ৪৫ বছরের মধ্যে আপনারা তো কোন খবর নিতে আসলেন না। আমার বাবার জায়গা-জমি বেদখল হয়ে গেল! একদিনও তো তা উদ্ধার করার জন্য আসলেন না। এখন কেন আসলেন?’
সৈয়দা ওয়াসিমা পারভীন মকবুল আহমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করতে রাজি হননি। তারা বলেছেন, আমরা একজন নির্দোষ মানুষকে দোষী বানাতে চাই না। এতে আমার বাবার আত্মা কষ্ট পাবে।

জনাব মকবুল আহমাদ ১৯৭১ সালে কিভাবে মানুষের কল্যাণ করেছেন তা শফিকুর রহমান চৌধুরী রচিত ‘মুক্তিযুদ্ধে ফেনী’ পুস্তকের ১৯৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয়েছে। দাগনভূঞার সিন্ধুরপুর বাজার থেকে পাক সেনাবাহিনী ৬ জনকে ধরে ফেনীতে নিয়ে যায়। বাজার থেকে ঐ সময়ের মূল্যমানের ২০/৩০ হাজার টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। জনাব মকবুল আহমাদ তাদের মুক্তির জন্য জোর প্রচেষ্টা চালান। এক পর্যায়ে ৬ জনের মধ্য থেকে ৫ জন মুক্তি লাভ করে।

জনাব মকবুল আহমাদ মানুষকে বিপদ থেকে উদ্ধারের জন্য যেখানে সদা তৎপর ছিলেন সেখানে তাকে হত্যা, অগ্নিসংযোগের সাথে জড়ানো ডাহা মিথ্যাচার ছাড়া আর কিছুই না।

সত্যকে মিথ্যা দিয়ে ঢেকে রাখা যাবে না
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মহাগ্রন্থ আল কোরআনে ঘোষণা করেছেন, “সত্য সমাগত, মিথ্যা অপসৃত, মিথ্যার পতন অবশ্যম্ভাবী”(সূরা বনী ইসরাইল-৮১)। মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে কখনো সত্যকে দাবিয়ে রাখা যাবে না। জনাব মকবুল আহমাদের বিরুদ্ধে যতই অপপ্রচার চালানো হউক না কেন ফেনীর সর্বস্তরের মানুষ সাক্ষী তিনি কোন ধরনের অনৈতিক, ধ্বংসাত্মক, হিংসাত্মক কর্মকান্ডের সাথে সম্পৃক্ত নন। অপপ্রচারকারীদের লক্ষ্য বাস্তবায়ন হবে না। জনতার প্রতিরোধের মুখে মিথ্যা ভেসে যাবে। সত্য বিজয়ী হবে। ইনশাআল্লাহ।