১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, বুধবার, ৯:২৪

দুর্নীতিগ্রস্ত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের মূলধন জোগান দেবে সরকার

৮ বছরে দেয়া হয়েছে ১৫ হাজার কোটি টাকা

দুর্নীতি ও অনিয়মে জর্জরিত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে আবারো মূলধন জোগান দিতে যাচ্ছে সরকার। চলতি অর্থবছরের বাজেটে ‘মূল পুনর্গঠনে বিনিয়োগ’ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে দুই হাজার কোটি টাকা। এই খাত থেকেই রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় ব্যাংককে অর্থ দেয়া হবে। ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি পরিস্থিতি নিয়ে আজ এক বিশেষ বৈঠক ডেকেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। সচিবালয়ে এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ ইউনুসুর রহমান। বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবীর, সোনালী, জনতা, রূপালী, বেসিক ব্যাংক, কৃষি ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের (রাকাব) ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। উল্লেখ্য, গত আট বছরে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের মূলধন দেয়া হয়েছে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে, গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সরকারি ব্যাংকে মূলধন ঘাটতি রয়েছে ১৫ হাজার ৯০৮ কোটি। সবচেয়ে বেশি মূলধন ঘাটতি রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের বৃহত্তম ব্যাংক সোনালী ব্যাংকের। এই ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি রয়েছে তিন হাজার ১৪০ কোটি টাকা। গত চার বছরে ব্যাংকটিতে সরকার তিন হাজার পাঁচ কোটি টাকা জোগান দিয়েছে। গত অর্থবছরেও দেয়া হয়েছে ৩০০ কোটি টাকা। এ ছাড়া চরম দুর্নীতি ও লুটপাটে নাজুক হয়ে পড়া বেসিক ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি রয়েছে দুই হাজার ৫২৩ কোটি টাকা। গত তিন বছরে সরকার ব্যাংকটিকে তিন হাজার ৪০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। জনতা ব্যাংকের ঘাটতি রয়েছে এক হাজার ২৭৩ কোটি টাকা। আর রূপালী ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ৬৯০ কোটি টাকা। সরকার মালিকানাধীন বিশেষায়িত খাতের কৃষি ব্যাংকের ঘাটতি সাত হাজার ৫৪০ কোটি এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের (রাকাব) ঘাটতি ৭৪২ কোটি। এই দুই ব্যাংকের জন্য সরকার জোগান দিয়েছে হাজার কোটি টাকা। সরকারি মালিকানাধীন বিশেষায়িত ও বাণিজ্যিক আট ব্যাংকের মধ্যে ছয় ব্যাংকেরই মূলধন ঘাটতি হয়েছে। এই ছয় ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ১৫ হাজার ৯০৮ কোটি টাকা।

সরকারি বাজেট ডকুমেন্ট ও অর্থ বিভাগ সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য দেখা যায়, ২০০৯-১০ অর্থবছরে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে পুনর্মূলধন খাতে এক হাজার কোটি টাকা দেয়া হয়েছিল। তার পরের অর্থবছরে দেয়া হয় এক হাজার ৫০ কোটি টাকা। একইভাবে ২০১১-১২ অর্থবছরে দেয়া হয় ৭০০ কোটি টাকা, ২০১২-১৩ অর্থবছর ৪২০ কোটি টাকা, ২০১৩-১৪ অর্থবছর পাঁচ হাজার ৬৮ কোটি টাকা। ২০১৪-১৫ অর্থবছর দুই হাজার ৬১৭ কোটি টাকা। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এক হাজার ৮০০ কোটি টাকা এবং ২০১৬-১৭ অর্থবছর দুই হাজার কোটি টাকা। আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছর এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে দুই হাজার কোটি টাকা।
অর্থবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বিগত চার অর্থবছরে শুধু সোনালী ও বেসিক ব্যাংককে পুনর্মূলধন খাতে দেয়া হয়েছে ছয় হাজার ৯৫ কোটি টাকা। ২০১৩-১৪ ও ২০১৪-১৫ অর্থবছরে সোনালী ব্যাংক এ খাত থেকে অর্থ পেয়েছে যথাক্রমে এক হাজার ৯৯৫ কোটি টাকা ও ৭১০ কোটি টাকা। ‘হালমার্ক’ কেলেঙ্কারির কারণে সোনালী ব্যাংকের খোয়া গেছে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা, যার একটি কানাকাড়িও আদায় করতে পারেনি রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের বৃহত্তম এই ব্যাংক।

একইভাবে চরম দুর্নীতিগ্রস্ত বেসিক ব্যাংককে ২০১৪-১৫ এবং ২০১৫-১৬ অর্থবছরে পুনর্মূলধন খাতে দেয়া হয়েছে যথাক্রমে এক হাজার ১৯০ কোটি ও ১২ শ’ কোটি টাকা। এই বেসিক ব্যাংকের মাধ্যমে অনেকটা লুটে নেয়া হয়েছে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা। এর সাথে সরকার ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। অথচ এই ব্যাংককেও বাঁচানোর জন্য সরকার জনগণের করের টাকা থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা প্রতি বছর বরাদ্দ দিয়ে যাচ্ছে।

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/293727