১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, মঙ্গলবার, ৯:৪৭

রাখাইন সফর শেষে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী

জীবনে কখনো এমন ধ্বংসযজ্ঞ দেখিনি

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য সফর করে ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ ও পুড়িয়ে দেওয়া শত শত রোহিঙ্গা গ্রামের চিহ্ন দেখেছেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন। গত রবিবার সকালে নেপিডোতে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চির সঙ্গে বৈঠকের পরপরই তিনি রাখাইন রাজ্য সফরে যান। ওই সফর শেষে এক টুইট বার্তায় তিনি লিখেছেন, ‘উত্তর রাখাইনে সফরের সময় যা দেখেছি, তাতে আমি খুবই মর্মাহত। শত শত গ্রাম পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়েছে। এ সংকট মোকাবেলায় যুক্তরাজ্য বড় দাতা হিসেবে আছে। রোহিঙ্গা সম্প্রদায়কে একটি ভালো ভবিষ্যৎ দিতে আমরা আমাদের প্রভাব কাজে লাগানো অব্যাহত রাখব।’
বিবিসির ইংরেজি সার্ভিসের অনলাইনে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বরিস জনসনকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের নেতা অং সান সু চি রোহিঙ্গা সংকটের ভয়াবহতা পুরোপুরি বোঝেন কি না, তা নিয়ে সন্দেহ আছে বরিস জনসনের। ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিবিসিকে বলেন, ‘আমরা যা দেখেছি, তা দেখার জন্য তিনি (সু চি) কখনো হেলিকপ্টারে উঠেছেন বলেও আমার মনে হয় না।’

মিয়ানমার রোহিঙ্গা সংকটকে অস্বীকার করছে কি না—বিবিসির এমন প্রশ্নের উত্তরে বরিস জনসন বলেছেন, নেপিডোতে মিয়ানমারের রাজনীতিকদের সঙ্গে আলোচনা ও সু চির বক্তব্য শোনার পর তাঁর মনে হয়েছে, যে ভয়ংকর ধ্বংসযজ্ঞ সংঘটিত হয়েছে, সে বিষয়ে তাঁদের ধারণা নেই।
বরিস জনসন বলেন, ‘আমার জীবনে কখনো এমন ঘটনা দেখিনি। শত শত গ্রাম পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এটি নিঃসন্দেহে ধ্বংসযজ্ঞ এবং আমি মনে করি, ওই লোকগুলোকে তাদের বাড়িঘরে ফিরিয়ে নিতে জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর সঙ্গে কাজ করার মতো কিছুটা হলেও নেতৃত্ব প্রয়োজন।’
বরিস জনসন বলেছেন, সু চির কাছে তিনি বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের ভয়ংকর পরিস্থিতি ও তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে যুক্তরাজ্যের গভীর উদ্বেগ তুলে ধরেছেন। তিনি মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর হামলার পূর্ণ ও স্বাধীন তদন্ত পরিচালনা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ীদের বিচারের আওতায় আনার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। এ ছাড়া তিনি রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের নির্ভয়ে ফেরার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি করা এবং তাদের মৌলিক অধিকারগুলোকে সম্মান জানানোর ওপর জোর দিয়েছেন।

এদিকে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী গতকাল সোমবার ব্যাংককে থাই পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রেয়াথ চান ও-চা এবং রাখাইন পরামর্শক কমিশন বিষয়ে পরামর্শক বোর্ডের সভাপতি ও সাবেক থাই উপপ্রধানমন্ত্রী সুরাকিয়ার্ত সত্যার্থীর সঙ্গে বৈঠকে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের উপায় নিয়ে আলোচনা করেছেন।
বরিস জনসন রোহিঙ্গা ইস্যুতে গত শুক্র ও শনিবার বাংলাদেশ সফর করেন। রাখাইন রাজ্যে জাতিগত নিধনযজ্ঞ ও গণহত্যার শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গার সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়িয়েছে। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) আগামী বর্ষা মৌসুমে তাদের মানবিক সংকট আরো তীব্র হওয়ার আশঙ্কা করছে।

 

http://www.kalerkantho.com/print-edition/last-page/2018/02/13/601519