১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, রবিবার, ১০:০২

লাগামহীন চালের দাম

রাজধানীর বাজারে মোটা চালের দাম অপরিবর্তিত থাকলেও মধ্যবিত্তের পছন্দের তালিকায় থাকা মিনিকেট বা সরু চালের দাম বেড়েছে। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে দেশের বিভিন্ন মিলে মিনিকেটের দাম কেজিতে এক থেকে দুই টাকা করে বেড়েছে বলে ঢাকার চাল বিক্রেতা জানিয়েছেন। অন্যদিকে বাজারেরা পিয়াজের দাম কমেছে অতি সামান্য। ভারত পিয়াজের ন্যূনতম রপ্তানিমূল্য নিয়ে শর্ত তুলে নেয়ার এক সপ্তাহ পরও যেরকম প্রভাব পড়ার কথা সেরকম প্রভাব পড়েনি বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা। রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত সপ্তাহে মিনিকেট চালের দাম বস্তাপ্রতি ১০০ টাকা বাড়িয়েছে শীর্ষস্থানীয় কয়েকটি মিলার।

একই সঙ্গে বাড়তি দামের প্রমাণ লুকাতে চালানের কপিতে অগ্রিম তারিখ দেখানোরও অভিযোগ রয়েছে এসব মিলারদের বিরুদ্ধে। চাল ব্যবসায়ীরা বলেন, মিল মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। তা না হলে দাম আরো বেড়ে যেতে পারে। বাজারে তিন হাজার টাকা থেকে ৩১০০ টাকায় বিভিন্ন মানের মিনিকেটের ৫০ কেজির বস্তা বিক্রি হচ্ছে। সে হিসাবে প্রতি কেজি মিনিকেট চালের দাম পড়ছে ৬০-৬২ টাকা। তবে পাড়া-মহল্লার দোকান থেকে চাল কিনতে হলে কারওয়ান বাজারে এই দামের থেকে আরো দুই-তিন টাকা বেশি লাগছে। তবে আমদানি করা মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে প্রতি বস্তা ২৬০০ থেকে ২৭০০ টাকায়।
সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবির তথ্যেও মিনিকেট চালের দাম বাড়তি দেখা গেছে। টিসিবির তালিকা অনুযায়ী, ভালো মানের মিনিকেট চালের দাম এক মাসে বেড়েছে ১.৫৪ শতাংশ। এক মাস আগে এই চালের কেজি ছিল ৬২-৬৮ টাকা। বর্তমানে এই চালের কেজি ৬৪-৬৮ টাকা। এছাড়া অন্য সব ধরনের চালের কেজি স্থিতিশীল রয়েছে।

এদিকে বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পিয়াজ আমদানিতে শর্ত তুলে নেয়া এবং ভারতের স্থানীয় বাজারে মূল্য কমায় প্রভাব পড়তে শুরু করেছে দেশের বাজারে। পাইকারি বাজারে কেজিতে ৫ টাকা কমেছে সব ধরনের পিয়াজের দাম। আর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি আমদানিকৃত পিয়াজ ৫০-৫৫ টাকা ও দেশি পিয়াজ ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে বর্তমানে পিয়াজের এ দরও তুলনামূলক বেশি। কারণ, সম্প্রতি ভারত সরকার পিয়াজের ন্যূনতম রপ্তানি মূল্য (এমইপি) প্রত্যাহার করেছে। গত মাসে রপ্তানি মূল্য টন প্রতি ৮৫০ ডলার থেকে কমিয়ে ৭০০ ডলার করা হয়। পরে ৩রা ফেব্রুয়ারি রপ্তানি মূল্যসীমা প্রত্যাহার করে ভারত। তারপরও পিয়াজের দাম সেভাবে কমেনি অথচ দেশের পিয়াজের বাজারে অস্থিরতার জন্য এতদিন ভারতের ন্যূনতম রপ্তানি মূল্য বেঁধে দেয়াকে দায়ী করছিলেন ব্যবসায়ীরা।
কাওরান বাজারের পিয়াজ বিক্রেতা রফিক বলেন, আগের তুলনায় ভারত থেকে পিয়াজের আমদানি বেড়েছে। এজন্য বাজারেও এখন পিয়াজের সরবরাহ ভালো। শিগগির পিয়াজের দাম আরো কমবে।
ভারতে এখন ২৫ রুপি থেকে ৩৫ রুপির মধ্যে প্রতিকেজি পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে বলে টাইমস অব ইন্ডিয়াসহ দেশটির অন্যান্য সংবাদমাধ্যমগুলোর খবরে বলা হচ্ছে। ফলে বাংলাদেশের বাজারেও আমদানি পিয়াজের দাম কমে আসবে বলে আশা করছিলেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।

পিয়াজ বিক্রেতা তারিক বলেন, বাজারে দেশীয় পিয়াজের সরবরাহ বেড়েছে। গত সপ্তাহের তুলনায় দামও কমেছে কেজিতে ৫ টাকা করে। ভারতীয় পিয়াজের দাম কমবে বলে শোনা গেলেও তেমনটি কমেনি। বিক্রেতা সুমন বলেন, কারওয়ান বাজারে দেশি পিয়াজ প্রতি কেজি ৪৪ টাকা থেকে ৪৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক্ষেত্রে সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে কমেছে ৫ টাকা। আমদানি পিয়াজের দামও কেজি প্রতি ৪৫ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে রয়েছে।
তবে সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবি বলছে, গত এক সপ্তাহে আমদানি পিয়াজের দাম কেজিতে ১০ টাকা কমেছে। আগে ৫৫ টাকা বিক্রি হলেও এখন ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে রাজধানীর অন্য বাজারে প্রতি কেজি ৫৫ টাকাতেই আমদানি পিয়াজ বিক্রি হতে দেখা গেছে।
বাজারে শাক-সবজি ও অন্যান্য তরকারির দাম গত সপ্তাহের মতোই অপরিবর্তিত রয়েছে। শিম ৪০ টাকা, বেগুন ৩০ টাকা, টমেটো ২০ থেকে ৩০ টাকায় প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে। ফুল কপি প্রতিটি ২০ থেকে ২৫ টাকা, বাঁধা কপি ২০ থেকে ২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কাওরান বাজারের সবজি ব্যবসায়ী হেলাল বলেন, বাজারে এখন সবজির প্রচুর সরবরাহ। মাঝে তীব্র শীতের পাশাপাশি কুয়াশা বাড়ায় ক্ষেতেই অনেক সবজি নষ্ট হয়ে যায়। যে কারণে সবজির দাম বেড়ে যায়। কিন্তু এখন সবজির সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে।

এদিকে স্থিতিশীল রয়েছে মাছ ও মাংসের দাম। গতকাল বাজারে প্রতিকেজি কাতল মাছ ২২০ থেকে ৩০০ টাকা, রুই ২০০ থেকে ২৫০ টাকা, পাঙ্গাস ১২০ টাকা, সিলভার কার্প ১৩০ টাকা, তেলাপিয়া ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা, শিং ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা ও চিংড়ি ৪৫০ থেকে ৭০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতিকেজি গরুর মাংস ৪৫০ থেকে ৪৮০ টাকা, খাসির মাংস ৭৫০ টাকা ও ব্রয়লার মুরগি কেজি ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা, পাকিস্তানি লাল মুরগি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

 

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=104497