১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, রবিবার, ৯:৫২

এসএসসির গণিতের প্রশ্নও পাওয়া গেল ফেসবুকে

সর্বাধিক বহিষ্কার ও অনুপস্থিতি

এসএসসির গণিতের প্রশ্নও পাওয়া গেল হোয়াটসঅ্যাপ ও ফেসবুকে। গণিতের প্রশ্নপত্র পরীক্ষা শুরুর দেড় ঘণ্টা আগে পাওয়া গেছে। পরীক্ষা শুরু হয় সকাল ১০টায়, আর প্রশ্নটি ফেসবুক গ্রুপে পাওয়া যায় সকাল ৮টা ৩৫ মিনিটে। হোয়াটসঅ্যাপের একটি গ্রুপে গণিতের ‘খ-চাঁপা’ সেটের প্রশ্নপত্রটি পাওয়া যায়। মুহূর্তে তা ভাইরাল হয় বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে এবং ইমো, হোয়াটঅ্যাপসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। তাতে দেখা গেছে গণিতের বহুনির্বাচনী ‘খ’ সেট ‘চাঁপা’ নামের প্রশ্নপত্রের উত্তরসহ ছবি। পরীক্ষা শেষে প্রশ্নপত্রের সাথে হুবহু মিলে গেছে হোয়াটসঅ্যাপ ও ফেসবুকে পাওয়া প্রশ্ন।

সকাল ৮টা ৫৯ মিনিটে হোয়াটসঅ্যাপের ‘ঝঝঈ ফ্রি প্রশ্নের দুকান’ নামে একটি গ্রুপে গণিতের বহুনির্বচনী অভীক্ষার ‘খ’ সেটের প্রশ্নপত্রটি প্রথম পাওয়া যায়। এর সাথে ছিল হাতেলেখা উত্তরপত্র। ফারহান আদনান নামে একটি আইডি থেকে এই প্রশ্নপত্রটি গ্রুপে দেয়া হয়। উত্তরপত্রও দেয়া হয় একই আইডি থেকে।
এ দিকে গণিতের পরীক্ষায় গতকাল সারা দেশে সর্বাধিক সংখ্যক পরীক্ষার্থী বহিষ্কার হয়েছে নকল ও অসদাচরণের অভিযোগে। এ দিন সাধারণ আট বোর্ড এবং মাদরাসার দাখিলেও গণিত বিষয়ের পরীক্ষা হয়েছে। এ দু’টি ধারায় ১৮২ জন পরীক্ষার্থী বহিষ্কৃৃত হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা বোর্ডে সর্বাধিক ৫৭ জন বহিষ্কার হয়েছে নকলের দায়ে।
প্রশ্নফাঁস নিয়ে গতকাল আন্তঃবোর্ড সমন্বয় কমিটি একাধিক দফায় বৈঠক করেছে। বৈঠক সম্পর্কে কমিটির আহ্বায়ক মো: শাহেদুল খবির চৌধুরী বলেন, সামগ্রিক বিষয় নিয়েই আমরা তৎপর রয়েছি। কারিগরি দিকগুলো আমাদের নিয়ন্ত্রণে না থাকায়, অন্য বিষয়গুলোতে এবং দায়িত্বপ্রাপ্তদের ব্যাপারে আরো কঠোরতা কিভাবে নিশ্চিত করা যায় সে প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
পরে রাতে নয়া দিগন্তকে তিনি বলেন, আমাদের বৈঠকটি ছিল প্রশ্ন সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানোর বিষয় নিয়ে। এখানে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগামী দুয়েক দিনের মধ্যে প্রশ্ন ছড়ানোর হোতাদের গ্রেফতার করা এবং তাদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে। আমরা আশাবাদী আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই ভালো সংবাদ পাওয়া যাবে। গতকাল সকালে পরীক্ষা কেন্দ্রের বাইরে অনেক পরীক্ষার্থীকে মোবাইল ফোনে প্রশ্নের সমাধান আত্মস্থ করতে দেখা গেছে বলে অনেকে নয়া দিগন্তকে জানান।
প্রশ্ন ফেসবুকে পাওয়ার বিষয়ে ঢাকা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক তপন কুমার সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি। এ ব্যাপারে উচ্চপর্যায়ের কমিটি যেহেতু কাজ করছে, এ পর্যায়ে কোনো মন্তব্য করা সঠিক হবে না।

এসএসসি পরীক্ষার শুরু থেকেই প্রতিটি পরীক্ষার প্রশ্নপত্রই বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাওয়া যাচ্ছে। পরীক্ষার তৃতীয় দিনে প্রশ্নফাঁসকারীকে ধরিয়ে দিলে পুরস্কার ঘোষণার পরও সে ধারা অব্যাহত রয়েছে। ফেসবুক পেজে এবং বিভিন্ন গ্রুপে চলছে কার আগে কে প্রশ্ন দিতে পারে, তার প্রতিযোগিতা। দিনরাত অসংখ্য আইডি থেকে বিজ্ঞাপন দেয়া হচ্ছে প্রশ্ন তুলে নেয়ার জন্য।
এ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত পরীক্ষার বাংলা দু’টি বিষয়, ইংরেজির দু’টি বিষয়, ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা এবং গতকালের গণিত পরীক্ষার প্রশ্ন ফেসবুক পেজে পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের আইডি প্রকাশ করার পরও কেন সেসব আইডির মালিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে যাচ্ছে তা-ই প্রশ্ন। রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোনো ব্যক্তি আপত্তিকর মন্তব্য করার বা আপত্তিকর ছবি বা কার্টুন পোস্ট করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তাকে আটক ও গ্রেফতার করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো। তা হলে ফেসবুক ও অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমে নিদিষ্ট আইডির মাধ্যমে প্রশ্নপত্র ছড়ানোর পর কেন তাদের আটক করা হচ্ছে না, সেটি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক অভিভাবক। তাদের অভিযোগ শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মধ্যে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে, অথবা পরীক্ষার সংশ্লিষ্টরাই চাইছেন না প্রশ্ন ছড়ানোর হোতারা আইনের আওতায় আসুক।

গণিতে অনুপস্থিত ১১ হাজার ৪৮৮ জন : বহিষ্কার ১৮২ জন, কারিগরি বোর্ডে ২৩ জন : কেন্দ্রীয় পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ সূত্রে জানা গেছে, গতকাল ঢাকা বোর্ডে ৫৭ জন, চট্টগ্রাম বোর্ডে ১১ জন, রাজশাহী বোর্ডে ছয়জন, বরিশাল বোর্ডে ১২ জন, সিলেট বোর্ডে একজন, দিনাজপুর বোর্ডে ১৩ জন, কুমিল্লা বোর্ডে ১৩ ও যশোর বোর্ডে চারজন পরীক্ষার্থীকে নকলের অভিযোগে বহিষ্কার করা হয়েছে। এ ছাড়া মাদরাসা বোর্ডের দাখিলে গতকাল গণিত বিষয়ে ৫৫ জন পরীক্ষার্থী বহিষ্কৃত হয়েছে একই অভিযোগে। কারিগরি বোর্ডে ২৩ জন বহিষ্কৃত হয়েছে। অপর দিকে গণিত পরীক্ষার দিনে গতকাল সব বোর্ডে অনুপস্থিত ছিল ১১ হাজার ৪৮৮ জন। এর মধ্যে ঢাকা বোর্ডে এক হাজার ৯৮৪ জন, মাদরাসা বোর্ডে তিন হাজার ৯৬২ জন এবং কারিগরিতে এক হাজার ৫৩৩ জন অনুপস্থিত ছিল।

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/292884