১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, শনিবার, ১০:২০

রাজনৈতিক সঙ্কটের প্রভাব বাজারে

সবজি-মুরগির সরবরাহ ব্যাহত, দামও বাড়তি

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মামলার রায়কে ঘিরে সৃষ্টি হওয়া রাজনৈতিক সঙ্কটের প্রভাব পড়েছে রাজধানীর কাঁচাবাজারেও। সরবরাহ ব্যাহত হওয়ায় দাম বেড়েছে বেশির ভাগ পণ্যের। বিশেষ করে মুরগি ও সবজিবাহী গাড়ি চলাচলে বিঘœ ঘটার অজুহাতে দাম বাড়িয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। সরবরাহ কিছুটা বাড়লেও কাক্সিক্ষত পর্যায়ে আসছে না পেঁয়াজের দাম। আর চালের দাম টানা আট মাস ধরেই অস্বাভাবিক বাড়তি।
গতকাল শুক্রবার রাজধানী ঢাকার কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, ফার্মের ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিপ্রতি ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে প্রায় সবসবজির দাম। বিশেষ করে লাউয়ের দাম বেড়েছে অস্বাভাবিক। নগরের বাজারগুলোতে লাউয়ের দাম অনেকটাই সাধারণের নাগালের বাইরে। মাঝারি আকারের একটি লাউয়ের দাম ব্যবসায়ীরা চাচ্ছেন ১০০ থেকে ১২০ টাকা।

রামপুরা বাজারের সবজির ক্রেতা ফাতেমা বেগম ক্ষোভের সঙ্গে জানান, লাউ এখন আর আমাদের মতো স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য না। একটা লাউয়ের দাম চায় ১০০ টাকার ওপরে। অথচ গত বছর এমন সময় এসব লাউ ৩০ থেকে ৪০ টাকা পিস বিক্রি হয়েছে। লাউয়ের যে দাম হয়েছে, এখন ওই দামে মুরগিই পাওয়া যায়। আপনিই বলেনÑ তাহলে মুরগি খাব না লাউ খাব।

লাউয়ের এমন দামের বিষয়ে ব্যবসায়ী ফারুক হোসেন বলেন, আড়ত থেকে আমাদের বেশি দামে কিনতে হচ্ছে, তাই বিক্রি করতে হচ্ছে বেশি দামে। আর দাম বেশি হলেও তো ক্রেতাদের সমস্যা নেই। মানুষের হাতে এখন অনেক টাকা! দাম যতই বাড়–ক ক্রেতার অভাব নেই। প্রতিদিন যে লাউ আনি তা ওই দিনই বিক্রি হয়ে যায়। একটি লাউও অবশিষ্ট থাকে না। তার দোকানে প্রতি পিস লাউ ১০০ থেকে ১২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে বলে জানান ফারুক।
বাজারে গতকাল প্রতি কেজি বেগুন বিক্রি হয় ৬০ থেকে ৭০ টাকা। কেজিতে ৪০ টাকা বেড়ে বরবটি বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। এ ছাড়া চিচিঙ্গা ৬০ থেকে ৭০ টাকা, প্রতি পিস বাঁধাকপি ৩০ থেকে ৪০ টাকা, ফুলকপি বড় ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, পেঁপের কেজি ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, শিম ৪০ থেকে ৬০ টাকা, টমেটো ৩০ থেকে ৪০ টাকা, কাঁচামরিচ ৮০ টাকা, গাজর ৪০ টাকা, শসা ৩০ থেকে ৫০ টাকা, করলা ৬ থেকে ৭৫ টাকা, মূলা ২০ থেকে ২৫ টাকা, আলু ২৫ থেকে ২৮ টাকায় বিক্রি করতে দেখা যায়।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, সরবরাহ কিছুটা বাড়লেও এখনো বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ। দেশী নতুন পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে। ভারত থেকে আমদানি করা বড় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৫০ থেকে ৫৫ টাকা দরে। এ ছাড়া আদা ১০০ থেকে ১২০ টাকা, মরিচ ১০০ থেকে ১২০ টাকা এবং রসুন ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

গত সপ্তাহে ব্রয়লার মারগি ১২০ থেকে ১২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও গতকাল ২০ থেকে ২৫ টাকা বাড়তি দরে বিক্রি করতে দেখা যায়। বাজারে গতকাল প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয় ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা। পাকিস্তানি লাল মুরগি কেজিতে ১০ টাকা বাড়িয়ে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা দরে বিক্রি করা হয়। গরুর গোশত ৪৮০ থেকে ৫০০ টাকা এবং খাসির গোশত ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকায় বিক্রি হয়।
বিভিন্ন পর্যায়ের ক্রেতাবিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত প্রায় আট মাস ধরে অস্থিতিশীল রয়েছে দেশের চালের বাজার। এক-দুই টাকা করে বাড়তে বাড়তে চালের দাম এখন প্রায় ক্রেতাদের নাগালের বাইরে। এরই মধ্যে একটা বড় মওসুম চলে গেলেও চালের বাজারে কোনো সুসংবাদের দেখা মেলেনি। ব্যবসায়ীদের মতে, দাম কমার জন্য ক্রেতাদের অপেক্ষা করতে হবে আগামী বোরো মওসুম পর্যন্ত। খুচরা বাজারে গতকাল প্রতি কেজি মোটা স্বর্ণা চাল বিক্রি হয় ৪৫ টাকা দরে। এ ছাড়া বিআর২৮ ৪৮ থেকে ৫৫ টাকা, মিনিকেট ৫৫ থেকে ৬২ টাকা, নাজিরশাইল ৬০ থেকে ৭০ টাকা, পাইজাম ৪৬ টাকা থেকে ৪৮ এবং পোলাওয়ের চাল ৯০ টাকা দরে বিক্রি করতে দেখা যায়।

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/292573