৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, শুক্রবার, ৯:৪৯

রাজনৈতিক উত্তাপ

অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে স্থবিরতা

গ্রাহকশূন্য ব্যাংক লেনদেনে ভাটা * পণ্যবাহী পরিবহন শহরে প্রবেশ কমেছে * চকবাজার ও মৌলভীবাজার ছিল অঘোষিত বন্ধ

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রায়কে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার রাজধানীর অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে পড়ে। যার সরাসরি নেতিবাচক প্রভাব পড়ে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোয়। গ্রাহকশূন্যতায় সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস অধিকাংশ ব্যাংকের নগদ লেনদেন ৮০ শতাংশের নিচে নেমে যায়। ঢাকার বাইরে থেকে পণ্যবাহী পরিবহন পাইকারি বাজারগুলোয় আসার সংখ্যা অস্বাভাবিক হারে কমে যায়। সবচেয়ে বড় পাইকারি বাণিজ্য কেন্দ্র পুরান ঢাকার চকবাজার ও মৌলভীবাজার কারাগারকেন্দ্রিক হওয়ায় অঘোষিতভাবে বুধবার রাত থেকেই বন্ধ হয়ে যায় এখানকার ব্যবসা-বাণিজ্য। শপিংমলগুলো খোলা থাকলেও প্রায় ক্রেতাশূন্য ছিল। হোটেল-রেস্তোরাঁ ছিল প্রায় ফাঁকা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।
রাজধানীর মতিঝিল ব্যাংকপাড়া ঘুরে দেখা গেছে, বেশিরভাগ ব্যাংকের শাখা ফাঁকা রয়েছে। ব্যাংকগুলোয় কর্মকর্তা-কর্মচারীর উপস্থিতি থাকলেও অধিকাংশ ব্যাংকের শাখা গ্রাহকশূন্য ছিল। বিশেষ প্রয়োজনে দুই-একজন গ্রাহক এলেও তা অন্যান্য দিনের তুলনায় অনেক কম। আর গ্রাহক কম থাকায় অলস সময় পর করেছেন কর্মকর্তারা।

মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকের মূল ফটকের সামনে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা অবস্থান নেন। এছাড়া আশপাশের এলাকায় বিপুলসংখক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের অবস্থান লক্ষ করা গেছে।
রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংকের এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, স্বাভাবিক দিনের তুলনায় বৃহস্পতিবার প্রায় ৮০ শতাংশ লেনদেন কম হয়েছে। গ্রাহক নেই বললেই চলে। সে কারণে কর্মকর্তারা অলস সময় পার করেছেন। রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, বৃহস্পতিবার লেনদেন অর্ধেকে নেমে এসেছে। তবে এটি সাময়িক বলে মনে করেন তিনি।
মতিঝিল ডাচ্-বাংলা ব্যাংকে বৈদেশিক বাণিজ্যিক শাখায় গিয়েও অনেটা ফাঁকা দেখা গেছে। কর্মকর্তারা অলস সময় পার করছেন। ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, ব্যাংকে গ্রাহক অনেক কম। কিছু ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের গ্রাহক এসেছেন। সাধারণ গ্রাহক নেই বললেই চলে। রাসেল নামে এক গ্রাহক বলেন, অন্যদিনে এখানে (মতিঝিল) টাকা তুলতে ও জমা দিতে এলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় লাগত। আজ (বৃহস্পতিবার) পুরোপুরি ফাঁকা। এসে মিনিটের মধ্যেই কাজ শেষ করলাম।

কারওয়ান বাজার ব্যবসায়ীরা জানান, পণ্যবাহী গাড়ি আশানরূপ প্রবেশ করেনি বিধায় প্রতি কেজি চালের মূল্য এক টাকা বেড়েছে। এ তথ্য জানিয়ে ওই বাজারের আল্লাহর দান রাইস এজেন্সির মালিক সিদ্দিকুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, পাইকারি বাজারে অনেক দোকান বন্ধ ছিল। প্রতিদিনের মতো শ্রমিকও কম এসেছে। ঢাকার বাইরে থেকে অন্য দিনের তুলনায় অনেক কম পণ্য এই বাজারে এসেছে। ফলে এক ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে মূল্যের ওপর। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঝুঁকি নিয়ে আসা ব্যবসায়ীদের অনেক বেশি গুনতে হয়েছে ট্রাক ভাড়া। যে কারণে পণ্যের দামও বেড়েছে।
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সিনিয়র সহসভাপতি রেজাউল করিম মন্টু যুগান্তরকে বলেন, গাড়ি ও লোকজন চলাচল কম ছিল। যে কারণে মার্কেট দোকানগুলোয় ক্রেতা ছিল না। রাজনৈতিক সংকটের কারণে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেন, বুধবার থেকেই মার্কেটগুলোয় ক্রেতা কমছে। তবে কাল (আজ) পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হবে বলে আশা করছি।

এদিকে পুরান ঢাকার চকবাজার ও মৌলভীবাজারে বুধবার রাত থেকে রায়ের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। আর বৃহস্পতিবার প্রায় দোকানপাট বন্ধ রাখা হয়। ঢাকার বাইরে থেকে আসা ক্রেতারা সেখানে আসেনি। কিছু দোকান খোলা রাখা হলেও অলস সময় কেটেছে তাদের। ফলে বৃহত্তম এই পণ্যের বাজারে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। ওই বাজারের পাদুকা ব্যবসায়ী নেতা মো. কুদ্দুস জানান, বুধবার রাত থেকে চকবাজার বন্ধ। বৃহস্পতিবার কোনো ব্যবসা-বাণিজ্য হয়নি। মূল কারণ হচ্ছে কারগার, যেখানে খালেদা জিয়াকে রাখা হয়েছে। এ বাজার ঘেঁষে কারগার থাকায় এক ধরনের আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। ফলে ব্যবসায়ীরা ঝুঁকি নিয়ে কোনো দোকানপাট খুলেনি।
এদিকে সারা দিন খোলা রাখার পরও ক্রেতা আসেনি বলে জানালেন মিরপুর ১০ নম্বর জাহানারা কেন্টিনের মালিক মালিক বাবু। তিনি যুগান্তরকে বলেন, অন্য দিনের তুলনায় বৃহস্পতিবার কোনো ক্রেতা ছিল না ক্যান্টিনে। অনেকে আতঙ্কে আসেনি। শহরের অন্যান্য হোটেল-রেস্তোরাঁর অবস্থাও একই রকম কেটেছে। ভোজনবিলাসীরা আতঙ্ক নিয়ে ঘর থেকে বের হয়নি। ফলে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে হোটেল ও রেস্টুরেন্ট বাণিজ্যে।
এদিকে রায় ঘিরে অজানা আতঙ্কে শহরে পরিবহন কম নেমেছে। এর প্রভাব পড়ে পরিবহন বাণিজ্যের ওপর। বিভিন্ন রুটে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু পরিবহন চলাচল করেছে। কিন্তু অধিকাংশ পরিবহন রাজপথে নামানো হয়নি। পাশাপাশি অনেক পণ্যবাহী পরিবহন গ্রাম থেকে শহরে এবং শহর থেকে গ্রামে চলাচল সীমিত করা হয়। এ খাতে প্রকৃত লেনদেন কমেছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

 

https://www.jugantor.com/todays-paper/news/15687