৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, শুক্রবার, ৯:৪৮

দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন ঢাকা

গতকাল সারা দেশ থেকে ঢাকা ছিল কার্যত বিচ্ছিন্ন। সব কয়টি প্রবেশপথে ছিল কঠোর বেষ্টনী। দূরপাল্লার যানবাহন গতকালও ঢাকায় তেমন আসেনি। ঢাকা থেকেও ছেড়ে যায়নি। আশপাশ জেলাগুলো থেকে যে দু-একটি প্রবেশ করেছে তার যাত্রীরা চরম হয়রানির শিকার হয়েছেন। প্রবেশপথে গাড়ি থামিয়ে প্রত্যেক যাত্রীকে তল্লাশি করা হয়েছে। যাদেরকে সন্দেহ হয়েছে তাদেরকে ধরে নিয়ে গেছে পুলিশ। ঢাকার টার্মিনালগুলোতে গিয়ে দেখা গেছে জনমানবশূন্য।

জনমানবশূন্য গাবতলী টার্মিনাল : বেগম খালেদা জিয়ার রায়কে কেন্দ্র করে ঢাকার সাথে দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চল ছিল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে যাত্রীদের। সকাল ৯টায় গাবতলী বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, সকাল থেকে শ্যামলী পরিবহনের একটি বাস ছাড়া আর কোনো বাস ছেড়ে যায়নি, আবার অন্য কোনো জেলা হতে বাস গাবতলীতে আসেনি। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা।
বগুড়াগামী যাত্রী ডা: আঞ্জুমান আরা বলেন, শুক্রবার সকালে গিয়ে কর্মস্থলে উপস্থিত হতে হবে। এ জন্য যেকোনো মূল্যেই হোক আজই বগুড়ায় পৌঁছাতে হবে। কিন্তু কোনো পরিবহন যাচ্ছে না। অনেক খোঁজাখুঁজির পর শ্যামলী পরিবহনের একটি টিকিট পেয়েছি। দেখি কখন পৌঁছাতে পারি। একইভাবে ঢাকার ভেতরেও অফিসগামী লোকদের সকাল থেকেই গাড়ির জন্য দীর্ঘ অপো করতে দেখা গেছে গাবতলী, আমিনবাজার, কল্যাণপুর, শ্যামলী এলাকার বাস কাউন্টারগুলোতে।

গাবতলী বাস কাউন্টারের কয়েকজন পরিবহনকর্মী জানান, খালেদা জিয়ার রায় পর্যবেক্ষণ করে মালিকরা গাড়ি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেবেন। কখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলা যাচ্ছে না। এসআর পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার বলেন, বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা পর্যন্ত আমাদের কোনো গাড়ি গাবতলী ছেড়ে যায়নি, এমনকি গাবতলীতে কোনো গাড়ি আসেনি। রায়ের পর পরিস্থিতি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
যাত্রাবাড়ী : যাত্রাবাড়ী, শনিরআখড়া, সাইনবোর্ড, জুরাইন, দোলাইরপাড়সহ আশপাশ এলাকায় অবস্থান নেয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। যাত্রাবাড়ীতে ঢাকা-৫ আসনের সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান মোল্লা, থানা আওয়ামী লীগ সভাপতি কাজী মনিরুল ইসলাম মনু এবং ৪৮ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবুল কালাম অনুর অনুসারীরা পৃথকভাবে অবস্থান নেয়। রায়ের পর বিকেলে অনুর অনুসারীরা আনন্দ মিছিল বের করে। জুরাইনে শ্যামপুর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ৫১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর কাজী হাবিবুর রহমান হাবুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা অবস্থান নেয়। এ ছাড়া ঢাকা-৪ আসনের এমপি ও ঢাকা মহানগর জাতীয় পার্টির সভাপতি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলার নেতৃত্বে রাজপথে অবস্থান নেয় শ্যামপুর-কদমতলি থানা জাতীয় পার্টির নেতারা।

সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ডে গতকাল পরিবহন শ্রমিকদের চিরচেনা হাঁকডাক দেখা যায়নি। অন্য দিনগুলোতে দূরপাল্লার কয়েক শ’ পরিবহন ছেড়ে গেলেও গতকাল হাতেগোনা কয়েকটি পরিবহন ছাড়তে দেখা যায়। তবে তাতে যাত্রীসংখ্যা ছিল খুবই কম। এ এলাকায় গণপরিবহনের চলাচলও ছিল হাতেগোনা।
আমাদের সিদ্ধিরগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, রাজধানী ঢাকায় প্রবেশের অন্যতম রুট ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ভোর থেকেই পুলিশের কঠোর তল্লাশি করা শুরু করা হয়। মহাসড়কের মদনপুর, কাঁচপুর, শিমরাইল মোড় ও সাইনবোর্ড এলাকায় চেকপোস্ট বসিয়ে ঢাকামুখী প্রত্যেকটি যানবাহন তল্লাশি করছে পুলিশ। শীতলক্ষ্যা নদীর কাঁচপুর সেতু দিয়ে ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পূর্বাঞ্চলের ৩৮টি রুটে প্রতিদিন হাজার যানবাহন চলাচল করলেও ৮ ফেব্রুয়ারি বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মামলার রায়কে কেন্দ্র করে গণপরিবহন চলাচলের সংখ্যা কমে গেছে।

সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি আব্দুস সাত্তার বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার মামলার রায়কে কেন্দ্র করে কেউ যেন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে তার জন্য নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। এ ছাড়া নাশকতা ঠেকাতে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে বলে জানিয়েছেন ওসি।
সাভার (ঢাকা) সংবাদদাতা জানান, ঢাকার প্রবেশদ্বার সাভারে গতকাল ভোর ৫টা থেকে বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের হেমায়েতপুর, সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ড ও আমিনবাজার এলাকায় পুলিশ, র্যাব ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের তৎপরতা ল করা গেছে। পাশাপাশি এসব এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদেরও সড়কে মহড়া দিতে দেখা গেছে। সড়ক ও মহাসড়কগুলোতে পুলিশের পাশাপাশি র্যাবও টহল দেয়। মহাসড়কে বিচ্ছিন্নভাবে স্বল্পসংখ্যক যানচলাচল থাকলেও গাড়িতে তল্লাশি চালায় পুলিশ। ঢাকামুখী যাত্রীবাহী সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
সোনারগাঁও (নারায়ণগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট কাঁচপুর ছিল ফাঁকা। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে এ পয়েন্টে ছিল পুরোপুরি ফাঁকা। বেলা বাড়ার সাথে সাথে বিভিন্ন যাত্রীবাহী যানবাহনে ব্যাপক তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ। এ সময় যাত্রীদের ভোগান্তি শিকার হতে হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ ট্রাফিক পুলিশের সিনিয়র এএসপি আব্দুর রশিদ পিপিএম জানান, সকাল থেকে কাঁচপুর এলাকা ছিল স্বাভাবিক। বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ব্যাপক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/292278