৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, শুক্রবার, ৯:৪৭

এ যেন কারফিউ

পথচারী নেই। রাস্তায় যানবাহন নেই। দোকানপাট বন্ধ। ফুটপাথ ফাঁকা, একজন হকারও নেই। অফিস খোলা আছে কিন্তু কর্মকর্তা-কর্মচারী হাতেগোনা। খাবারের হোটেলগুলো ক্রেতার অভাবে খাঁ খাঁ। এই ছিল গতকালের রাজধানী। গোটা রাজধানীতে মনে হয়েছে কারফিউ অবস্থা। উৎকণ্ঠায় অনেকেই গতকাল বাসা থেকে বের হননি।
সকাল সাড়ে ৮টা। এই সময়ে মতিঝিল এলাকা সাধারণ সময়ে মানুষে থৈ থৈ করে। যানবাহনের জন্য পুরো রাস্তা আটকে যায়। সোনালী ব্যাংকের সামনে অন্তত ২০টি বাস দাঁড়িয়ে থাকে যাত্রী ওঠা-নামার জন্য। কিন্তু গতকাল ওই এলাকায় ওই সময় মাত্র দু’টি যাত্রীবাহী বাস দেখা গেছে। একটিতে লোক ছিল তিনজন, অপরটিতে সাতজন। একটি যাবে মোহাম্মদপুরে, আর অপরটি গাবতলী।

পথচারী ছিল একেবারেই হাতেগোনা। দিদার নামের এক পথচারী জানান, তিনি জরুরি কাজে বের হয়েছেন। হাসপাতালে তার মা চিকিৎসাধীন। তার জন্য ওষুধ কিনতে শাহবাগ যাবেন। পুরানাপল্টন নোয়াখালী টাওয়ার গলিতে গিয়ে দেখা যায় কোনো দোকানপাট খোলা নেই। মানুষ একটু চা খাবে তারও সুযোগ নেই। কিসমত নামের এক পথচারী বলেন, প্রতিদিন সকালে ওই এলাকায় অফিসে ঢোকার আগে তিনি নাস্তা করে নেন। কিন্তু আগের রাতে নাকি সব দোকানিকে পুলিশ বলে গিয়েছে দোকান বন্ধ রাখতে। তাই সব দোকান বন্ধ। সেগুন বাগিচা এলাকায় দেখা হয় ওই এলাকারই এক বাসিন্দা ফয়সালের সঙ্গে। তিনি বলেন, সকালে বাসা থেকে নেমে কোনো এক দোকানে নাস্তা করে নেন। কিন্তু সেগুন বাগিচা এলাকার সব দোকান বন্ধ। এমনকি চা-বিস্কুটের দোকানও খোলা নেই। নাস্তা করার কোনো সুযোগ নেই। বেলা ১১টার দিকে মালিবাগ এলাকায় দেখা যায় রাস্তাঘাট একেবারে ফাঁকা। এমনকি কোনো পথচারীও নেই। দুপুরের দিকে নোয়াখালী টাওয়ারে দেখা যায় ভবনের গেটটি কোনোমতে খোলা রাখা হয়েছে যাতে একজন মানুষ কোনোমতে ঢুকতে পারে। অথচ দুপুরের দিকে এই ভবনের নিচে শত শত মানুষ থাকে। এখানকার একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের এক কর্মচারী বলেন, কোনো গ্রাহক নেই। প্রগতি সরণির কোকাকোলা এলাকার সামনে থেকে বাড্ডায় নবনির্মিত ইউলুপ পর্যন্ত রাস্তার ওপরে একটু পর পরই তাঁবু খাটিয়ে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বসে থাকতে দেখা যায়। গুলশান লিঙ্ক রোডে পুলিশকে রায়টকার ও সাউন্ড গ্রেনেড নিয়ে মহড়া দিতে দেখা যায়।

গতকাল সারা রাজধানীর এই ছিল চিত্র। মতিঝিল থেকে পুরানাপল্টন মোড় পর্যন্ত রাস্তার দু’পাশে অন্তত ১০ হাজার হকার বসে। গতকাল একজন হকারও দেখা যায়নি। শামসুল ইসলাম নামের এক হকার জানান, আগের রাত ৮টায় তাদেরকে রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। পরদিন যাতে কেউ না বসে সে জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে নির্দেশ দেয়া হয়। রাজধানীর মতিঝিলের একটি ব্যাংকে খবর নিয়ে জানা যায় দুপুর ১২টা পর্যন্ত ওই ব্যাংকে গ্রাহক গেছেন মাত্র পাঁচজন।

দুপুরের দিকে গুলিস্তান বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায় টার্মিনালে গাড়িগুলো ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের পক্ষ থেকে আগের দিন বলা হয়েছিল যেকোনো মূল্যে তারা গাড়ি চালাবেন। কিন্তু গতকাল দেখা গেছে ঠিক উল্টো চিত্র। কমলাপুর এলাকায় ৬ নম্বর বাস স্ট্যান্ডের দুই পাশে সারিবদ্ধ বাস দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। আর এ বাসগুলোকে পাহারা দিলে ১০০ গজ দূরে দূরে লাঠি হাতে দুইজন করে পাহারাদারকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। দুপুরের দিকে সেগুনবাগিচা স্কুলে গিয়ে দেখা যায় কোনো ছাত্রছাত্রী নেই। একজন শিক্ষকের দেখা মিললেও তিনি কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

বেলা সাড়ে ৩টার দিকে পুরানাপল্টন এলাকায় দেখা যায় রাস্তার বিভিন্ন পয়েন্টে শুধু পুলিশ আর পুলিশ। রাস্তার দুই পাশে লাইন দিয়ে তারা দাঁড়িয়ে আছেন। রাস্তায় তেমন যানবাহন নেই। দু-একটি যা চলছে তা দ্রুত গতিতে যেন চলে যেতে পারলেই বাঁচে। মতিঝিল এলাকার কয়েকটি পেট্রলপাম্পে গিয়ে দেখা যায়, পাম্পগুলোতে কর্মচারীরা থাকলেও তেল সরবরাহ করা হচ্ছে না। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে মতিঝিল থেকে দুই পুলিশ ভ্যান বিকট শব্দে সাইরেন বাজিয়ে দৈনিক বাংলার দিকে যাচ্ছে। উত্তরার রাস্তায় রাস্তায় বিকট শব্দে পুলিশকে সাইরেন বাজিয়ে মহড়া দিতে দেখা যায়। সব মিলিয়ে ঢাকার চিত্র ছিল ভীতিকর।

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/292287