৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, শুক্রবার, ৯:৪৬

ঢাকার ফাঁকা রাস্তায় উদ্বেগ নিয়ে পথ চলা

গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে আবদুল মমিন, সাবেরা বেগম, রাইসুল ইসলামসহ কয়েকজন চাকরিজীবী ব্যাগ নিয়ে মগবাজার মোড়ে বাসের জন্য দাঁড়িয়েছিলেন আধাঘণ্টারও বেশি সময় ধরে। কিন্তু তাদের গন্তব্যের বাস আসে না। উপায় না পেয়ে হেঁটেই অফিসে রওনা হতে দেখা যায় এদের কয়েকজনকে।
মমিন পল্টনের একটি বেসকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। থাকেন হাতির ঝিলের পাশে তেজগাঁও এলাকায়। বাসা থেকে বের হয়ে সাতরাস্তার মোড়ে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেছেন বাসের জন্য। না পেয়ে সিদ্ধান্ত নেন হেঁটেই অফিস যাবেন। মগবাজার আসার পর কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে আবার অপেক্ষা করছিলেন বাসের জন্য। কিন্তু সেই বাস আসছে না। ভাবলেন অটোরিকশায় যাবেন। সেটাও মিলছে না। দুই একটা আসলেও বাড়তি ভাড়া হাঁকছেন চালক।

তার সঙ্গে থাকা আবদুল্লাহ কাফি বলেন, অফিসের বসকে ফোন দিয়েছিলাম আজ অফিসে যেতে পারব না। অফিস রাজিও হয়। কিন্তু অফিসের একটা প্রয়োজনে বস ফোন দিল যেভাবে হোক যেতে হবে। এদিকে পরিবার বের হতে দিচ্ছিল না। বলা তো যায় না। পরিস্থিতি তো খারাপ। আধাঘণ্টা তেজগাঁও দাঁড়িয়েছিলাম। রাস্তায় বাস নাই, মানুষজনও কম। তাই মগবাজার পর্যন্ত হেঁটে আসলাম। ভাবলাম হাঁটতে হাঁটতে হয়তো একটা বাস পেয়ে যাব। কিন্তু দেখতেই তো পাচ্ছেন বাস নাই।
রাজধানীর ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, বাংলামোটর, শাহবাগসহ বেশ কয়েকটি ব্যস্ত সড়কের খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মানুষের চলাচল খুব একটা নেই। যানবহনও হাতেগোনা কয়েকটি।
চারদিকে পুলিশের টহল আর তল্লাশি। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মামলার রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে গতকাল এই পরিস্থিতি তৈরি হয়। চারদিকে ধরপাকড় আর পুলিশী হয়রানির ভয়ের মধ্যে কয়েক দিন ধরে অতিবাহিত করছে বলে অভিযোগ রাজধানীবাসীর। একান্ত প্রয়োজন না হলে ঘর থেকে বের হননি কেউ। সবার দৃষ্টি ছিল খালেদা জিয়ার রায়ের দিকে।

প্রসঙ্গত, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার রায়কে কেন্দ্র করে কয়েকদিন ধরে উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় মানুষ। আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর তৎপরতায় এক ধরনের উদ্বেগ তৈরি হয় মানুষের মধ্যে। অবস্থা এমন হয় যে, ঢাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
মগবাজারের ওয়ারলেস মোড়ে দাঁড়িয়ে সকাল দশটার দিকে কথা হয় ইয়াকুব চৌধুরী নামের এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে। তার দোকান রয়েছে বেইলি রোডে। তিনি বলেন, কী হবে বুঝতে পারছি না। মনের মধ্যে একটা আতঙ্ক কাজ করছে। খুব ভয় লাগছে। যার কারণে আজ নিজের দোকান বন্ধ রেখেছি। রাস্তায় বের হওয়ার ইচ্ছে ছিল না। কিন্তু উপায় ছিল না। সন্তান এসএসি পরীক্ষা দিচ্ছে।
বাড়ির বাইরে বের হয়েছেন এমন আরেকজন হলেন জয়নাল। তার সন্তানও যে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। তিনি বলেন, আমার ছেলেটির পরীক্ষা সকালে। টেম্পু বা রিকশায় চড়ে তাকে কেন্দ্রে নিয়ে যাই। একজন অভিভাবক হিসাবে আমার তো উদ্বেগের শেষ নেই; আমার মতো অনেকেই এমন অবস্থায় রয়েছে।

সংবাদকর্মী রফিকুল ইসলাম জানান, গতকাল দুপুরেও রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোড এলাকায় যাত্রীরা বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। যাত্রীদের প্রয়োজনের তুলনায় সেখানে গাড়ি ছিল না। আবার যে পরিমাণ যাত্রী দাঁড়িয়ে আছেন, সেটা ছুটির দিনের চেয়ে অনেক বেশি। একই অবস্থা দেখা যায় ব্যস্ত এলাকা টঙ্গীতে। অস্বাভাবিক রকম ফাঁকা সড়কের ধারে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সমর্থকরা চেয়ার পেতে বসে আড্ডা দিচ্ছেন। কেবল ঢাকা নয়, ঢাকামুখী বিভিন্ন মহাসড়কেও পরিস্থিতি একই রকম। কড়া হরতালে যে চিত্র থাকে, তেমনি চিত্র সব জায়গায়। বাস নেই, যাত্রীরা হিউম্যান হলারের মতো ছোট বাহনে যাতায়াত করছে। তাও আবার ঝুলে ঝুলে।
গতকাল রায় ঘোষণার পর অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর টহল আরও বাড়িয়ে দেয়। এতে আরও আতঙ্কিত হয়ে ওঠে রাজধানীর মানুষ। বিকালে জাতীয় প্রেস ক্লাব থেকে মগবাজার আসার পথে দেখা যায় কদম ফোয়ারা মৎস্যভবন কাকরাইল মোড়, মগবাজার এলাকায় শধু পুলিশ আর পুলিশ। রাস্তায় মানুষ নেই বললেই চলে। খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া কেউ রাস্তায় ছিল না। যারা রাস্তায় বের হয়েছেন তারাও ছিলেন ভীত সন্ত্রস্ত। আর বাসার বাইরে বের হওয়ার মানুষের স্বজনদের উদ্বেগ এই ছিল যে, কখন ঘরে ফিরবেন প্রিয়জন।

http://www.dailysangram.com/post/318456