৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ৯:০৫

টিআইবির গবেষণা রিপোর্ট

বেসরকারি চিকিৎসাসেবা নিয়ন্ত্রণহীন ও নিম্নমানের

নিয়ন্ত্রণহীন ও নি¤œমানের বেসরকারি চিকিৎসা সেবায় আর্থিক ও স্বাস্থ্যজনিত ক্ষতির শিকার হচ্ছেন সেবা গ্রহীতারা। প্রয়োজনীয় নীতিগত সহায়তার অভাব, পরিদর্শন ও তদারকির েেত্র ব্যাপক ঘাটতি এবং অতি-মুনাফাখোরি মনোবৃত্তির কারণে বেসরকারি চিকিৎসাসেবা খাত সেবা গ্রহীতাদের জন্য আজ দুর্দশায় পরিণত হয়েছে। অধিক মুনাফার ল্েয এসব বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান অতিরিক্ত পরীা-নিরীাসহ অতিরিক্ত ওষুধ ক্রয়ের পরামর্শ প্রদান করছে, এক রোগীর অতিরিক্ত ওষুধ অন্য রোগীর কাছে বিক্রয়, মেয়াদোত্তীর্ণ ও নি¤œমানের রি-এজেন্ট ব্যবহার, পরীা-নিরীা সঠিক না হওয়া, পরীা না করেই প্রতিবেদন তৈরি (স্থানীয়ভাবে বালতি টেস্ট নামে পরিচিত) প্রভৃতি নানা ধরনের অনিয়মের তথ্য টিআইবির গবেষণায় উঠে এসেছে।
গতকাল ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) ধানমন্ডির কার্যালয়ে ‘বেসরকারি চিকিৎসাসেবা : সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য খাতের চরম অব্যবস্থাপনার চিত্র তুলে ধরা হয়। গবেষণাটি ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে পরিচালিত হয়। বেসরকারি চিকিৎসাসেবা প্রদানকারী ঢাকা মহানগরীর ২৬টি ও ঢাকার বাইরে আট বিভাগের ৯০টি প্রতিষ্ঠানসহ মোট ১১৬টি নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান থেকে এ তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে ৬৬টি হাসপাতাল এবং ৫০টি রোগ-নির্ণয় কেন্দ্র (ডায়গনস্টিক সেন্টার) রয়েছে। বেসরকারি চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠান, সেবাদাতা, সেবাগ্রহীতা, নিয়ন্ত্রণকারী ও তদারকি কর্তৃপরে প্রতিনিধিসহ মোট ৭০৬ জন অংশগ্রহণকারী এবং ২৭টি ফোকাস দলের ৩১০ জন অংশগ্রহণকারীর কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এ ছাড়াও বেসরকারি চিকিৎসাসেবা সম্পর্কিত আইন, বিধিমালা, সরকারি নথিপত্র, গবেষণা প্রতিবেদন এবং গণমাধ্যম ও ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সংবাদ প্রতিবেদন ও তথ্য এ সময় পর্যালোচনা করা হয়।

গবেষণায় বলা হয়েছে, ৩২টি স্বাস্থ্যসেবা দানকারী প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশের ঘাটতি রয়েছে, ৭৭টিতে নারী ও পুরুষের জন্য পৃথক টয়লেট নেই, ৪২টি প্রতিষ্ঠান নিয়মবহির্ভূতভাবে আবাসিক এলাকায় কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ৬৬টি হাসপাতালে সার্জারি সুবিধা থাকলেও ৯টিতে পোস্ট-অপারেটিভ ক নেই, ৫২টিতে সার্বণিক চিকিৎসক নেই, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ের ২০টি হাসপাতাল অনুমোদন না নিয়েই বিশেষায়িত সেবা যেমন- আইসিইউ, সিসিইউ, এনআইসিইউ, কার্ডিয়াক প্রভৃতি সেবা প্রদান করছে এবং ২৩টি হাসপাতাল অনুমোদন না নিয়েই শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধি করেছে। ২১টি প্রতিষ্ঠানে সেবাগ্রহীতাদের জন্য পরীা-নিরীার মূল্য সম্পর্কে কোনো তথ্য প্রদর্শন করা হয়নি। অধিক মুনাফা অর্জনে হাসপাতালের কর্তৃপ কর্তৃক প্রসূতিকে সিজারিয়ান প্রসবে উদ্বুদ্ধ করার অভিযোগ রয়েছে। উল্লেখ্য, দেশে সিজারিয়ান নবজাতক প্রসবের হার ২০০৪ সালের ৪ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০১৪ সালে ২৩ শতাংশে পৌঁছায়। এলাকাভেদে সেবার মূল্যের ব্যাপক তারতম্য পাওয়া গেছে।
গবেষণায় দেখা যায় ১১৬ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৯৭টি পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র পায়নি। এ ছাড়া বেসরকারি চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রধান আইন ‘দ্য মেডিক্যাল প্র্যাকটিস অ্যান্ড প্রাইভেট কিনিকস অ্যান্ড ল্যাবরেটরিজ (রেগুলেশন) অর্ডিন্যান্স ১৯৮২ প্রণয়নের পর এখন পর্যন্ত হালনাগাদ করা হয়নি। এ আইনের কোনো বিধিমালাও করা হয়নি।

টিআইবির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সভাপতি অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, উপদেষ্টা-নির্বাহী ব্যবস্থাপনা অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের এবং গবেষণা ও পলিসি বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল হাসান সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/292029