৫ মার্চ ২০২৩, রবিবার, ১২:১৮

বিচার হয়নি বিএম ডিপোর ঘটনায়

 বিএম কনটেইনার ডিপোর ভয়াবহ বিস্ফোরণে ৫০ জনের বেশি প্রাণহানির ঘটনার রেশ না কাটতেই আবারও বিস্ফোরণে কাঁপল চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড। গতকাল শনিবার বিকেলে সীমা অক্সিজেন লিমিটেড কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণে এলাকায় আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে।

সীমা অক্সিজেন প্লান্ট থেকে বিএম কনটেইনার ডিপোর দূরত্ব আধাকিলোমিটারের মতো। অনেকটা হাঁটা দূরত্বে অবস্থান। গতকালের বিস্ফোরণেও কয়েক কিলোমিটার দূরেও বিকট শব্দ শোনা যায়। স্থানীয়রা বলছে, বিএম কনটেইনার ডিপোর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ঠিকই; কিন্তু তদন্ত আর এগোয়নি। ফলে দোষীদের বিচার না হওয়ায় ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়েছে।

সীমা অক্সিজেন প্লান্টে অগ্নিকাণ্ড ঠিক কী কারণে ঘটেছে তা এখনো জানা যায়নি। ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। গতকাল রাত পর্যন্ত ঘটনাস্থলে উদ্ধারকাজ চলছিল। ধারণা করা হচ্ছে, বিএম ডিপোতে অসকর্তার কারণে যে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটেছে; সীমা অক্সিজেন প্লান্টেও একই কারণে বিস্ফোরণ ঘটেছে।

জানতে চাইলে বিস্ফোরক দপ্তর চট্টগ্রামের পরিদর্শক মো. তফাজ্জল হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সীমা অক্সিজেন প্লান্টের অনুমোদন বা লাইসেন্সের মেয়াদ আছে কি না জানা যাবে আগামীকাল (আজ রবিবার)। কারণ ফাইল না দেখে সেই কারখানা সম্পর্কে কিছুই বলা যাবে না।’

জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটির প্রধান রাকিব হাসান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কাল (আজ) থেকে আমরা সরেজমিনে গিয়ে তদন্ত শুরু করব। আশা করছি সঠিক সময়েই তদন্ত শেষ করতে পারব।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৯১ সালে জাহাজ ভাঙা দিয়ে শুরু হয় সীমা স্টিলের ব্যবসা। ২০০৩ সাল থেকে ইস্পাত পণ্য রড উৎপাদনে যুক্ত হয় সীমা অটোমেটিক রি-রোলিং মিলস। সীতাকুণ্ডে অবস্থিত কম্পানির কারখানাটির বার্ষিক উৎপাদনক্ষমতা ৬০ হাজার টন। গত বছরের সেপ্টেম্বরে কম্পানিটি পুঁজিবাজারে আসার জন্য তালিকাভুক্ত হয়েছে। আর সীমা অটোমেটিক রি-রোলিং মিলসের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হচ্ছে সীমা অক্সিজেন প্লান্ট।

ঘটনার পর জানতে প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মামুন উদ্দিনের মোবাইলে ফোন দিয়ে সংযোগ বন্ধ পাওয়া যায়। পরে তাঁর ছোট ভাই পারভেজ উদ্দিনের মোবাইলে ফোন দিলে সেটিও বন্ধ পাওয়া যায়।

২০২২ সালের ৪ জুন রাতে ভয়াবহ আগুনের পর বিস্ফোরণে সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়িতে বিএম ডিপোতে ৫১ জন নিহত হন। আহত হন দেড় শতাধিক। এ ঘটনায় গত ৭ জুন সীতাকুণ্ড থানার উপপরিদর্শক আশরাফ সিদ্দিকী মামলা করেন। মামলায় ডিপোর আট কর্মকর্তাকে আসামি করা হলেও মালিকপক্ষের কেউ আসামি হননি।

আসামিরা হলেন ডিপোর মহাব্যবস্থাপক নাজমুল আক্তার খান, উপমহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) নুরুল আক্তার খান, ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) খালেদুর রহমান, সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা আব্বাস উল্লাহ, জ্যেষ্ঠ নির্বাহী (প্রশাসন) নাছির উদ্দিন, সহকারী ব্যবস্থাপক আবদুল আজিজ, ডিপোর শেডের ইনচার্জ সাইফুল ইসলাম ও সহকারী ডিপো ইনচার্জ নজরুল ইসলাম।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মামলার পর নভেম্বর পর্যন্ত তদন্ত করছিল সীতাকুণ্ড থানা পুলিশ। পরে সেই মামলা ডিবি পুলিশে হস্তান্তর করা হয়। মামলার তদন্তের জন্য এখনো আসামিদের ডাকা হয়নি। কেউ গ্রেপ্তারও হননি। অথচ তাঁরা সবাই এখনো ডিপোতে কর্মরত আছেন।

বেসরকারি কনটেইনার ডিপোগুলোর লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষ হচ্ছে কাস্টমস। আর বন্দরের সম্প্রসারিত অংশীদার হিসেবে কাজ তদারকি করে চট্টগ্রাম বন্দর। সর্বশেষ তদারকির পর বেসরকারি আরেক কনটেইনার ডিপো সিসিটিসিএলের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় চট্টগ্রাম কাস্টমস। কিন্তু অক্সিজেন প্লান্টের ক্ষেত্রে কারা তদারকি করবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি আখতার কবির চৌধুরী বলেন, ‘আগে বিএম ডিপোর এত বড় ঘটনায় মালিকদের আসামি পর্যন্ত করা হয়নি। ফলে ন্যায়বিচার কিভাবে পাবে নিহত শ্রমিকদের পরিবারগুলো। সেই কারণে তখন তাঁরা পার পেয়ে গেছেন। এখন সীমা অক্সিজেন প্লান্টে কী ঘটেছে তা তদন্তের পর জানা যাবে। কিন্তু আগে যেহেতু বিচার হয়নি; তাহলে এ ক্ষেত্রে যদি কোনো গাফিলতি থাকে তাহলে সেই ঘটনায় পার পেয়ে যাওয়ার সুযোগ পাবে।’

https://www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2023/03/05/1258091