৪ মার্চ ২০২৩, শনিবার, ১:০৯

‘ফকিন্নি’ বাজারে ভিড় বাড়ছে

এ যেন গরিবের সুপারশপ। অবস্থান তেজগাঁও থানার তেজকুনিপাড়ায়। সবাই চেনে ‘ফকিন্নি’ বাজার নামে। সেখানে সবকিছুর দাম কম। ভাগা দিয়ে বিক্রি হয় পণ্য। চাইলে ১০ টাকায় সবজি কেনা যায়। মাছ কেনা যায় ৫০ টাকায়। আধাকেজি চালও বিক্রি হয়। ডাল, হলুদ, মরিচসহ বিভিন্ন পণ্য ১০ থেকে ২০ টাকার প্যাকেট করা থাকে। কেউ ১০০ টাকা নিয়ে সেখানে গেলে একবেলার বাজার করতে পারেন।

নিম্ন আয়ের মানুষের এই বাজারে এখন ভিড় বাড়ছে। শুধু গরিব নয়, এখন মধ্যবিত্তরাও এখান থেকে পণ্য কিনছেন। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে টাকা সাশ্রয় করতে তাদের এই বাজারের দ্বারস্থ হতে হচ্ছে।

বিজয় সরণি থেকে তেজগাঁওয়ের দিকে যেতে উড়াল সড়কের নিচে গড়ে উঠেছে এই বাজারটি। নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ নিয়মিত এখান থেকে বাজার করেন। অধিকাংশ ক্রেতাই ওই এলাকার দিনমজুর, কারখানা শ্রমিক কিংবা রিকশাচালক। তারা অল্প অল্প করে প্রতিদিনের বাজার প্রতিদিন করেন। এ কারণেই এটি ‘ফকিন্নি’ বাজার নামে পরিচিত। বিক্রেতারা জানান, নিত্যপ্রয়োজনীয় সব ধরনের পণ্যই বিক্রি হয়। তবে দাম অন্য বাজারের চেয়ে কম। ক্রেতার ইচ্ছেমতো অল্প টাকা দিয়ে নিত্যপণ্যও কেনা যায় এখানে। চাল, মসুর ডাল, তেল, সবজি কিংবা মাছ-মাংস সবকিছুই চাহিদামতো নিতে পারেন ক্রেতা।

বাজারের কিছু দোকানে ছোট ছোট প্যাকেটে পসরা সাজিয়ে রাখা হয় ডাল, হলুদ-মরিচের গুঁড়া, ডাবলি, ছোলা, বাদাম, সরিষাসহ বিভিন্ন পণ্য। এসব পণ্য ১০ থেকে ২০ টাকা দরে বিক্রি হয়। ২০ টাকার সয়াবিন তেলও নিতে পারে যে কেউ। আয়শা বেগম প্রায় ২০ বছর ধরে এই বাজারে ব্যবসা করেন। তিনি জানান, যারা দিনমজুর তারাই কিনতে আসে। এখান থেকে পণ্য কিনে তারা সুবিধা পায়। যার যতটুকু দরকার সে ততটুকু পণ্যই কিনতে পারে। আয়শা বলেন, মধ্যবিত্তরাও এখান থেকে পণ্য নেয়। একবারে বেশি পণ্য কিনতে না পারলে আমাদের এখানে এসে প্রতিদিন অল্প অল্প করে বাজার করে।

‘ফকিন্নি’ বাজারে ঢোকার আগেই আরেকটি বাজার চোখে পড়ে। সেখানে এককেজি কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকায়। অথচ ‘ফকিন্নি’ বাজারে কেউ ১২০ টাকা আবার কেউ ৮০ টাকাতেও কাঁচামরিচ বিক্রি করছেন। কীভাবে এত কম দামে বিক্রি করছে জানতে চাইলে এক বিক্রেতা বলেন, কাওরান বাজার থেকে সবাই বেছে বেছে ভালো মরিচ কিনে নিয়ে যায়। এরপর যা অবশিষ্ট থাকে তা আমরা কম টাকায় ঠিকা দরে কিনে নেই। পরে সেগুলোই কম দামে বিক্রি করি। অল্প লাভে বিক্রি করে দেই। সবজি বিক্রেতা নাছিমা বেগম ১২ বছর ধরে এভাবেই সবজি কিনে বিক্রি করেন। তার দোকানে পসরা সাজিয়ে রাখা ছোট ছোট ৪ পিস বেগুন ১০ টাকা, পেঁপে ২০ টাকা ও ৫-৬ পিস করলা ২০ টাকা ভাগা দিয়ে রেখেছেন। তিনি বলেন, বেপারিরা ভালো ভালো সবজি আগেই বিক্রি করে ফেলে। পরে যা থাকে তাই ২০০-৩০০ টাকা দিয়ে কিনে এনে বিক্রি করি। প্রতিদিন ৫০০-৬০০ টাকা বিক্রি হলে ২০০ টাকা লাভ হয়। ‘ফকিন্নি’ বাজারে পণ্য কিনতে আসা সরকারি চাকরিজীবী আব্দুল হাকিম বলেন, এখানে অল্প অল্প করে কেনা যায়। দামও কম। ৬০ টাকা দিয়ে আধাকেজি কাঁচামরিচ কিনলাম। বড় বাজারে কিনতে গেলে ৮০ টাকা লাগতো। তাই এখানে এসেছি।

শহিদ মিয়া ডিম বিক্রি করেন। ৩০ টাকা দিয়ে তার থেকে এক হালি ডিম কেনা যায়। তবে পরিবহনের সময় যেসব ডিম ভেঙে যায় সেই ডিম এই দামে কিনতে পারেন ক্রেতারা। এ ছাড়া ছোট আকারের ডিম ১৩০ টাকা ডজন বিক্রি করেন তিনি। বলেন, অনেকেই ভাঙা ডিম কেনেন। সিদ্ধ করে খেতে না পারলেও তা ভেজে খাওয়ার জন্য নিয়ে যান। এই বাজারে বিভিন্ন প্রজাতির মাছও বিক্রি হয়। কেউ চাইলে ৫০ টাকা দিয়েও অল্প পরিমাণে মাছ কিনতে পারেন। ফয়সাল ৩৫০ টাকা কেজি দরে পাবদা মাছ বিক্রি করছেন। তিনি জানান, কেউ ৫০ টাকার মাছ নিলে ১৪০ গ্রাম পাবে। পাল্লায় ৩ পিস মাছ ওঠে ১৪০ গ্রামে। আরেক মাছ বিক্রেতা সাদ্দাম হোসেন বলেন, ছোট শিং মাছ ২৫০ টাকা কেজি বিক্রি করি। কেউ ৫০ টাকার নিলে ১০ পিস মাছ দেই। হাবিব মিয়া নামের এক বেসরকারি চাকরিজীবী এসেছেন সেখান থেকে মাছ কিনতে। তিনি বলেন, বড় বাজারে বেশি দাম। এখানে এসেছি কম দামে মাছ কিনতে। ভালো মাছ পেলে কিনি। এখন তো বেশি দামি মাছ কেনার মতো অবস্থা নেই। সবকিছুর দামই বাড়ছে।

https://mzamin.com/news.php?news=45201