৪ মার্চ ২০২৩, শনিবার, ১২:৫৫

ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে ট্রেন বন্ধে নিম্ন আয়ের মানুষের ভোগান্তি

ট্রেনে একজন লোক মাত্র ২০ টাকা দিয়ে ঢাকা যেতে পারতেন। সেখানে তাকে তিনগুণ বেশি ভাড়া দিয়ে কমপক্ষে ৬০ টাকা দিয়ে এখন তাকে ঢাকা যেতে হচ্ছে। নিম্ন আয়ের মানুষ যারা নিয়মিত এই রুটে যাতায়াত করেন তাদের জন্য বিষয়টি হতাশাজনক। এভাবেই আক্ষেপ করেন ঢাকার নারায়ণগঞ্জ রুটে নিয়মিত যাতায়াতকারী একটি কোম্পানির পিয়ন তাইমুর। তিনি বলেন, ট্রেন বন্ধ থাকায় আমার মতো সামান্য আয়ের মানুষের অনেক কষ্ট হচ্ছে।

শুধু তাইমুর নয়, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে নিয়মিত ট্রেনে যাতায়াত করতেন এমন শত শত মানুষের প্রতিদিন ৩ গুণ ভাড়া দিয়ে যাওয়া-আসা করতে হয়। সামান্য বেতনের মানুষের বেশির ভাগ টাকাই পরিবহন ভাড়ার পেছনে খরচ হয়ে যায়। জানা গেছে, পদ্মা সেতু রেলসংযোগ প্রকল্পের আওতায় ঢাকা থেকে গেন্ডারিয়া অংশে তিনটি পৃথক রেললাইন নির্মাণকাজ এবং সেই সাথে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেলপথ উন্নয়ন কাজের জন্য গত ৪ ডিসেম্বর থেকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ার দুই মাস পেরিয়ে গেছে। অনির্দিষ্টকালের জন্য ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে বিপাকে পড়েছেন এই রুটে চলাচলকারী হাজার হাজার যাত্রী।

এ দিকে ট্রেন বন্ধ থাকায় তিন গুণ বেশি ভাড়া দিয়ে ট্রেন যাত্রীদের বাধ্য হয়ে বাসে করে গন্তব্য স্থানে যেতে হচ্ছে। যেখানে সব থেকে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকাগামী বেশির ভাগ ট্রেনযাত্রীর সাথে কথা বলে জানা গেছে এমন তথ্য।

এমনই এক যাত্রী বিসিক শিল্পাঞ্চলের সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ট্রেনে করে আমরা ২০ টাকা দিয়ে ঢাকায় যেতাম কিন্তু এখন ঢাকা যেতে কমপক্ষে ৬০ টাকা আমাদেরকে গুনতে হচ্ছে। আমরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। সরকারের এ বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে রেল লাইনের সংস্কার কাজ দ্রুত সময়ে করা উচিত বলে তিনি মনে করেন।

নারায়ণগঞ্জ রেলস্টেশনের কর্মকর্তা সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে আগে ১৬ জোড়া ট্রেন চলাচল করত। নারায়ণগঞ্জ রেলস্টেশন থেকেই প্রতিদিন ১০ হাজার টিকিট বিক্রি হয়। এ ছাড়া ঢাকার কমলাপুর পর্যন্ত আরো পাঁচটি স্টেশন আছে।

সবমিলিয়ে দৈনিক ২০ হাজারেও বেশি মানুষ ট্রেনে যাতায়াত করে। ট্রেনে যাতায়াতকারীদের মধ্যে অধিকাংশই চাকরিজীবী ও শিক্ষার্থী। করোনা পরিস্থিতি ও লকডাউনের সময় ছাড়া বছরে এই রুটে ট্রেন চলাচল কখনো বন্ধ থাকেনি।

ঢাকার একটি কলেজের শিক্ষার্থী মিফতাবুলের বাড়ি ফতুল্লায়। তিনি জানান, ট্রেন যখন চলত তখন আমি নিয়মিত ট্রেনে করে যাতায়াত করতাম। কিন্তু এখন ট্রেন বন্ধ থাকায় বাড়তি টাকা দিয়ে বাসে করে যেতে হচ্ছে।

শিক্ষার্থী আরো বলেন, বর্তমান আমাদের দেশে চলছে অর্থনৈতিক সঙ্কট। মানুষদের কাছে টাকা-পয়সা একদমই নাই। মানুষের আয় রোজগার কমে যাচ্ছে। ঠিক এই সময়ে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে ট্রেন বন্ধ হয়ে যাওয়া সাধারণ মানুষ বা নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য চরম সঙ্কটের। যার আজ দুই মাস ১৫ দিন চলছে। জানি না আর কত দিন লাগবে।

এ দিকে রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পদ্মা সেতু রেলসংযোগ প্রকল্পের আওতায় ঢাকা থেকে গেন্ডারিয়া অংশে তিনটি পৃথক রেললাইনের নির্মাণকাজ ও ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেলপথ উন্নয়ন প্রকল্পের কাজের জন্য ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটের ট্রেন চলাচল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ আছে। কবে নাগাদ কাজ শেষ হবে সে বিষয়ে নির্দিষ্ট করে কিছু না জানালেও অন্তত তিন থেকে সাড়ে তিন মাস ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকবে বলে জানাচ্ছেন রেলওয়ে কর্মকর্তারা।

নারায়ণগঞ্জ রেলস্টেশনের স্টেশন মাস্টার কামরুল ইসলাম সূত্রে জানা গেছে, রেলের চলমান সংস্কার কাজ কবে নাগাদ শেষ হবে এই প্রসঙ্গে রেল বিভাগের ঢাকা অফিস থেকে নির্দিষ্ট কোনো সময় বলা হয়নি। তবে রেলওয়ের ঢাকা অফিস সূত্রে তিনি জানান, প্রকল্প কাজ শেষ হতে অন্তত তিন থেকে সাড়ে তিন মাস তো লাগবে।

একই রেলস্টেশনের আরেক কর্মকর্তা বলেন, ট্রেনে স্বল্প আয়ের মানুষ চলাচল করে বেশি। ট্রেন বন্ধ থাকায় তাদের সাময়িক বিপাকে পড়তে হচ্ছে। তবে রেল কর্তৃপক্ষ দ্রুততার সাথে কাজ শেষ করতে পারবে বলে আশা করেন নারায়ণগঞ্জে কর্মরত রেল কর্মকর্তা এবং কর্মচারীরা।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/731884