৪ মার্চ ২০২৩, শনিবার, ১২:৫৪

পরিবেশ দূষণে জন্মাচ্ছে কম ওজনের শিশু

পরিবেশ দূষণে কম ওজনের শিশু জন্মাচ্ছে, মানুষ ভুগছে স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক ও ডায়াবেটিসে। ঢাকাসহ দেশের বড় বড় কয়েকটি শহরের পরিবেশ দূষণের জন্য দায়ী সালফার ডাই অক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইডস, ওজোন, কার্বন মনোক্সাইড ও পার্টিকুলেট মেটার। এই গ্যাসীয় পদার্থগুলো তৈরি হচ্ছে যানবাহন, কলকারখানা, ইটের ভাটা থেকে বাতাসে মিশে যাচ্ছে। এদের মধ্যে সবচেয়ে বিপজ্জনক হলো পার্টিকুলেট মেটার। পার্টিকুলেট মেটারের ব্যাস এত কম (ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর) যে, তা অনায়াসে শরীরের হৃৎপিণ্ড, ফুসফুসসহ অন্যান্য অঙ্গে ঢুকে যেতে পারছে। ফলে মানুষ উপরিউক্ত রোগগুলোসহ নানা ধরনের শারীরিক সমস্যায় ভুগছে। সম্প্রতি একটি গবেষণার পর চিকিৎসকরা বলছেন, পরিবেশ দূষণের কারণে শিশুরা কম ওজন নিয়ে জন্মাচ্ছে এবং সময়েই আগে (৩৭ সপ্তাহ) জন্মাচ্ছে।

সরকারের পরিবেশ মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত ক্লিন এয়ার অ্যান্ড সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের অধীন ‘এমবিয়েন্ট এয়ার কোয়ালিটি ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক রিপোর্টে স্বাস্থ্যের ওপর পরিবেশ দূষণের ক্ষতিকর প্রভাব তুলে ধরা হয়েছে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের আটটি সিটি করপোরেশনের বায়ুতে সালফার ডাই অক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইডস, ওজোন, কার্বন মনোক্সাইড ও পার্টিকুলেট মেটারের পরিমাণ অত্যন্ত বেশি রয়েছে। অন্য শহরগুলো হলো চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, খুলনা, রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট মহানগর।

সালফার ডাই অক্সাইডের কারণে মৃত্যুঝুঁকি বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বেশি ঘনত্বের সালফার ডাই অক্সাইডের মধ্যে কয়েক মিনিট অবস্থান করলে রেসপিরেটরি প্যারালাইসিস (শ্বাসবন্ধ) এবং মৃত্যুঝুঁকিসহ পালমোনারি সমস্যা হতে পারে। গ্যাসীয় এ পদার্থটি শুধু যে মানুষেরই ক্ষতির কারণ হয়ে থাকে তা নয়, গাছের বৃদ্ধি কমিয়ে দিচ্ছে, গাছের পাতার ক্ষতি করছে এবং সর্বোপরি বৃক্ষের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হচ্ছে। শিশু, বৃদ্ধ এবং যাদের হাঁপানি রয়েছে তারা মারাত্মক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন।
নাইট্রোজেন অক্সাইড ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য শহরের মারাত্মক পরিবেশ দূষণ করছে। নাইট্রোজেন অক্সাইডের আরেকটি ফর্ম নাইট্রাস অক্সাইড গ্রিনহাউজ গ্যাস তৈরিতে ভূমিকা রাখে। গ্রিনহাউজ গ্যাস পরিবেশে তাপ আটকে রাখে। জ্বালানি তেল (অকটেন, পেট্রল, ডিজেল, কেরোসিন) পোড়ানো হয় এমন যানবাহন থেকে নাইট্রোজেনে অক্সাইড নির্গত হচ্ছে। এ ছাড়া কয়লা, প্রাকৃতিক গ্যাস পোড়ানোর ইঞ্জিন থেকে এ গ্যাসটি নির্গত হয়। গ্যাসটির ঘনত্বের মধ্যে বেশিক্ষণ থাকলে শরীরে জ্বলা-পোড়া, গলার কোষ ফুলে যাওয়া, আপার রেসপিরেটরি ট্র্র্যাক্টে (শ্বাসতন্ত্রের উপরের অংশ) সমস্যা, গলায় খিঁচুনি, ফুসফুসে জলীয় দ্রবণ তৈরি করে। রিপোর্টে বলা হয়, নাইট্রোজেন অক্সাইড রক্তের মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন অংশে অক্সিজেন পৌঁছাতেও বাধা সৃষ্টি করে। এ ছাড়া গ্যাসটি অবসন্নতা, বিষণ্নতা, ঠোঁট ও শরীরের বিভিন্ন অংশ নীল হয়ে যাওয়ার জন্য দায়ী।

ওজোন স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে থাকলে তা পৃথিবীবাসীর জন্য উপকারী হয়ে থাকে। কিন্তু এটি স্ট্র্যাটেস্ফিয়ার থেকে ট্রোপোস্ফিয়ারে চলে এলে মানবজাতির জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে থাকে। এই ওজোন ভূপৃষ্ঠে অবস্থান করলে বায়ুদূষণ ও গ্রিনহাউজ গ্যাস তৈরি করে পরিবেশকে মারাত্মক ক্ষতি করে থাকে।

উল্লেখ্য, ওজন স্ট্যাটোস্ফিয়ার অথবা ট্রোপেস্ফিয়ার থেকে নিচে নেমে আসে না। তবে অতি বেগুনিরশ্মি, হাইড্রোকার্বন ও নাইট্রোজেন অক্সাইডের সাথে মিশে পরিবেশে ওজোন তৈরি হয়। এটা হয়ে থাকে অটোমোবাইল ওয়ার্কশপ থেকে। ওজোন শরীরের সব ধরনের কোষকে ক্ষতি করে থাকে। শ্বাসকষ্ট, চোখে জ্বলা, বুক ব্যথা, কফ, বমি বমি ভাব, মাথা ব্যথার কারণ হচ্ছে ওজোন। গাছের ক্ষতি করার সাথে সাথে ওজোন ফসলের উৎপাদনও কমিয়ে দিচ্ছে। এমনকি গাছের কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ ক্ষমতাও কমিয়ে দিচ্ছে ওজোন।

ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে পার্টিকুলেট মেটারের কারণে মানুষ সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই পার্টিকুলেট মেটারের ব্যস ১ থেকে ২.৫ মাইক্রোগ্রামের হয়ে থাকে। এতই ক্ষুদ্র ও সূক্ষ্ম যে এগুলো সরাসরি মানুষের ফুসফুস, হৃৎপিণ্ডে পৌঁছে যাচ্ছে এবং ব্রেইন স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক, ক্যান্সার, ডায়াবেটিসের কারণ হচ্ছে। সম্প্রতি প্রকাশিত একটি গবেষণা থেকে বলা হচ্ছে, পার্টিকুলেট মেটার কম ওজনের শিশু জন্মানো ও সময়ের আগেই জন্মানোর জন্য দায়ী বলেছেন আইসিডিডিআরবির ইমেরিটাস বিজ্ঞানী ড. পিটার কিম স্ট্রিটফিল্ড।

 

 

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/731934