৪ মার্চ ২০২৩, শনিবার, ১২:৫৩

ফাল্গুনেই পানিশূন্য চলনবিলের ১৬ নদী

শাহজাহান, তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ) : ‘আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে, বৈশাখ মাসে তার হাঁটু জল থাকে।’ সেই বৈশাখ আসতে এখনো প্রায় দেড় মাস বাকি। অথচ এখন ফাল্গুন মাসেই সিরাজগঞ্জ নাটোর পাবনা জেলার চলনবিলের ওপর দিয়ে প্রবাহিত ২০টি নদ-নদীর মধ্যে ১৬টি শুকিয়ে গেছে। এসব নদীর বুকে চাষ হচ্ছে ধান, সবজিসহ নানা ফসল। নদীর ওপর নির্ভরশীল প্রায় ১০ হাজার মাঝিমাল্লা ও ১৫ হাজার জেলে বেকার হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

জানা যায়, ১৯৬০ এর দশকে পাবনা জেলার অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন নৌরুটে লঞ্চ ও নৌকা চলাচল করত। সরকারি পর্যায়ে জেলার নদীগুলোর নাব্য ও পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন সম্পর্কে একটা অদ্ভুত উদাসীন মনোভাব পোষণে আজ বিপর্যন্ত নৌপথ। বর্ষাকালে পাবনার পাট, মাছ, গুড় ও গবাদিপশুসহ বিভিন্ন পণ্য এখনো ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে বেড়া ডাকবাংলা ঘাট, নাকালিয়া বাজার ও কাজীরহাট ঘাট থেকে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়। কিন্তু অভ্যন্তরীণ নৌপথের নাব্য রক্ষা ও উন্নয়নে বাঘাবাড়ীর ভাটিতে হুড়াসাগর ও যমুনা নদী ছাড়া আর কোথাও ড্রেজিং না করায় নৌপথ কমতে কমতে তলানিতে এসে ঠেকেছে।

নদীপথে যাতায়াত আগের মতো এখনো সুলভ। প্রতি লিটার জ্বালানিতে নৌপথে ২১৭ টন মালামাল এক কিলোমিটার পথ পরিবহন করা যায়। অথচ সড়ক পথে ডিজেল চালিত ট্রাকে এক লিটার জ্বালানিতে এক কিলোমিটার বহন করা যায় মাত্র এক টন মালামাল। জেলায় সারা বছর নৌপথ চালুর জরিপ করা হয় না। ১২ মাস পানি থাকে এমন নদী পদ্মা ও যমুনাতেও বিশাল বিশাল চর জেগে ওঠায় ঝুঁকি নিয়ে চলছে মালবাহী জাহাজ।

পূর্ব প্রান্তে যমুনা নদী সোয়া শ’ কিলোমিটার সীমান্ত রচনা করে পাবনা জেলাকে মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইল ও ময়মনসিংহ জেলা থেকে আলাদা করেছে। ফাল্গুন-চৈত্র মাসেই যমুনায় বিশাল বিশাল চর ও বালিয়াড়ি জেগে উঠেছে। নদীর স্থানে স্থানে ড্রেজিং করে কোনোরকমে নৌপথ চালু রাখা হচ্ছে। সারা বছর এ নদী দিয়ে বড় মালবাহী জাহাজ, লঞ্চ ও নৌকা চলাচল করে। যমুনা নদী দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ নৌপথ। ইছামতির ৩০ কিলোমিটার পথ পরিত্যক্ত হয়ে আছে। আগে বেড়া থেকে ভাঙ্গুড়ার বড়াল সেতু পর্যন্ত লঞ্চ সার্ভিস চালু ছিল। সেটি বন্ধ হয়ে গেলেও টিকে আছে কেবল কাজীরহাট-পাটুরিয়া সার্ভিস। জেলার বড়াল, গুমানী ও চন্দ্রাবতীতে বর্ষাকালে মালবাহী নৌকা চলাচল করে। আর ভরাট হয়ে গেছে আত্রাই নদী।

পাবনা জেলার দক্ষিণ পশ্চিম সীমানায় পদ্মা নদীর ৭৫ কিলোমিটার, পূর্ব দিকে যমুনা নদীর ২০ কিলোমিটার, উত্তর দিকে হুড়াসাগর নদের আট কিলোমিটার এবং বড়াল নদীর ২৫ কিলোমিটার নদীপথ কোনোমতে টিকে আছে। সামান্য নৌপথ রয়েছে গুমানী নদীতে। সুতিখালির পাঁচ কিলোমিটার নৌপথ বন্ধ হয়ে গেছে। রতœাই, আত্রাই, চিকনাই, চন্দ্রাবতী, কাগেশ্বরী, বাদাই ও ইছামতি নদীতে বর্ষাকালে মাছ চাষ এবং শুষ্ক মৌসুমে ফসলের আবাদ হয়ে থাকে। জেলা প্রশাসন এসব নদী ইজারা দিয়ে থাকে। বিলুপ্ত হয়ে গেছে রুকনাই, বারনাই, ট্যাপাগাড়ী, গোহালা, শালিকা, শুঁটকিদহ ও ভাঙ্গুড়ার ইছামতি নদী। ইছামতি নদীতে ৫০ কিলোমিটার নৌপথ ছিল। চিকনাই ৩৮ কিলোমিটার ও আত্রাই ৩০ কিলোমিটার। এখন এসব নৌপথ বন্ধ হয়ে গেছে।

পদ্মা নদী পাবনায় প্রায় ১০০ কিলোমিটার দক্ষিণ সীমান্তজুড়ে প্রবাহিত। এ নদীতে আগে স্টিমার, মালবাহী বড় বড় নৌকা যাতায়াত করত। জেলার বিরাট এলাকা বছরের বেশির ভাগ সময় জলমগ্ন থাকত। পানির স্তর কমে যাওয়ায় এ নদীতে লঞ্চ ও বড় বড় নৌকা চলাচল করে না। এখন কেবল বর্ষাকালে চাটমোহর, ফরিদপুর ও ভাঙ্গুড়া এলাকায় পণ্যবাহী পানসি, কোশা ও ডিঙ্গি নৌকা চলাচল করে। শুষ্ক মৌসুমে নদীপথে পণ্য আমদানি-রফতানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীদের সড়কপথে পণ্য পরিবহনে অনেক বেশি গচ্চা যাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

https://dailysangram.com/post/518322