৩ মার্চ ২০২৩, শুক্রবার, ১১:৪২

ভোট কেন্দ্রে কমছে উপস্থিতি

হালনাগাদে যুক্ত হয়েছেন ৮০ লাখ ৭৩ হাজার ৫৫৯ নতুন মুখ

হালনাগাদ তালিকায় যুক্ত হয়েছে ৮০ লাখ ৭৩ হাজার ৫৫৯ নতুন ভোটার। এ নিয়ে দেশে মোট ভোটার সংখ্যা দাঁড়াল ১১ কোটি ৯১ লাখ ৫১ হাজার ৪৪০ জনে। এরাই আগামী নির্বাচনে সরকার গঠনে রায় দেবেন।

এবার হালনাগাদে ভোটার বৃদ্ধির হার ৫.১৮ শতাংশ। জাতীয় নির্বাচনের আগে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম এটাই শেষ। এভাবে প্রতিবছর তালিকায় নতুন মুখ যুক্ত হলেও নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ও রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ কমছে। নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের মধ্যে অনাস্থাও বাড়ছে। এর সঙ্গে নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার নিয়েও বিতর্ক তৈরি হয়েছে।

ভোটার দিবসে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের বক্তব্যেও নির্বাচনে অনাস্থার বিষয়টি উঠে আসে। মানুষের আস্থা ফেরানোর বিষয়েও তিনি সংশ্লিষ্টদের তাগিদ দেন। তবে নির্বাচনে সব দল ও ভোটারকে নিয়ে আসার বিষয়ে নির্বাচন কমিশন কোনো উদ্যোগ নেবে না বলেও জানান তিনি।

বিষয়টি রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর ছেড়ে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। গতকাল ভোটার দিবসে এ বিষয়ে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, নির্বাচনে সব দলকে আনতে ইসি কোনো উদ্যোগ নেবে না।

তিনি বলেন, সব রাজনৈতিক দলকে বলব, আপনারা যে কোনো প্রকারেই হোক, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুন। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে, প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ভোটকেন্দ্রেগুলোতে ভারসাম্য সৃষ্টি করুন।

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত অন্যান্য নির্বাচনসহ জাতীয় সংসদের উপনির্বাচনগুলোতে দেখা গেছে ভোটার উপস্থিতি কমেছে। জাতীয় সংসদের সর্বশেষ ১০টি আসনের উপনির্বাচনে গড়ে ভোট পড়ার হার ৩০ শতাংশ। ওইসব নির্বাচনে আওয়ামী লীগসহ ১০টি রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করে আসছে। যদিও কমিশন নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৪০টি।

বিএনপির সংসদ সদস্যরা পদত্যাগ করায় যে ছয়টি আসনে ভোট হয়েছে, সেখানে গড় ভোট পড়ার হার ২৮.৬৪ শতাংশ। এ ছয়টি নির্বাচনে ৪০ প্রার্থীর ২৬ জনই জামানত হারিয়েছেন। তবে রংপুর সিটি করপোরেশনসহ স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বেশি ছিল।

ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ার বিষয়ে গতকাল সিইসি বলেন, আমরা যেটা অনুমান করেছি, বাস্তবতার নিরিখে ভোট যখন ব্যাপকভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হয়, তখন ভোটার উপস্থিতি বেশি থাকে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে (উপনির্বাচনে) ভোটার উপস্থিতি কিছুটা কম হয়েছে কারণ সেখানে সময় বাকি আছে মাত্র ১০ মাস। আর সত্যিকার অর্থে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হয়নি।

তিনি বলেন, বিভিন্ন কারণেই ভোটার উপস্থিতি কম হতে পারে। আবহাওয়াগত কারণ হতে পারে, দুর্যোগের কারণে, শীতের কারণে কম হতে পারে। কিন্তু যেটা গুরুত্বপূর্ণ, সেটা হলো ভোটাররা এসেছেন কিনা তাদের বাধা দেওয়া হয়েছে কিনা তারা ভোট দিতে পেরেছেন কিনা। সিইসি বলেন, আপনারা ইউনিয়ন কাউন্সিলের ভোট দেখেছেন সেখানে কিন্তু উপস্থিতি সন্তোষজনক ছিল এবং ইভিএমে হয়েছে। আমরা আশাকরি আগামীতে ভোট প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হবে, সেখানে উপস্থিতি যথার্থ হবে।

জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার যুগান্তরকে বলেন, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে যে প্রক্রিয়ায় ভোটগ্রহণ হয়েছে তা নির্বাচন বলা যাবে না। এ দুটি নির্বাচনের নামে প্রহসন হয়েছে। মানুষ মনে করে তাদের রায়ের প্রতিফলন হচ্ছে না।

তিনি বলেন, নির্বাচন মানে হচ্ছে যোগ্য বিকল্প প্রার্থী বেছে নেওয়ার সুযোগ থাকতে হবে। এসব নির্বাচনে মানুষ সেই সুযোগ পাননি। এমন অনেক কারণে মানুষ ভোটারবিমুখ হয়ে যাচ্ছেন। কেন্দ্রে যাওয়ার আগ্রহ হারাচ্ছেন।

তিনি বলেন, ইভিএম একটি নিকৃষ্ট যন্ত্র। এ মেশিনের ওপর মানুষের আস্থা নেই। যেহেতু জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়া ব্যাংকিং লেনদেনসহ অনেক কার্যক্রম চালাতে অসুবিধা হচ্ছে, তাই মানুষ ভোটার হচ্ছেন।

এদিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে গতকাল হালনাগাদ ভোটার তালিকা প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। এতে জানানো হয়, বর্তমানে দেশে ভোটার সংখ্যা ১১ কোটি ৯১ লাখ ৫১ হাজার ৪৪০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৬ কোটি ৪ লাখ ৪৫ হাজার ৭২৪ জন, আর নারী ৫ কোটি ৮৭ লাখ ৪ হাজার ৮৭৯ জন।

এ ছাড়া তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন ৮৩৭ জন। এবার হালনাগাদে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন ৮০ লাখ ৭৩ হাজার ৫৫৯ জন ভোটার; যার মধ্যে পুরুষ ৪১ লাখ ৩৫ হাজার ৬৭ জন, মহিলা ৩৯ লাখ ৩৮ হাজার ১৯ জন ও হিজড়া ৩৮৩ জন। তবে মারা গেছেন ও দুইবার ভোটার হয়েছেন এমন ২২ লাখ ৯ হাজার ১২৯ জনের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। মৃতদের নাম বাদ দেওয়ার পর ভোটার সংখ্যা ৫৮ লাখ ৬৪ হাজার ৪৩০ জন।

ইসি সূত্র জানায়, ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়নের পর ২০০৭-২০০৮ সালে ভোটার ছিল প্রায় ৮ কোটি ১০ লাখ। ২০০৯-২০১০ সালে ৪৭ লাখ ৭৫ হাজার; ২০১১-২০১২ সালে ৭০ লাখ ৭৯ হাজার; ২০১৩ সালে ১৮ লাখ ৩০ হাজার; ২০১৪ সালে ১৯ লাখ ৬৮ হাজার ভোটার বাড়ে।

এছাড়া ২০১৫-২০১৬ সালে ১৬ লাখ ৮ হাজার; ২০১৭ সালে ১১ লাখ ৪৪ হাজার; ২০১৮ সালে ৪৩ লাখ ২০ হাজার; ২০১৯-২০ সালে ৫৩ লাখ ৬৬ হাজার; ২০২১ সালে ১৪ লাখ ৬৫ হাজার এবং ২০২২ সালে ১৫ লাখ ৬৬ হাজার ভোটার বেড়েছে। প্রতিবছর ২ মার্চ হালনাগাদ ভোটার তালিকা প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। ২০২২ সালের ২ মার্চ ভোটার ছিল ১১ কোটি ৩২ লাখ ৮৭ হাজার ১০ জন। গতকাল প্রকাশিত তালিকায় তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ কোটি ৯১ লাখ ৫১ হাজার ৪৪০ জনে।

 

https://www.jugantor.com/todays-paper/first-page/650714