৩ মার্চ ২০২৩, শুক্রবার, ১১:৩৯

নিকলী থানায় একই কক্ষে নারী ও পুরুষ আটকে রাখার ঘটনায় তোলপাড়

কিশোরগঞ্জের নিকলী থানায় সম্প্রতি এক নারীকে আটক করে থানার নারী ও শিশু প্রতিবন্ধী ডেস্কে রেখে সেখানে জুয়া অপরাধী পাঁচ পুরুষকে এনে বাইরে দিয়ে তালা লাগিয়ে দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ওই নারী ভয়ে কাঁপতে থাকেন। একপর্যায়ে তিনি কান্না শুরু করেন।

ওই ডেস্কে পুরুষদের একের পর এক সিগারেট ধরানোর ধোঁয়ায় ওই নারীর এক সময় দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। নিকলী থানার ওসির এরকম কাণ্ডে সচেতন মহলে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ডেস্ক হাজতে নারীর সাথে পুরুষদের এভাবে রাখার দুটি ভিডিও ক্লিপ ইলেকট্রনিক ডিভাইসের মাধ্যমে বিভিন্ন জনের কাছে ছড়িয়ে পড়েছে।

জানা গেছে, ওসির প্রতি বিরক্ত হয়ে ওই ভিডিও ধারণ করেন থানার এক অধস্তন পুলিশ কর্মকর্তা। এরকম একটি ভিডিও ক্লিপ এসেছে নয়া দিগন্তের হাতে। এতে দেখা গেছে, ‘নারী শিশু ও প্রতিবন্ধী সার্ভিস ডেস্ক, নিকলী থানা’ লেখা তালাবদ্ধ একটি কক্ষের এক কোণে জড়সড় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এক নারী। পাশে কয়েকজন পুরুষ। কক্ষে পুরুষ থাকায় ওই নারী বাইরে বের হওয়ার আকুতি জানাচ্ছেন। এ সময় এক নারী পুলিশ সদস্য হাজতি নারীকে ধমকাতে থাকেন এবং অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেন।

নিকলী থানার কয়েক পুলিশ সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বাড়ির সীমানা নিয়ে বিরোধের জেরে মারামারির ঘটনায় গত ২০ ফেব্রুয়ারি ওই নারীকে ওসির নির্দেশে আটক করা হয়। সকাল ১০টায় তাকে নারী শিশু ও প্রতিবন্ধী ডেস্কে তালাবদ্ধ করা হয়। একই দিনে দুপুর ১২টার দিকে কারপাশা গ্রাম থেকে ৫ জুয়াড়িকে ধরে এনে নারী শিশু ও প্রতিবন্ধী ডেস্কে ওই নারীর সাথে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়।

গ্রেফতারকৃত মহিলার পরিবারের একাধিক সদস্যও এ তথ্য প্রমাণ নিশ্চিত করেন। এ ছাড়া সরেজমিন গেলে গ্রেফতারকৃত নারী ক্ষোভের ভাষায় বলেন, ‘আমাকে একটি মামলার আসামি দিয়ে ধরে নিয়ে তাস খেলার অভিযোগে ধরে আনা আসামিদের সাথে একই রুমে বন্দী করে রাখেন ওসি। পুরুষ আসামিদের বিড়ি ও সিগারেটের গন্ধে আমাকে শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় অস্বস্তিতে কাটাতে হয়েছে ২ ঘণ্টার চেয়ে বেশি সময়। আমার তখন ভয় করছিল। অন্যরুমে নেয়ার কথা বলা হলেও আমার কোনো কথায় পুলিশ গুরুত্ব দেয়নি। অবশেষে চুরির অপরাধে আরেকজন নারীকে পুলিশ থানায় ধরে নিয়ে এলে তখন আমাকে অন্য একটি হাজত কক্ষে সরিয়ে নিয়ে ওই নারীর সাথে রাখে। পরদিন দুপুর ১২টার পরে আমাকে কিশোরগঞ্জ কারাগারে চালান করে দেন। তিন দিন পরে আমি আদালত থেকে ছাড়া পেয়ে বাড়িতে আসি।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, এর আগেও নিকলী থানায় নারী শিশু ও প্রতিবন্ধী ডেস্কে একাধিক পুরুষকে ধরে নিয়ে আটকে রাখার ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া নিকলীর ওসির বিরুদ্ধে গ্রেফতার-বাণিজ্যসহ সাধারণ মানুষকে হয়রানি ও ঘুষ নেয়ার একাধিক অভিযোগ রয়েছে।

এ ব্যাপারে নিকলী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কারার সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘থানায় নারী পুরুষ একসাথে রাখার এই ধরনের কোনো নিয়ম থাকতে পারে না। এ ছাড়া ডেস্ক তো সেবা দেয়ার জন্য সেখানে নারী-পুরুষদের আটকে রাখা তো আরো অন্যায়।

নিকলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আইনজীবী আসাদুল হক লিটন বলেন, নারী পুরুষ একসাথে আটক রাখার কেনো বিধান নেই। সেটা হাজতেই হোক আর হাজতের বাইরেই হোক। এটা সম্পূর্ণ আইনবিরোধী কাজ।’ এ বিষয়ে কিশোরগঞ্জ-৫ (নিকলী-বাজিতপুর) আসনের সংসদ সদস্য মো: আফজাল হোসেন বলেন, ‘বিষয়টির আমি খোঁজখবর নিচ্ছি।’

অভিযোগ সম্পর্কে নিকলী থানার ওসি মোহাম্মদ মনসুর আলী আরিফ বলেন, ‘নারীর সাথে পুরুষদেরকে সার্ভিস ডেস্কে একসাথে আটকে রেখেছি এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট কথা। আসল কথা হলো ৫ জুয়াড়িকে ধরে আনার পর তাদেরকে ডেস্কে ঢুকানোর সময় ওই নারীকে আমরা সাথে সাথে বের করে নিয়ে এসেছি।’

নারী শিশু ও প্রতিবন্ধী সার্ভিস ডেস্ক হাজত হিসেবে ব্যবহার করা যায় কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, ‘আসামিদের শরীর তল্লাশির জন্য ডেস্ক রুমটি মাঝেমধ্যে ব্যবহার করি।’

এ বিষয়ে কিশোরগঞ্জ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ পিপিএম (বার) বলেন, পুরো বিষয়টা জেনে আমি আপনাদের সাথে কথা বলতে চাই, কারণ এই বিষয়টা আমি জানি না, এই বিষয়টা কেউ আমাকে জানায় নাই। যদি ঘটনার সত্যতা থাকে, কোনো আইনের বা বিধির ব্যত্যয় যদি ঘটে থাকে, এখানে ছাড় পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সেটা থানার ওসি হোক সার্কেল এসপি হোক, যেই হোক।’

প্রসঙ্গত ডিএমপি নিউজ সূত্রে জানা গেছে, মুজিববর্ষে মানবিক উদ্যোগ হিসেবে দেশের ৬৫৯টি থানায় নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী সার্ভিস ডেস্ক চালু করা হয়।

গত বছরের ১০ এপ্রিল সকালে গণভবন থেকে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স ও দেশের অন্যান্য থানায় ভার্চুয়ালি যুক্ত থেকে প্রধানমন্ত্রী নারী শিশু প্রতিবন্ধী ও বয়স্কদের আইনি সেবায় সারা দেশে এই ডেস্ক সেবা উদ্বোধন করেন।

ডেস্ক পরিচালনার জন্য একজন সাব-ইন্সপেক্টরের নেতৃত্বে প্রশিক্ষিত নারী পুলিশ সদস্যদের পদায়ন করা হয়েছে। ডেস্ক কর্মকর্তা থানায় আগত নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের সমস্যা মনোযোগ সহকারে শুনে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নিশ্চিত করার ক

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/731667