২ মার্চ ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ৩:৩৪

প্রাথমিকে বৃত্তি ভুলের দায় কার?

সমালোচনা যেন পিছু ছাড়ছে না শিক্ষা বিভাগের। একের পর এক বিতর্কিত ইস্যু সামনে আসছে। সর্বশেষ কোমলমতি শিক্ষার্থীদের বৃত্তির ফলাফল নিয়ে হয়েছে অপ্রত্যাশিত ঘটনা। ঘটা করে ফলাফল ঘোষণার ৪ ঘণ্টা পর স্থগিত করা হয়েছে প্রাথমিকের বৃত্তির ফল। এতে করে মন ভেঙেছে শিশুদের। এ ছাড়া বছরের শুরু থেকেই বিনামূল্যের পাঠ্য বই নিয়ে চলছে বিতর্ক। সামনে এসেছে পাঠ্য বইয়ে ভুল ও চৌর্যবৃত্তিসহ নানা অসঙ্গতি। বিতর্কের মুখে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) প্রত্যাহার করেছে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির দু’টি বই। সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তিনটি বইয়ের। অন্যদিকে শিক্ষকদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ছাড়াই শুরু হয়েছে নতুন কারিকুলামে পাঠদান।
গত মঙ্গলবার দুপুর ১টার দিকে ঘটা করে প্রাথমিকের বৃত্তির ফলাফল প্রকাশ করা হয়।

প্রকাশিত ফলাফলে জানানো হয়, ৮২ হাজার ৩৮৩ জন শিক্ষার্থী বৃত্তি পেয়েছে। এরমধ্যে ট‍্যালেন্টপুলে ৩৩ হাজার এবং সাধারণ কোটায় পেয়েছে ৪৯ হাজার ৩৮৩ জন। কিন্তু ফল ঘোষণার পর সামনে আসতে থাকে নানা অসঙ্গতি। একপর্যায়ে বিকাল ৫টার দিকে ওয়েবসাইট থেকে সরিয়ে ফেলা হয় বৃত্তির ফলাফল। এ ছাড়া ই-মেইল বার্তার মাধ্যমে বিষয়টি জানিয়ে দেয়া হয় জেলা-উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের। রাত ৮টার দিকে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো হয়, ‘কারিগরি ত্রুটির জন্য প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষার প্রকাশিত ফলাফল পুনঃযাচাইয়ের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করায় প্রকাশিত ফলাফল আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। আগামীকাল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে ফলাফল প্রকাশ করা হবে।’ এ ছাড়াও বৃত্তি পরীক্ষার ফলাফলের ত্রুটি খতিয়ে দেখতে ৩ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (প্রশাসন) নূরজাহান বেগমকে আহ্বায়ক করে এই কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অপর সদস্যরা হলেন- প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (আইএমডি) এবং মন্ত্রণালয়ের সিস্টেম এনালিস্ট। কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে।

এমনিতেই বছরের শেষের দিকে এসে বৃত্তি পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে তর্ক-বিতর্ক কম হয়নি। বিবৃতি দিয়ে বিশিষ্টজনেরা কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মধ্যে এমন প্রতিযোগিতার আয়োজন না করতে অনুরোধও করেছিলেন। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ বৃত্তি পরীক্ষার আয়োজন করে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রফেসর ড. অহিদুজ্জামান মানবজমিনকে বলেন, বৃত্তির ফলাফলে ভুল থাকা প্রত্যাশিত নয়। তবে টেকনিক্যাল কারণে ভুল হতে পারে। আমার পরামর্শ হচ্ছে যারা বৃত্তি পেয়েছে তাদের যেন সংশোধিত ফলাফলে বাদ দেয়া না হয়। আর যারা বাদ পড়েছে তাদের যেন অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কারণ যারা ইতিমধ্যে বৃত্তি পেয়েছে বলে ঘোষণা করা হয়েছে বাদ দেয়া হলে তাদের মন ভেঙে যাবে। তাই তাদের বাদ না দিয়েই ফলাফল ঘোষণা করা উচিত হবে। এ ছাড়া পাঠ্য বইয়ে ভুলসহ অন্যান্য বিষয়ে তিনি বলেন, মানুষ হিসেবে আমাদের ভুল হতে পারে। তবে ভুল যেন না হয় সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।

এদিকে বছরের শুরুতে সরকার শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেয় বিনামূল্যের পাঠ্য বই। কিন্তু সব শিক্ষার্থী বই পায়নি। যারা পেয়েছিল তারাও সব পায়নি। এমনকি এখনো কিছু এলাকায় বই না পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া নতুন পাঠ্য বইয়ে রয়েছে ইতিহাসের বিকৃতি। তথ্য ও পরিসংখ্যানগত বিভ্রাট। বানান ভুল। চৌর্যবৃত্তি। গুগল ট্রান্সলেটরের ব্যবহার। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পিতার পেশা নিয়ে ‘তাচ্ছিল্য’। কিংবা নাম থেকে বংশীয় পদবি ‘শেখ’ বাদ দেয়া। নতুন শিক্ষাক্রমে উপেক্ষা করা হয়েছে মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত। বিষয়টি নিয়ে সরকারের উচ্চমহলেও অস্বস্তি কাজ করেছে। সবশেষ এ বিষয়ে গঠন করা হয়েছে দু’টি কমিটি। একটিকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে অপরাধীদের খুঁজে বের করার। অন্যটি পাঠ্য বইয়ে সংশোধন আনার পরামর্শ দেবেন। এ ছাড়া বিতর্কের মুখে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির দু’টি বই প্রত্যাহার করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। বই দু’টি হলো- ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির জন্য প্রণীত ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের ‘অনুসন্ধানী পাঠ’। এ ছাড়া উক্ত শ্রেণিদ্বয়ের জন্য প্রণীত ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের ‘অনুশীলনী পাঠ’ এবং ষষ্ঠ শ্রেণির বিজ্ঞান ‘অনুসন্ধানী পাঠ’ পাঠ্যপুস্তকসমূহের কতিপয় অধ্যায়ের প্রয়োজনীয় সংশোধন আনা হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। অন্যদিকে নির্দিষ্ট কয়েকটি শ্রেণিতে নতুন কারিকুলামে বছরের শুরু থেকে পাঠদান শুরু হয়। পাঠদানের পূর্বে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের অনলাইন ও অফলাইনে প্রশিক্ষণ নিয়েও চলেছে বেশ আলোচনা সমালোচনা।

https://mzamin.com/news.php?news=44914