২ মার্চ ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ৩:৩০

মোনাজাত করায় পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কাছে ব্যাখ্যা চাইল ঢাবি প্রশাসন

সহকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে মোনাজাত করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বাহালুল হক চৌধুরীছবি: সংগৃহীত

সহকর্মীর স্ত্রীর জানাজায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান ও দুইজন সহ–উপাচার্য অংশ না নেওয়ার অভিযোগ তুলে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে গিয়ে মোনাজাত করেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বাহালুল হক চৌধুরী। এই ঘটনার লিখিত ব্যাখ্যা জানতে চেয়ে বাহালুলকে চিঠি দিয়েছে ঢাবি প্রশাসন।

বুধবার বাহালুল হক চৌধুরীকে এই চিঠি দেওয়া হয়। রেজিস্ট্রার প্রবীর কুমার সরকারের সই করা চিঠিতে বাহালুলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের অসঙ্গতিপূর্ণ বক্তব্য দেওয়া ও মোনাজাত পরিচালনার অভিযোগ তুলে বলা হয়েছে, এ ধরনের আচরণ খুবই অনাকাঙ্ক্ষিত।

গত ৯ ফেব্রুয়ারি দুপুরের দিকে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের ৪০ থেকে ৫০ জন সহকর্মীকে সঙ্গে নিয়ে উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামানে বাসভবন প্রাঙ্গণে মোনাজাত করেন বাহালুল। একপর্যায়ে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে বক্তব্য দেন তিনি। এ সময় বাহালুল বলেন, ‘ভিসি-প্রোভিসি কেউ জানাজায় যাননি। ও আল্লাহ, তুমি দেখো। আল্লাহ গো, এই এতিম বাচ্চা নিয়ে আমি আসছি। কিচ্ছু চাই না, কোনো দাবি-দাওয়া নাই। জানাজায় আসার দরকার নাই, আমি আপনার (উপাচার্য) চাকরি করব না।’

এ ঘটনার বিষয়ে ওই সময় উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামানে বলেছিলেন, ‘মোনাজাত করার বিষয়টি আমি শুনেছি। ওই সময় আমি নামাজে ছিলাম। তাঁরা দোয়া-টোয়া করে চলে গেছেন। তিনি (বাহালুল) মানসিক অস্থিরতার মধ্যে আছেন। তাঁর একটু রেস্টের (বিশ্রাম) দরকার কি না, সেটা পরিবার দেখছে।’

ওই ঘটনার পর থেকে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বাহালুল ছুটিতে আছেন। বাহালুলের জায়গায় এখন অন্য একজন দায়িত্ব পালন করছেন। এখন বাহালুলকে দেওয়া চিঠিতে বলা হয়েছে, এ ধরনের আচরণ খুবই অনাকাঙ্ক্ষিত। বিষয়টি সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও চলে এসেছে। কেন এবং কী উদ্দেশ্যে বাহালুল এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটিয়েছেন, তা চিঠি দেওয়ার তারিখ থেকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে লিখিতভাবে জবাব দিতে বলা হয়েছে।

পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কয়েক দিন আগে সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলামের স্ত্রী মারা যান। তাঁর জানাজায় উপাচার্য ও দুই সহ-উপাচার্য অংশ নেননি। এর প্রতিবাদ জানাতে সহকর্মীদের নিয়ে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে যান পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক। তবে উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করেননি। বাসভবনের সামনে মনিরুলের স্ত্রীর আত্মার মাগফিরাতের জন্য দোয়া করে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকসহ সবাই চলে যান।

গত বছরের শেষ দিকে ঢাবির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে অস্বচ্ছতা ও অনিয়মের অভিযোগ তুলে কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। তখন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি দেয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ওই চিঠির জবাবও দেওয়া হয়।

সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে ঢাবির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের কর্মকাণ্ডে অনিয়মের অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্প্রচার করা হয়। এতে সামাজিকভাবে হেয় হওয়ায় বাহালুল হক মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন বলে জানান তাঁর কার্যালয়ের একাধিক কর্মকর্তা।

https://www.prothomalo.com/bangladesh/capital/r6nfyz2uy6