১ মার্চ ২০২৩, বুধবার, ৮:০৯

বিদ্যুতের দাম বাড়ল দুই মাসে তিনবার

দুই মাসের মধ্যে গ্রাহক পর্যায়ে তিনবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। এবার নির্বাহী আদেশে গ্রাহক পর্যায়ে গড়ে ৫ শতাংশ বাড়িয়ে বিদ্যুতের নতুন মূল্যহার নির্ধারণ করেছে সরকার।

গতকাল মঙ্গলবার রাতে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। এই দাম আজ বুধবার থেকে কার্যকর হবে।

এতে গ্রাহক পর্যায়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম গড়ে আট টাকা ২৫ পয়সা হবে, যা আগে গড়ে সাত টাকা ৮৬ পয়সা ছিল। নতুন করে গড়ে ইউনিটপ্রতি দাম বাড়ল ৩৯ পয়সা।

বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, যেসব গ্রাহক মাসে ২০১ থেকে ৩০০ ইউনিট ব্যবহার করছে, নতুন করে ৫ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধিতে তার খরচ মাসে বাড়বে ৬৬ থেকে ৯৯ টাকা। এখন প্রতি ইউনিটে বিল দিতে হবে ছয় টাকা ৯৫ পয়সা, যা আগে দেওয়া হতো ছয় টাকা ৬২ পয়সা। এভাবে বিদ্যুতের অন্যান্য গ্রাহকের ব্যয়ও আনুপাতিক হারে বাড়বে।

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত ১২ জানুয়ারি এবং সর্বশেষ ৩০ জানুয়ারি গ্রাহক পর্যায়ে গড়ে ৫ শতাংশ করে ১০ শতাংশ দাম বাড়ানো হয়। একই সঙ্গে পাইকারিতে গড়ে ৮ শতাংশ করে দাম বাড়ানো হয়, যার দর যথাক্রমে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হয়েছে।

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) গত ২১ নভেম্বর বিদ্যুতের পাইকারি দাম ১৯.৯২ শতাংশ বাড়িয়েছিল, যা গত ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হয়।

গত ১৮ জানুয়ারি শিল্প, বাণিজ্যিক ও বিদ্যুৎ উৎপাদন খাতে গ্যাসের দাম প্রতি ঘনমিটারে সর্বোচ্চ ১৭৯ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়। গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির দরও ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হয়। গত দুই মাসের মধ্যে চার দফায় গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ঘটনা ঘটল, যা দেশের ইতিহাসে বিরল। আগে কখনো এত কম সময়ের মধ্যে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়েনি।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সাধারণ মানুষ এমনিতেই মূল্যস্ফীতির চাপে রয়েছে, এর মধ্যে গ্রাহক পর্যায়ে এক মাসে দুই দফায় বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধিতে তাদের জীবন আরো দুর্বিষহ হয়ে উঠবে। গ্যাস ও বিদ্যুতের লাগাতার এই মূল্যবৃদ্ধি শিল্প-কারখানার উৎপাদনে বড় ধরনের বিরূপ প্রভাব পড়বে। ফলে আরেক দফা বাড়তে যাচ্ছে মূল্যস্ফীতি।

পাইকারি পর্যায়ে বেশি হারে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর কারণে গ্রাহক পর্যায়ে সরবরাহকারী কম্পানিগুলো আবার মূল্যবৃদ্ধির দাবি তুলতে পারে। খুচরায় দাম আরো বাড়ানো হলে সাধারণ মানুষের ওপর চাপ আরো বাড়বে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সরকার বাজেট সহায়তা হিসেবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে ঋণ নিচ্ছে। সেখানে আইএমএফ ভর্তুকি সংস্কারের জন্য বলেছে। জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে সরকার সবচেয়ে বেশি ভর্তুকি দেয়। সেই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়।

অর্থনীতিবিদ এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে গতকাল বলেন, ‘সরকার গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে ভর্তুকির মাত্রা কমানোর চেষ্টা করছে, কিন্তু এখন মূল্যস্ফীতি অনেকটাই উচ্চ পর্যায়ে আছে, সামনে মূল্যস্ফীতি আরো বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ এভাবে লাগাতার মূল্যবৃদ্ধিতে পণ্যের উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাবে। মূলত বর্তমানে সরকারের রাজস্ব আহরণের গতি সন্তোষজনক নয়, যে কারণে সরকার গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে রাজস্ব বাড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছে।’ সবচেয়ে কম বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী লাইফলাইন (৫০ ইউনিটের কম ব্যবহারকারী) গ্রাহকদের বিদ্যুতের দাম সর্বশেষ মূল্যবৃদ্ধির সময় বাড়িয়ে ৪.১৪ টাকা করা হয়েছিল। এবার আরো বাড়িয়ে ৪.৩৫ টাকা করা হয়েছে। প্রথম ধাপে ৭৫ ইউনিট ব্যবহারকারীর বিদ্যমান দর ৪.৬২ থেকে বাড়িয়ে ৪.৮৫ টাকা, দ্বিতীয় ধাপে ৭৬ থেকে ২০০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যমান দর ৬.৩১ থেকে বাড়িয়ে ৬.৬৩ টাকা, ২০১ থেকে ৩০০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যমান দর ৬.৬২ থেকে বাড়িয়ে ৬.৯৫ টাকা, ৩০১ থেকে ৪০০ ইউনিটের বিদ্যমান দর ৬.৯৯ থেকে বাড়িয়ে ৭.৩৪ টাকা, ৪০১ থেকে ৬০০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যমান দর ১০.৯৬ থেকে বাড়িয়ে ১১.৫১ টাকা, সর্বশেষ ধাপ ৬০০ ইউনিটের ঊর্ধ্বে ব্যবহারকারীদের বিদ্যমান দর ১২.৬৩ থেকে বাড়িয়ে ১৩.২৬ টাকা করা হয়েছে।

https://www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2023/03/01/1256790