১ মার্চ ২০২৩, বুধবার, ৮:০৬

৭৭ মিশনের ২০টিতে ই-পাসপোর্ট, আছে ভোগান্তি

বিদেশের ৭৭টি বাংলাদেশি মিশনের মাত্র ২০টিতে চালু হয়েছে ই-পাসপোর্ট সেবা। ইতিমধ্যে উন্নত রাষ্ট্রগুলোতে এমআরপি পাসপোর্টের বদলে ই-পাসপোর্টের ব্যবহার বাড়ছে। এ অবস্থায় ই-পাসপোর্ট না থাকায় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বাংলাদেশিদের। ইউরোপের রাষ্ট্রগুলোর বিমানবন্দরে যাদের ই-পাসপোর্ট আছে তাদের আগে সেবা দেয়া হয়। আর যাদের এমআরপি তাদের সেবা দেয়া হয় পরে।

বিদেশে লাখ লাখ প্রবাসীর হাতে রয়েছে এমআরপি পাসপোর্ট। তারা ই-পাসপোর্টের জন্য মিশনগুলোতে আবেদন করে নানা ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। ২০২১ সালের ৫ই সেপ্টেম্বর জার্মানির বার্লিনে বাংলাদেশের দূতাবাসে ই-পাসপোর্টের উদ্বোধন করা হয়। এরপর থেকে ই-পাসপোর্টের জন্য মিশনগুলোতে যে হারে আবেদন পড়ছে সেই হারে ডেলিভারি হচ্ছে না। বিদেশের ২০ মিশনে ই-পাসপোর্ট উদ্বোধনের পর এখন পর্যন্ত মাত্র ২৯ হাজার ই-পাসপোর্ট ডেলিভারি দিয়েছে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর। মিশনে ই-পাসপোর্টে কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে।

বারকোডের প্রিন্টে কালি সমস্যা, সফ্‌টওয়্যার সমস্যা, ছবি তোলা, মোবাইলে আবেদন, সঠিক সময়ে আবেদন ডেলিভারি না দেয়া ও ফিঙ্গার প্রিন্টে সমস্যা ও ঢাকার থানা ভাগ হয়ে যাওয়ার কারণে ঠিকানাগত ভুল দেখানোয় প্রবাসীদের ভোগান্তি, হয়রানি দিন দিন বাড়ছে। কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা অগ্রাধিকার আকারে প্রথমে ইউরোপ ও আমেরিকা মহাদেশের দেশগুলোতে ই-পাসপোর্ট সেবা চালু করতে চান।

এ বিষয়ে ই-পাসপোর্টের প্রকল্প পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাহাদাত হোসেন খান মানবজমিনকে বলেন, ‘জার্মানিতে ই-পাসপোর্ট চালু হওয়ার পর পর্যায়ক্রমে ২০টি মিশনে চালু হয়েছে। এখন পর্যন্ত ২৯ হাজার ই-পাসপোর্ট ডেলিভারি দেয়া হয়েছে। আস্তে আস্তে অন্যান্য মিশনেও চালু হবে।

সূত্র মতে, জার্মানির বার্লিনে ই-পাসপোর্ট সেবা চালু হওয়ার পর গ্রিসে চালু করা হয় এ সেবা। এরপর মাস্কাট, আবুধাবি, দুবাই, নিউ ইয়র্ক, ওয়াশিংটন, সিঙ্গাপুর, আম্মান, সিউল, ব্যাংকক, লস অ্যানজেলেস, বাগদাদ, মালে, কাঠমান্ডু, বুখারেস্ট, কোপেনহেগেন, ভিয়েনা, হেগ ও জেনেভায় এ সেবার পরিধি বাড়ানো হয়।

৭৭টি মিশনের মধ্যে ২০টি মিশনে ইতিমধ্যে ডেলিভারি দেয়া শুরু হয়েছে। আস্তে আস্তে অন্যান্য মিশনে চালু হবে। পাসপোর্ট কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশি প্রবাসীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ই-পাসপোর্টের সঠিক নিয়ম মেনে যাতে তারা আবেদন করেন। জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনসহ আনুষঙ্গিক যে সব কাজ রয়েছে সেগুলো যাতে তারা নির্ভুলভাবে আবেদন করেন। নইলে তারা ভোগান্তির শিকার হবেন। যেহেতু সেবাটি নতুন চালু হয়েছে তাই অনেক প্রবাসী এটি বুঝতে পারছেন না। সঠিক নিয়মে সবাইকে ই-পাসপোর্ট আবেদন করলে সঠিক সময়ে ডেলিভারি দেয়া হবে।

আমীর নামে এক আমেরিকা প্রবাসী জানান, তিনি গত মাসে ই-পাসপোর্টর জন্য মিশনে আবেদন করতে যান। কিন্তু, সফ্‌টওয়্যার সমস্যার কারণে আবেদন আর করেননি। কর্তৃপক্ষ বলেছে- তাকে পরে আসতে।

ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, অনেক প্রবাসীর আবেদনে ভুল পাওয়া যাচ্ছে। এজন্য তাদের পুনরায় আবেদন করতে বলা হচ্ছে। কারণ অনেক প্রবাসী বিদেশের কাজের জন্য বয়স কমাতে চাচ্ছেন। কেউ আবার নতুন করে জন্মতারিখ ঠিক করার জন্য আবেদন করেছেন। কিন্তু, তাদের জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে তা মিল নেই। সেটি আইনগত করতে পারেন না কর্তৃপক্ষ। ওই সব গ্রাহকদের আবেদন গ্রহণ করা হচ্ছে না।

সূত্র জানায়, যারা আবেদন করছেন তাদের আরেকটি বড় ভুল দেখা দিয়েছে। ঢাকায় আগে যে ২৬টি থানা ছিল বা এখন নতুন করে যে থানা হচ্ছে সেই সব এলাকাগুলো ম্যাপ করে ভাগ করে দিয়েছে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর। বিষয়টি করা হয়েছে এজন্য যে, ওই এলাকায় পুলিশ ভেরিফিকেশনের সুবিধার জন্য।

সূত্র জানায়, অনেক আবেদনকারী ঠিকানার কারণে ই-পাসপোর্টে ডেলিভারি জট বাড়ছে। যেমন আগের কোতোয়ালি থানা ভেঙে সূত্রাপুর নামে আরেকটি থানা করা হয়েছে। এলাকা ভাগ হওয়ার কারণে কর্তৃপক্ষও আলাদা জোন করেছেন। তখন পুলিশ কোতোয়ালি গিয়ে গ্রাহকের বাসা পান না। অথচ তার বাড়ি সূত্রাপুর এলাকার মধ্যে পড়েছে।

https://mzamin.com/news.php?news=44777