২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, মঙ্গলবার, ২:০৪

শাবিতে র‌্যাগিং, টর্চার জড়িত ছাত্রলীগ কর্মীরা

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের ৬টি গ্রুপ। কোনো কমিটি নেই। এরপরও গ্রুপ-উপগ্রুপে ভাগ হয়ে ক্যাম্পাসেই রাজনীতি করছে তারা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩টি হল। এই হলগুলো ছাত্রলীগেরই নিয়ন্ত্রণে। তাদের কাছে অসহায় শিক্ষার্থীরাও। এতদিন ছাত্রলীগের এসব কার্যকলাপ ছিল আড়ালে। কিন্তু সৈয়দ মুজতবা আলী হলে গত সোমবারে র‌্যাগিংয়ের ঘটনায় ক্যাম্পাসে ফের আলোচনায় এসেছে ছাত্রলীগের বিতর্কিত কর্মকাণ্ড। হলের ভেতরে নানা কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকে তারা। এর মধ্যে র‌্যাগিংয়ের নামে ছাত্রলীগ নবীন শিক্ষার্থীদের উপর নানা নির্যাতন চালায়।

বর্তমান ভিসি প্রফেসর ফরিদ উদ্দিন আহমদ ক্যাম্পাসে যোগদানের পর ক্যাম্পাসে র‌্যাগিং হলেও এবারের মতো আলোচিত হয়নি। ফলে এবারের র‌্যাগিংয়ের ঘটনা প্রকাশ হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনও কঠোর। এরই মধ্যে ক্যাম্পাসে র‌্যাগিংয়ের ঘটনায় ৫ জনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। এরা সবাই ছাত্রলীগ কর্মী। এরা হচ্ছেন- বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মো. খলিলুর রহমানের অনুসারী মো. আল আমিন, মো. পাপন মিয়া, মো. রিয়াজ হোসেন, রসায়ন বিভাগের সভাপতি মেহেদী হাসান স্বাধীনের অনুসারী মো. আশিক হোসেন ও ছাত্রলীগ নেতা সুমন মিয়ার অনুসারী মো. আপন মিয়া। র‌্যাগিংয়ের শিকার শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন অন্তত ১৫ জন। ৫ জনকে শাস্তির আওতায় আনলেও অন্যরা ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। তারা বলেন, যে কক্ষে নিয়ে র‌্যাগিং করা হয়েছে সেটি কেবল একটি কক্ষ নয়, টর্চারসেলও। শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক উপ-গণযোগাযোগ ও উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক মো. ফারহান রুবেল ও রসায়ন বিভাগের সভাপতি মেহেদী হাসান স্বাধীন নিয়ন্ত্রণাধীণ কক্ষ হচ্ছে সৈয়দ মুজতবা আলী হলের ১১১ নম্বর রুম। ওই রুমে সোমবার ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের প্রথম বর্ষের ৯ জন নবীন শিক্ষার্থীর সঙ্গে একই বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ১৬ জন শিক্ষার্থীর পরিচয়পর্ব চলে। আর ওখানে রাতভর নতুন শিক্ষার্থীরা র‌্যাগিংয়ের শিকার হন। এমনকি শারীরিক ও মানসিকভাবে টর্চার করা হয় শিক্ষার্থীদের। ওই রাতের ঘটে যাওয়া ঘটনার কথা তুলে ধরে র‌্যাগিংয়ের শিকার হওয়া ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের এক ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, ‘আমি মুজতবা আলী হলের ১১৭নং রুমে উঠি। গত ২০শে ফেব্রুয়ারি রাতে সিনিয়র ভাইয়েরা ওই হলের ১১১নং কক্ষে আমাদের ১২-১৩ জুনিয়রকে ডাকেন। আমরা সেখানে গেলে প্রথমে আমাদের পরিচয় দিতে বলেন। পরিচয় দিলে তারা আমাদের নামের শেষে যৌন বিষয়ক শব্দ যোগ করে উচ্চারণ করতে বলেন। এ কথায় রাজি না হলে শারীরিক নির্যাতনের হুমকি দেন এবং যতক্ষণ রুমে ছিলাম পুরোটা সময় শুধু ধমক দিয়ে যাচ্ছিলেন।’ তিনি আরও জানান, ‘আমাদেরকে যৌনকর্মী সেজে দেহ প্রদর্শন ও খরিদদার ধরার দৃশ্য করতে বাধ্য করে। আমাকে দিয়ে অনেকবার ট্রেনে ৩য় লিঙ্গের মানুষের টাকা তোলারও দৃশ্যে অভিনয় করতেও জোর করে। আমি বাধ্য হয়ে এসব করি। এতে আমি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ি। তখন আমার মাথা ঘুরছিল। আমার বন্ধু একজন চিৎকার করে কান্নাও শুরু করেছিল।’ এদিকে, ঘটনার পরদিন পর্যন্ত বিপর্যস্ত ছিলেন শিক্ষার্থীরা। বুধবার এ ব্যাপারে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রক্টর বরাবর অভিযোগ দেন। অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় অভিযুক্তদের সাময়িক বহিষ্কার করেছে কর্তৃপক্ষ। তবে ওই কক্ষে পরিচয় হওয়ার কথা জানতেন না বলে জানিয়েছেন মো. ফারহান ও স্বাধীন। তারা ঘটনার সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করেন। এদিকে- এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন গঠিত ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো. খায়রুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা চিঠি পেয়েছি। চিঠি পাওয়ার পর থেকে কাজ শুরু করে দিয়েছি। ইতিমধ্যে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছি। তদন্ত শেষ হলেই রিপোর্ট জমা দেবেন।’ তিনি বলেন, ‘ওই ৫ জন না অন্যদের সম্পৃক্ততা খুঁজে পাওয়া গেলে তদন্ত রিপোর্টে জানানো হবে। আমরা ঘটনাটি খতিয়ে দেখছি বলে জানান তিনি।’

https://mzamin.com/news.php?news=44621