২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, মঙ্গলবার, ১:৩৭

তিনটি একুশের বিকৃতি বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে

-ড. মো. নূরুল আমিন

মাসদুয়েক আগে রুশ দার্শনিক ও নাট্যকার টলস্টয়ের একটি উদ্ধৃতি দিয়ে আমার ঐদিনের কলামটির সমাপ্তি টেনেছিলাম। আমি দুঃখিত, উদ্ধৃতিটির প্রাসঙ্গিকতা ও তাৎপর্য নিয়ে অনেক বিজ্ঞ পাঠক-পাঠিকা বিভ্রান্তিতে পড়েছিলেন। তাদের কেউ কেউ টেলিফোনে ও ই-মেইলে তাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন, টলস্টয়ের উদ্ধৃতির মর্মকথা ছিল- যুদ্ধে বলুন, শান্তিতে বলুন উভয় সময়ে নিরপরাধ মানুষ হত্যার সাথে আমি জড়িত রয়েছি। খুন, রাহাজানি, পরের সম্পদ আত্মসাৎ, ক্ষমতার অপব্যবহার, জুলুম-নির্যাতন, মাদকসেবন, ব্যভিচার, ধর্ষণ, সন্ত্রাস, চুরি, ডাকাতি এমন কোনো অপরাধ নেই যা আমি করিনি। কিন্তু তথাপিও আমার সমগোত্রীয়রা আমার মধ্যে অনৈতিক কিছু খুঁজে পান না। তাদের কাছে আমার চরিত্র ফুলের মতো পবিত্র। তৎকালীন ক্যাথলিক সমাজকে উদ্দেশ্য করেই তিনি কথাগুলো বলেছিলেন। আমাদের সমাজ রাষ্ট্রের মহাশয়দের কথা চিন্তা করুন, কোন অপরাধ তারা করছেন না? এর জন্য তারা কি নিন্দিত হচ্ছেন, না নন্দিত। যারা সমাজপুত হবার কথা তাদেরই আমাদের সুশীল সমাজের বড় একটি অংশ মাথায় তুলে নিয়ে নাচছে। এটা কি বৈপরীত্য নয়? এখন আজকের প্রসঙ্গে আসি।

একুশের চেতনার প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা : একুশ সংখ্যাটি আমাদের দেশে অনেকের কাছে পবিত্র। অনেকের কাছে শোকের, আনন্দের, সম্মানের ও সাফল্যের। যেমন একুশে ফেব্রুয়ারি। মায়ের ভাষার অধিকার রক্ষার জন্য যারা প্রাণ দিয়েছেন তারা অবশ্য আজকে জীবিত থাকলে মূর্ছা যেতেন। কারণ ইতিহাস বিকৃতি ও একুশের চেতনার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা। বাংলার কি তারা মান রক্ষা করতে পেরেছেন? ‘৫২ সালে আমি প্রথম শ্রেণীতে পড়তাম। পাকিস্তানী ঝা-া হাতে পূর্ব চন্দ্রপুর বোর্ড স্কুলে আমার শিক্ষক চোদ্দআনী মাস্টারের দুই পয়সার চানাবুট খেয়ে গ্রামের রাস্তা আর জমির আইল দিয়ে মিছিল করে তিন মাইল হেঁটেছি।

শুধু বাংলাভাষা রক্ষার জন্য ‘৫২-র আন্দোলন ছিল না; ভাষার সাথে এই আন্দোলন পূর্ব বাংলার মেজরিটি মুসলমানের সংস্কৃতি-তাহজিব তমদ্দুন রক্ষারও আন্দোলন ছিল। তমদ্দুন মজলিশ এর প্রধান অনুঘটক ছিল। কিন্তু এখন কি ২১শের ভাষা আন্দোলন তার স্বাভাবিক চরিত্রে আছে? নাই। তা হাইজ্যাক হয়ে ততই বিকৃত হয়েছে যে, তাকে চেনাই যায় না। পূর্ব-বাংলার মুসলিম সংস্কৃতি-পশ্চিম বাংলার মুশরিক সংস্কৃতি দখল করে নিয়েছে। বাংলা ভাষা, মাতৃভাষা হয়তো রাষ্ট্রভাষা হয়েছে, কিন্তু মানুষের জীবনাচার থেকে তা এখন নির্বাসিত। বিশ্বাস না হয়, শহর-নগরের সাইনবোর্ডগুলো দেখুন- ৯০ শতাংশই ইংরেজিতে। এই ভাষার ব্যভিচার তো চলছেই। চেতনা ব্যবসায়ীরা এর মূল চেতনাকেই ধ্বংস করে দিয়েছেন। বন্ধু-বাদ্ধবদের অনেকে অভিযোগ করেন একুশে ফেব্রুয়ারির উপর আমি কিছু লিখিনা। ভাষা ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের চেতনা সেখানে হারিয়ে ফেলেছি, লিখবো সেখানে কি?

একুশ আগস্ট মিথ্যাচারের বলি হচ্ছে : এখন একুশ আগস্ট পালিত হয় সারা দেশে। শাসক দল এই দিনটির বিশেষ তাৎপর্য খুঁজে বের করেছে। ২০০৪ সালের এই দিনে তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগের এক জনসভায় গ্রেনেড হামলা হয়েছিল। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঐ সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন। তার বক্তব্য শেষে তিনি জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু বলার সাথে সাথে গ্রেনেড হামলা হয় এবং আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভি রহমান সহ ২৪ জন লোক এতে নিহত হন, আহত হন দু‘শতাধিক। ঘটনাটি মর্মান্তিক ছিল তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এর জন্য মামলা হয়েছে। তদন্ত হয়েছে। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাদিক সামাবেশে এই গ্রেনেড হামলা ও তাকে হত্যা চেষ্টার জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া, তার পুত্র তারেক রহমানসহ বিএনপি-জামায়াতের শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে দায়ী করেছেন। তার সাথে সুর মিলিয়ে তার মন্ত্রীরাও একই অভিযোগ করছেন। এই হামলার সাথে সাথে আওয়ামী লীগ আন্তর্জাতিক তদন্ত দাবি করেছিলো। তৎকালীন সরকার এই দাবি অনুযায়ী একটি আন্তর্জাতিক তদন্তের ব্যবস্থাও করেছিলেন। এই প্রক্রিয়ায় ইন্টারপোলের তিনটি দল বাংলাদেশ সফর করেছিলেন। একই তদন্ত কাজে অংশগ্রহণের জন্য যুক্তরাষ্ট্র থেকে এফবিআই-এর একটি প্রতিনিধিদলও ঢাকা সফর করেছেন। এই তদন্ত রিপোর্টের কোথাও এই হামলার সাথে বিএনপি-জামায়াতের সম্পৃক্ততার তথ্য নেই। তৎকালীন সরকার এই ঘটনা তদন্তের জন্য এক সদস্যবিশিষ্ট একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনও গঠন করেছিলেন। এই কমিশনের তদন্ত রিপোর্টে গ্রেনেড হামলার সমস্ত দায়দায়িত্ব প্রতিবেশী একটি দেশের একটি গোয়েন্দা সংস্থার ওপর চাপিয়েছিল। রিপোর্টে বলা হয়েছিল যে, বাংলাদেশকে জঙ্গীরাষ্ট্র প্রমাণ করে মুসলিম জাতিসত্তাকে ধ্বংস করার জন্যই এই হামলাটি তারা সাজিয়েছিল। তৎকালীন সুপ্রিম কোর্ট বার সমিতি ছয় সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত দল গঠন করে বিষয়টির ওপর তদন্ত করেছিল। ড. কামাল, ড. জহির, আমীর-উল-ইসলাম, আইন উদ্দিন, আবদুল মালেক ও রোকনউদ্দিন মাহমুদ এই দলে ছিলেন। তাদের তদন্ত রিপোর্টেও বেগম জিয়ার পরিবারসহ বিএনপি-জামায়াতকে এজন্য দায়ী করা হয়নি। তাহলে প্রশ্ন উঠে প্রধানমন্ত্রী কেন বিচারাধীন একটি মামলার ব্যাপারে কথা বললেন? রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নির্মূলের জন্য? আর এটা যে আদালত অবমাননা, তা কি তিনি জানেন না? বিদ্যমান আদালত অবমাননা আইন অনুযায়ী অনেকেই একে Criminal Contempt বলে অভিহিত করছেন।

আইন অনুযায়ী এর সংজ্ঞা - “The Publication (whether by words, spoken, written or by signs or by visible mater representation or otherwise) of any matter or the doing of any other act whatsoever which (1) Scandalizes or tends to scandalize or lowers or tends to lower the authority of any court or (2) Prejudices or interferes or tends to interfere with due course of any judicial proceedings.” আগেই বলেছি ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা অত্যন্ত নিন্দনীয় কাপুরুষোচিত একটি কাজ ছিল। এই ঘটনাটি বিচারাধীন থাকা অবস্থায় রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ব্যক্তি থেকে শুরু করে ক্ষমতাসীন দলের নেতৃবৃন্দ এখন যা করছেন তা আরও নিন্দনীয়। এটা একুশে আগস্টের ঘটনার বিকৃতি, আদালতকে বিভ্রান্ত করার অপকৌশল। এতে ন্যায়বিচার নিহত হবার আশঙ্কা দেখা দেয়। বিচার প্রক্রিয়া যখন ঘৃণ্য রাজনীতির শিকার হয় তখন জাতি তার মানবিক মর্যাদা হারায়।

আরেকটি অজানা একুশ ও কর্নেল তাহের : গত ২১শে জুলাই কর্নেল তাহেরের মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হয়েছে। এই উপলক্ষে পত্রপত্রিকা এবং স্মৃতি সংসদ আয়োজিত সভা-সমিতিতে যা কিছু প্রকাশিত ও আলোচিত হয়েছে তাতে মনে হয়েছে যে, অচিরেই আমরা আমাদের বাপ-দাদার নাম পর্যন্ত ভুলে যাব। তাহেরের ঘটনা যারা প্রত্যক্ষ করেছেন তাদের অনেকেই এখন নেই। অনেকেই আবার ভোল পাল্টিয়ে সজ্জন বনে গেছেন। কেউ কেউ শত্রুর শত্রু বন্ধু’ এই নীতি অনুসরণ করে এককালের সন্ত্রাসী অপরাধীদের কোলে টেনে নিয়ে প্রতিপক্ষের ওপর অপবাদ চালিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন।

পাঠকদের কারুর কারুর নিশ্চয়ই মনে আছে যে, কর্নেল তাহের মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদান রাখার জন্য ‘বীরউত্তম’ খেতাব পেয়েছিলেন। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে তিনি তার বিশেষ রাজনৈতিক দর্শন বাস্তবায়নের জন্য সেনাবাহিনীর চাকরি ছেড়ে জাসদে যোগ দিয়েছিলেন।

সেই সময়কার শাসক দল আওয়ামী লীগের ছাত্র ফ্রন্ট ছাত্রলীগের দ্বিধা-বিভক্তির ভেতর দিয়ে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) আত্মপ্রকাশ ঘটে। জাসদ সামাজিক বিপ্লবের মাধ্যমে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার নিয়ে রাজনৈতিক মঞ্চে আবির্ভূত হয়। স্বাধীনতা যুদ্ধ ফেরত তরুণদের মনে জাসদের রক্ত গরম করা স্লোগান বিপুল সাড়া জোগায়। জাসদ এবং অন্যান্য বামপন্থী গ্রুপের অবিরাম বিপ্লবী শ্লোগান ও কর্মকা- শাসকদলের ঘুম কেড়ে নেয়। গণতন্ত্রের পথ থেকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে স্বৈরতান্ত্রিক পথে যেতে বাধ্য করে। এমনকি শেখ মুজিব যে একদলীয় বাকশাল করেন তার পেছনেও অতিবিপ্লবীদের প্ররোচনা ছিল। কর্নেল তাহেররা যে ধরনের বক্তব্য প্রচার করতেন তার প্রতিধ্বনিও আমরা বাকশাল গঠনের পর শেখ সাহেবের কণ্ঠে শুনেছি। বাকশাল কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ...এই এডমিনিস্ট্রেশন, তারপর আমার সেক্রেটারিয়েট এসব ভাঙতে হবে। এসব চলতে পারে না। ...তিনি এ কথাও বলেছিলেন, আই ওয়ান্ট মাই আর্মি টু বি এ পিপলস আর্মি।” কর্নেল তাহেরও গণবাহিনীর কথা বলতেন। এসব কথা বলা হতো শোষিতের গণতন্ত্রের নামে সামাজিক বিপ্লবের নামে, বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের নামে। স্বাধীনতার পর বস্তুত বিপ্লবী হবার একটা হুজুগ দেখা গিয়েছিল। গণতন্ত্রের আগে একটি বিশেষণ বসিয়ে দিয়ে জনগণকে ধোকা দেয়ার এই খেলা এ দেশের মানুষ কম প্রত্যক্ষ করেনি। ‘মৌলিক গণতন্ত্র’ ‘শোষিতের গণতন্ত্র’ ‘সর্বহারার গণতন্ত্র, একদলের গণতন্ত্র আসলে গণতন্ত্র নয়- স্বার্থান্বেষী মহলের স্বৈরশাসন চালাবার কৌশল মাত্র। এটা বোঝার মতো বুদ্ধি এবং অভিজ্ঞতা এ দেশের মানুষের রয়েছে। কর্নেল তাহেরের রাজনীতি গণতান্ত্রিক রাজনীতি ছিল, এ কথা তার কোন ভক্তও নিশ্চয় দাবি করবেন না, গণতান্ত্রিক অধিকার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মধ্যেই কার্যকর থাকতে পারে কিন্তু বিপ্লবী রাজনীতিতে বিশ্বাসীরা যখন গণতান্ত্রিক অধিকারের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে পরলোকগত কোন বিপ্লবীর স্মৃতিচারণ করেন তখন সঙ্গত কারণেই বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। যেমনটি কর্নেল তাহেরের স্মরণ সভায় করা হয়েছে। যদি তার স্মৃতি সভায় বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র নিয়ে এবং তা প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে গণবাহিনী গঠন এবং তার সাফল্য-ব্যর্থতা নিয়ে মুক্ত পর্যালোচনা হতো তাহলে আর যাই হোক বিভ্রান্তি সৃষ্টির অবকাশ থাকতো না। বিশিষ্ট সাংবাদিক শামসুল হকের সাম্প্রতিক গবেষণায় যেসব তথ্য উদ্ঘাটিত হয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে- জাসদের বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার চিন্তা-ভাবনার পেছনে দু’জন বিদেশী ব্যক্তির উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল। এর একজন হলেন- হল্যান্ডের অধিবাসী মি.পিটার কাস্টার্স এবং অপরজন মার্কিন সাংবাদিক ল্যারী লিপসুলজ।

পিটার কাস্টার্স বাংলাদেশে আসেন ১৯৭৩ সালে স্বেচ্ছাসেবী রিলিফ কর্মীর পরিচয়ে, আসার কিছুদিন পর শুরু করেন স্বনির্ভর সাংবাদিকতা। আনোয়ার সিদ্দিকী. ছদ্মনামে মার্কসবাদ, লেনিনবাদের ওপর লেখা শুরু করেন ইংরেজি সাপ্তাহিক ‘দ্য হলিডে’তে। বাংলাদেশে অবস্থানকালে তিনি জাসদ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। নিজে সর্বহারা ঐক্য আন্দোলন’ নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন। ঢাকায় তার সঙ্গে মার্কিন সাংবাদিক ল্যারী লিপসুলজ-এর পরিচয় হয়। ল্যারী ফার ইস্টার্ন ইকোনমিক রিভিউ’র সংবাদাতা হয়ে ঢাকায় আসেন। চিন্তা-ভাবনায় সমগোত্রীয় মনে করে পিটার কাস্টার্স তার প্ল্যান-পরিকল্পনার কথা ল্যারীকে বলেন। ল্যারী তাকে কর্নেল (তখন লেফটেন্যান্ট কর্নেল) তাহেরের কথা বলেন। ল্যারীর কথামতো মি. কাস্টার্স ১৯৭৪ সালের জুলাই মাসে কর্নেল তাহেরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। মি. কাস্টার্স প্রয়াত সিরাজ সিকদারের ‘সর্বহারা পার্টির সঙ্গে জাসদ পরিচালিত গণবাহিনীর ঐক্য সাধনের চেষ্টা করেন। ১৯৭৫ সালের ৮ ডিসেম্বর তারিখে পিটার কাস্টার্স ‘সরকার উৎখাত’ করার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে গ্রেফতার হন। গ্রেফতারের তিন মাস পর ১৯৭৬ সালের ৯ মার্চ ঢাকার প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট এ আর মজুমদারের কাছে প্রদত্ত জবানবন্দীতে তিনি এমন অনেক তথ্য প্রকাশ করেন যা রাজনীতি-সচেতন মহল জানার পর জাসদ সম্পর্কে নতুন করে ভাবতে বাধ্য হয়। ওই জবানবন্দীতে মি. কাস্টার্স তার মতো প্যারী লিপসুলজ, সিরাজুল আলম খান, কর্নেল আবু তাহের এবং অর্থনীতিবিদ ড. আখলাকুর রহমানসহ অনেকের সঙ্গে যোগাযোগের ঘটবানলী সবিস্তারে বর্ণনা করেন। এই জবানবন্দীর এক জায়গায় তিনি উল্লেখ করেন, “কয়েকবার কর্নেল তাহেরের সঙ্গে আমার দেখা এবং আলাপ হয় ।...... তিনি আর্ম ক্যাডার সৃষ্টির জন্য ক্যাডারদের সামরিক শিক্ষার ব্যবস্থা করিবেন এবং সে জন্য তাহাকে ৫০,০০০ (পঞ্চাশ হাজার) ডলার দিতে হইবে বলিয়া দাবি করেন। পরবর্তী পর্যায়ে আমি কর্নেল তাহেরকে আমার মিশনে সাহায্য করার জন্য বিভিন্ন সময়ে বাহার এবং আনোয়ারের মাধ্যমে তাহাকে মোট ৬০,০০০ (ষাট হাজার) টাকা দেই।” এই অর্থ রক্ষীবাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র আক্রমণ পরিচালনার জন্য ও রাজনৈতিক প্রচারণার কাজে ব্যবহার করার আশ্বাসও তিনি পেয়েছিলেন বলে জবানবন্দীতে উল্লেখ করেছিলেন।

উপরোক্ত ঘটনাগুলো দেশপ্রেমের অংশ ছিল না। দুর্ভাগ্যবশত, তাহেরের নাম আজকাল যা প্রচারিত হচ্ছে তার সাথে সত্যের লেশমাত্র নেই। গণবাহিনীর খুনীরা এখন তাদের প্রধান শত্রুর সাথে ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট ভোগ করছেন। নিন্দিত রাজনীতির সম্ভবত এটাই নিয়তি ।

https://dailysangram.com/post/517904