২৩ আগস্ট ২০২১, সোমবার

শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদের ২য় অধিবেশন অনুষ্ঠিত

বঞ্চিত শ্রমিকের অধিকার আদায়ের জন্য ইসলামী শ্রমনীতি বাস্তবায়নের আন্দোলনকে বেগবান করতে হবে

বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের উপদেষ্টা ও সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি সাবেক এমপি মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, সুখি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে হলে আমাদেরকে সর্বপ্রথম শ্রমজীবী মানুষের প্রাপ্য অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। দেশের দুই তৃতীয়াংশ মানুষ সরাসরি শ্রমজীবী। সুতরাং ততদিন পর্যন্ত বাংলাদেশ একটি কাঙ্খিত সুখি সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হবে না যতদিন না এদেশের মেহনতি মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন হবে। প্রচলিত শ্রম ব্যবস্থায় এদেশের লাখো কোটি শ্রমজীবীকে শোষণ করা হচ্ছে। শ্রমিকের রক্তঘামের বদৌলতে একশ্রেণীর মানুষের ভাগ্যের চাঁকা ঘুড়ে গেলেও শ্রমজীবী মানুষদের কোন পরিবর্তন সাধিত হয়নি। এই কথা আজ দিবালোকের মত স্পষ্ট প্রচলিত সকল শ্রমনীতি শ্রমজীবী মানুষদের শোষণ-নিপীড়ন ও প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে। তাই আজ বঞ্চিত শ্রমিকের অধিকার আদায়ের জন্য ইসলামী শ্রমনীতি বাস্তবায়নের আন্দোলনকে বেগবান করতে হবে। ইসলামী শ্রমনীতি বাস্তবায়ন ছাড়া শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের আর কোন পথ নেই।


তিনি গতকাল বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন কর্তৃক আয়োজিত “কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদের ২য় অধিবেশন-২০২১” এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাবেক এমপি আ ন ম শামসুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমানের সঞ্চালনায় এই সময় আরো উপস্থিত ছিলেন ফেডারেশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক হারুনুর রশিদ খাঁন, গোলাম রাব্বানী, লস্কর মোঃ তসলিম, কবির আহমদ, মুজিবুর রহমান ভূইয়া সহ কার্যকরী পরিষদের সদস্যরা।
 

মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ এইদেশের সকল নাগরিকের স্বপ্ন। কিন্তু স্বপ্ন বাস্তবায়নের প্রধান অন্তরায় হচ্ছে অসৎ নেতৃত্ব। অসৎ নেতৃত্বের ফলে সমৃদ্ধ প্রাকৃতিক সম্পদ ও বিপুল পরিমান জনশক্তি থাকার পরেও বাংলাদেশ একদিকে যেমন উন্নতির শিখরে পৌঁছাতে ব্যর্থ হচ্ছে অন্যদিকে কর্মহীন জনশক্তিরা অসৎ ও অনৈতিক কাজে জড়িয়ে যাচ্ছে। সমাজ ও রাষ্ট্রে বিশৃঙ্খলা হানাহানি অরাজকতা তৈরী হচ্ছে। প্রতিনিয়ত ভেঙে যাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনকে ইসলামী শ্রমনীতি আন্দোলন জোরদার করার পাশাপাশি সৎ, খোদাভীরু ও দেশপ্রেমিক নেতৃত্ব তৈরী করতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে আ ন ম শামসুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন প্রচলিত শ্রমনীতির বিপরীতে আল্লাহ ও রাসূল (সাঃ) অনুসৃত শ্রমনীতি বাস্তবায়নের মিশনে নিবিড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা দেশের সাধারণ শ্রমজীবী মানুষদের বুঝাতে সক্ষম হয়েছি ইসলামী শ্রমনীতিতে তাদের কল্যাণ নিহিত রয়েছে। তাই আজ দেশের কোটি কোটি শ্রমজীবী শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের পতাকা তলে দলে দলে শামিল হচ্ছে। সাধারণ শ্রমজীবী মানুষের এই জনস্রোত ইসলামী শ্রমনীতিকে বিজয়ের কাঙ্খিত মনজিলে পৌঁছে দিবে।


কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদ অধিবেশন-২০২১ এ গৃহীত প্রস্তাব

১. কার্যকরী পরিষদের অধিবেশন গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ করছে যে, বর্তমানে করোনা পরিস্থিতি অত্যন্ত ভয়াবহ। গ্রাম পর্যায় থেকে শহরে চিকিৎসার জন্য আসার কারনে সরকারী ও বেসরকারী পর্যায়ে বাড়তি ব্যবস্থা নেওয়ার পরও মানুষ চিকিৎসা হতে বঞ্চিত। আর্থিক সামর্থহীন মানুষদের চিকিৎসা ছাড়াই মৃত্যু বরন করতে হচ্ছে। এমত অবস্থায় এই অধিবেশন সরকারী, বেসরকারী ও এনজিও সংস্থাগুলিকে অবিলম্বে সম্মিলিত পরিকল্পনার মাধ্যমে করোনার চিকিৎসা ও সেবা সেন্টার প্রতিষ্ঠা, হাসপাতাল গুলিতে শয্যার পরিমান বাড়ানো, দ্রুত টিকা প্রয়োগ, ঔষুধ ও অক্সিজেনের প্রাপ্যতা সহজলভ্য করার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছে।

২. এই অধিবেশন জোর দাবি জানাচ্ছে, যে হত দরিদ্র ও অবহেলিত শ্রমিক কর্মচারীদেরকে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করার জন্য সরকারি ভাবে উদ্যোগ গ্রহন করতে হবে। হত দরিদ্র ও অবহেলীত শ্রমিক কর্মচারীদের চিকিৎসা ও খাদ্য সহায়তা দানের আহবান জানাচ্ছে।


৩. দীর্ঘ লক ডাউনের কারনে অনেক শ্রমিক চাকুরিচ্যুত হয়েছে। অনেকেই অর্ধেক বেতন পাচ্ছে বিশেষ করে দৈনিক আয়ের মাধ্যমে যে সমস্ত শ্রমিক দিন চলে তারা অর্ধহারে অনাহারে ও চিকিৎসার অভাবে ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুবরণ করছে। সামান্য সরকারী সাহায্যের কথা বলা হলে ও উহা বন্টনের দায়িত্ব নিয়োজিতরা উল্লেখযোগ্য অংশ ভোগ করেছে। তার বাইরে কিছু মুখচেনা লোক এই সাহায্য পাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তাই আজকের এই কার্যকরী পরিষদের অধিবেশন সরকারের প্রতি সত্যিকারের অভাবী লোকদের কাছে সাহায্য পৌঁছানোর ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জোর দাবি জানাচ্ছে।

৪. আজকের কার্যকারী পরিষদ অধিবেশন শ্রমজীবী, কৃষক ও দরিদ্র মানুষের কল্যানে সরকারী ভর্তুকী অব্যাহত রাখার জোর দাবি জানাচ্ছে। শ্রমিক মজুরদের জন্য জীবন জীবিকার চাহিদার সাথে সংগতি রেখে মঞ্জুরী কমিশন গঠন করতে হবে। বেসরকারী ও ব্যক্তি মালিকানাধীন খাতে যাতে নূন্যতম মজুরী কার্যকর করা হয় সে জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে।

৫. আজকের এই অধিবেশন গার্মেন্টস শ্রমিকদের সর্বনিম্ন মজুরী ৮,০০০/- টাকা নির্ধারন করা হলেও অধিকাংশ গার্মেন্টস মালিক শ্রমিকদের সর্বনিম্ন মজুরী না দিয়ে বিভিন্নভাবে শ্রমিকদেরকে অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে এমনকি দাবি আদায়ের আন্দোলনকে দমনের নামে হয়রানি ও গ্রেফতার করে অন্যায়ভাবে শ্রমিকদেরকে চাকুরীচ্যুত করছে। এই সম্মেলন গার্মেন্টস শিল্পে বর্তমানে গৃহীত কালাকানুন টার্মিনেশন এ্যাক্ট বাতিল করে পূর্বের আইন বহাল করার জোর দাবী জানাচ্ছে এবং ১৬,০০০/- টাকা সর্বনিম্ন মজুরী ও বার্ষিক ইক্রিমেন্ট প্রদান নির্ধারণ করে মজুরী কমিশন ঘোষনার জোর দাবী জানাচ্ছে।।

৬. আজকের এই অধিবেশন বন্ধকৃত ২৫টি জুট মিলের শ্রমিক কর্মচারীদের যাবতীয় বকেয়া পাওনাদি অবিলম্বে পরিশোধ করার জোর দাবী জানাচ্ছে এবং বিএমআরই পদ্ধতিতে আধুনিকায়ন করে উক্ত ২৫টি জুট মিলসহ বন্ধকৃত সকল কল-কারখানা অবিলম্বে চালু করার জোর দাবী জানাচ্ছে।

৭. আজকের এই অধিবেশন হোটেল শ্রমিক ও দোকান কর্মচারীসহ মালিকানা নির্বিশেষে বিরাজমান জীবনযাত্রার ব্যয়ের নিরিখে জাতীয় ন্যূনতম মজুরী কাঠামো পূর্ণনির্ধারণ ও বাস্তবায়নের জোর দাবী জানাচ্ছে এবং পরিবহন, রিক্শা-ভ্যান, নির্মাণ, কৃষি, চাতাল, দর্জি ও তাঁত, স্টিল রি-রোলিং, ফার্নিচার, হকার্স, দোকান কর্মচারী, নৌ পরিবহন ও করাতকল শ্রমিকসহ সর্বস্তরের শ্রমিকদের জন্য ট্রেড ভিত্তিক সমস্যা সমূহ চিহ্নিত করা ও সমাধানের উদ্যোগ গ্রহনের আহবান জানাচ্ছে।

৮. এই অধিবেশন আইএলও কনভেনশন মোতাবেক অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার ও ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে শ্রমিকদের নিয়োগপত্র প্রদান নিশ্চিত করার জোর দাবী জানাচ্ছে।