২৭ এপ্রিল ২০১৭, বৃহস্পতিবার

হাওরাঞ্চলের দুর্যোগের মতই রাষ্ট্রীয়ভাবে জামায়াতের উপর জুলুম নির্যাতনের দুর্যোগ নেমে এসেছে- মাওলানা আব্দুল হালিম

সুনামগঞ্জ ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শনে জামায়াতের প্রতিনিধি দল

সুনামগঞ্জের ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর একটি প্রতিনিধি দল। আজ বৃহস্পতিবার জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মাওলানা আব্দুল হালিমের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল জেলার ছাতক, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ, সুনামগঞ্জ সদর, বিশ্বম্ভরপুর ও তাহিরপুর উপজেলার বিভিন্ন হাওরাঞ্চল পরিদর্শন করেন। এসময় তারা ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের সাথে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন এবং তাদের মধ্যে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেন।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে দুর্গত এলাকা পরিদর্শন দলের অন্যান্য সদস্যরা হলেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও সিলেট মহানগরীর নায়েবে আমীর মো. ফখরুল ইসলাম। তারা ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন ও সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার ইচ্ছারচর, আহমদাবাদ ও তাহিরপুর উপজেলার শনির হাওরপাড়ের পুরান বারুংকা, লোহাচুড়া, আনোয়ারপুর গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মধ্যে চাল, ডাল, তৈলসহ বিভিন্ন ত্রাণ সামাগ্রী বিতরণ করেন। দুপুরে সুনামগঞ্জ শহরের একটি সেন্টারে প্রেস ব্রিফিং করে সুনামগঞ্জসহ ক্ষতিগ্রস্থ হাওরাঞ্চলকে দুর্গত এলাকা ঘোষনার দাবী জানান নেতৃবৃন্দ।

এসময় জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মাওলানা আব্দুল হালিম বলেন, হাওরাঞ্চলের দুর্যোগের মতই রাষ্ট্রীয়ভাবে জামায়াতের উপর জুলুম নির্যাতনের দুর্যোগ নেমে এসেছে। সংগঠনটির আমীর, সেক্রেটারী জেনারেলসহ ৫ কেন্দ্রীয় নেতাকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা হয়েছে। প্রায় ১৬ হাজার মিথ্যা মামলায় হাজার হাজার জামায়াত নেতাকর্মী পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এ অবস্থায় জীবনের ঝুকি নিয়ে আমীরে জামায়াত মকবুল আহমদ ও সেক্রেটারী জেলারেল ডা. শফিকুর রহমানের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকসহ হাওরাঞ্চলের সকল দুর্গত মানুষের পাশে এসে দাড়িয়েছি, তাদের কষ্টের ভাগিদার হতে। তিনি এই দুর্যোগে জামায়াত সকল নেতাকর্মীকেও নিপীরিত মানুষের পাশে দাড়ানোর আহ্বান জানান।

সুনামগঞ্জের হাওর রক্ষা বাঁধে দুর্নীতির প্রসঙ্গ টেনে তিনি এর নিরপেক্ষ তদন্ত করে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানান। দুর্গত এলাকা পরিদর্শন ও ত্রাণ সামগ্রী বিতরণকালে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সুনামগঞ্জ জেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা তোফায়েল আহমদ খান, নায়েবে আমীর মুহাম্মদ শামসউদদীন এডভোকেট, সেক্রেটারী মোমতাজুল হাসান আবেদ, জেলা শিবির সভাপতি হাফিজ জাকির হোসেন, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা আমীর কুদরতে এলাহী মারুফ, তাহিরপুর উপজেলা সেক্রেটারী মাওলানা মুসলিম উদ্দিন তালুকদার প্রমূখ।

এদিকে ভারী বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে সুনামঞ্জের শতভাগ ফসলহানীতে হাওরাঞ্চলজুড়ে করুণ আহাজারির সৃষ্টি হয়েছে। আনাহার অর্ধাহার আর ছেলে মেয়েদের ভরণ পোষনের অনিশ্চিত আশংকা তাড়া করে বেড়াচ্ছে দুর্গত কৃষকদের। মধ্য চৈত্রের প্লাবনে এ জেলার প্রায় আড়াই লাখ হেক্টর বোরো ফসল অকালেই তলিয়ে যায় অথৈ পানিতে। আর হাওরাঞ্চলের নবান্নের মাস বৈশাখে দেখা দিয়েছে দুর্ভাগা নিদাণ। পানিতে নিমজ্জিত ফসলের পঁচনে পানির বিষক্রিয়ায় এক সপ্তাহের ব্যবধানে মড়কে শেষ হয়ে যায় হাওরের মাছও। বেঁচে থাকার এখন আর কোন অবলম্বন নেই বললেই চলে। তার উপর মহাজনের ঋণের তাগাদাতো আছেই। এতকিছুর পরেও সরকারী সাহায্য এখনও হাওরাঞ্চলের কৃষকদের নাগালের বাইরেই রয়ে গেছে। উপজেলা সদর ও জেলা সদরে ১০টাকা ধরে জন প্রতি ৫ কেজি চাল বিতরণ কার্যক্রম সীমিত আকারে চালু করা হলেও দুর দুরান্ত থেকে আসা কৃষকদের দুর্ভোগের অন্ত নেই। দীর্ঘ ল্ইালে দাড়িয়ে টেলা ধাক্কা করে দিন শেষে কেউ পায় আবার কেউ না পেয়েই শূন্য হাতে বাড়ি ফিরতে হয়। তবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো: ফয়জুর রহমান জানিয়েছে, ওএমএস এর চাল বিতরণ কার্যক্রম দ্বিগুন করা হবে। তবে সচেতন মহলের দাবী শুধু বাড়ালেই চলবে না, বিতরণ কেন্দ্রগুলো শহরকেন্দ্রিক না রেখে কৃষকদের নাগালের মধ্যে হাওরাঞ্জলের গ্রাম্য বাজারগুলিতে চালু করা জরুরী বলে অভিমত ব্যক্ত করেন তারা।

https://goo.gl/N6dV2z