বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের প্রধান উপদেষ্টা ডা: শফিকুর রহমান বলেছেন, শ্রমজীবী মানুষদের সমস্যা সমাধানের কথা বলে এক শ্রেণির তথাকথিত আদর্শের নেতারা প্রতিনিয়ত ভুল পথে পরিচালিত করছে। মালিক-শ্রমিক দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করে শ্রেণি সংগ্রামের নামে শ্রেণি সংঘাত তৈরি করেছে। ভুল পথে আন্দোলন সংগ্রাম করতে গিয়ে অসংখ্য শ্রমিক আজ নিঃস্ব হয়ে গেছে। মূলত ইসলামী আদর্শ ছাড়া শ্রমজীবী মানুষের মুক্তি অসম্ভব। শ্রমিকদের কাঙ্ক্ষিত মুক্তি ও কল্যাণ কেবল ইসলামী আদর্শে নিহিত রয়েছে।
শনিবার বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের উদ্যোগে জেলা ও মহানগর কমিটির সদস্যদের নিয়ে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত দিনব্যাপী শিক্ষা শিবিরে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সভাপতি অধ্যাপক হারুনুর রশিদ খান-এর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আতিকুর রহমান-এর সঞ্চালনায় এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন ফেডারেশনের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা ডা: সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, সাবেক এমপি এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ, এইচ এম আব্দুল হালিম, মাওলানা মুহাম্মদ শাহাজাহান।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি গোলাম রব্বানী, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু তাহের খান, লস্কর মোহাম্মদ তসলিম, কবির আহমেদ, মাস্টার শফিকুল আলম, মুজিবুর রহমান ভূঁইয়া, মনসুর রহমান প্রমুখ।
ডা: শফিকুর রহমান বলেন, আমাদের দেশের শ্রমিকরা হাড় ভাঙা পরিশ্রম করা সত্ত্বেও তাদের সাথে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের মতো আচরণ করা হয়। অথচ তাদের রক্ত, ঘামের ফসলে দেশ ও অর্থনীতির চাকা সচল থাকে। ইসলাম সকল শ্রেণির সকল পেশার মানুষের সমান অধিকার সম্মান নিশ্চিত করেছে। ইসলাম বলে মানুষে মানুষে কোনো ভেদাভেদ নেই। মানুষের কর্মের দিকে তাকিয়ে নয় বরং তার কাজের প্রতি সম্মান রেখে তার মর্যাদা নিশ্চিত করেছে। আমাদের শ্রমিকরা বছরের পর বছর কষ্ট পরিশ্রম করা সত্ত্বেও তাদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধিত হয় না।
তিনি আরো বলেন, সারা বছর পরিবার-পরিজন নিয়ে অর্থ ও খাবার কষ্টে অতিবাহিত করছে আমাদের দেশের শ্রমিকরা। ইসলাম শ্রমনীতি প্রচলিত ধারার শ্রমনীতি সমর্থন করে না। বরং ইসলাম একজন শ্রমিকের পরিবার-পরিজন নিয়ে ভালোভাবে চলার মতো পারিশ্রমিক দিতে নির্দেশ দিয়েছে।
এছাড়াও তিনি বলেন, ইসলামের প্রতিটি নবী শ্রমিক ছিলেন। নবী-রসুলগণ ভেড়া, মেষ ও ছাগল চড়িয়েছেন। আমাদের প্রিয় নবী হজরত মোহাম্মদ সা: বাল্যকালে মক্কার মানুষদের ছাগল চড়িয়েছেন। তিনি সততা ও আমানতদারিতার সাথে মালিকের কাজ করেছেন। মোহাম্মদ সা: সকল মানুষদের জন্য আদর্শস্বরূপ। শ্রমিকদের কাছেও তিনি আদর্শ। রাসূল সা: শ্রমিকদের প্রাপ্য মজুরি ও সম্মান নিশ্চিত করেছেন। তিনি মালিকদের বলেছেন, শ্রমিকদের ঘাম শুকিয়ে যাওয়ার আগে মজুরি পরিশোধ করতে। এই রকম অনুপম ও শ্রমিক বান্ধব নীতি পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল।
এ সময় তিনি শ্রমিকদের আহ্বান করে বলেন, আল্লাহর রাসূল সা:-এর জীবন থেকে শিক্ষা গ্রহণ করুন। তার দেখানো পথে নিজেদের জীবন পরিচালিত করুন। শ্রমিক ও মালিকরা যদি রাসূলের দেখানো পথ অনুসরণ করে তাহলে এই অঙ্গনে কোনো ধরনের অসন্তোষ-ক্ষোভ থাকবে না।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক হারুনুর রশিদ খান বলেন, বাংলাদেশের শ্রমিকদের মুখে হাসি নাই। শ্রমিকদের মুখে হাসি ফোটাতে হলে ইসলামী শ্রমনীতি বাস্তবায়নের বিকল্প নেই। এজন্য সর্বপ্রথম ইসলামী শ্রমনীতির পক্ষে সারাদেশে জোয়ার সৃষ্টি করতে হবে। সকল শ্রমিকরা যখন ইসলামী শ্রমনীতির পক্ষে নিজেদের কণ্ঠ সুউচ্চ করবে সেদিন এই দেশে শ্রমিকদের কাঙ্ক্ষিত মুক্তি মিলবে।
দৈনিক নয়া দিগন্তে প্রকাশিত লিঙ্ক