২৪ আগস্ট ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ৬:২০

রাজধানীতে ডেঙ্গু রোগী বাড়ছে

রাজধানীতে ঘরে ঘরে চিকুনগুনিয়ার আতঙ্কের মধ্যে নীরবে বেড়েই যাচ্ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যাও। এ বছর বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই রাজধানীজুড়ে আতঙ্ক হয়ে দেখা দেয় মশাবাহিত ভাইরাসজনিত রোগ। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত ৯৯৭ জন ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। মারা গেছেন তিনজন। ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছেন ৬ জন রোগী। গত এক সপ্তাহে ৬০ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন। চলতি মাসে এ পর্যন্ত ১৮৯ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলেন, সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গু বিস্তার থাকতে পারে। তাই আমরা এই রোগগুলোর ব্যাপারে সতর্কতামূলক নানা পদক্ষেপ নিয়েছি। জনসচেতনতামূলক কার্যক্রমের পাশাপাশি চিকিৎসার ক্ষেত্রেও প্রস্তুতি রয়েছে। তবে মানুষের মধ্যে যতই এডিস মশা এবং অনিরাপদ পানির ব্যাপারে সচেতনতা বাড়বে, এই রোগের ঝুঁকি ততই কমবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কন্ট্রোল রুম সূত্রে জানা যায়, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত ৯৯৭ জন ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে জুলাই মাসে ২২৪ ভর্তি হন। মারা যান দুজন। ৯৬৯ জন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেছেন। ডেঙ্গু জ্বরে এ বছরের জানুয়ারি মাসে ৯১ জন, ফেব্রুয়ারি মাসে ৫৮ জন, মার্চে ৩৩ জন, এপ্রিলে ৭২ জন, মে মাসে ১২৬ জন, জুন মাসে ২০২ জন, জুলাইতে ২২৪ জন ও আগস্টে ১৮৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন। বর্তমানে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন ২৫ জন রোগী। এর মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দুজন, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দুজন, ইবনে সিনা হাসপাতালে তিনজন, সেন্ট্রাল হাসপাতালে ১২ জন, সালাহউদ্দিন মেডিকেলে একজন, পপুলারে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দুজন, স্কয়ার হাসপাতালে তিনজন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছেন। এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, চিকুনগুনিয়ার রোগীর পাশাপাশি ডেঙ্গু রোগীও আসছে তার কাছে। এবার বর্ষা মৌসুমে একাধারে চিকুনগুনিয়া আর ডেঙ্গুর ঝুঁকি বেশি। এবার ডেঙ্গু আর চিকুনগুনিয়া আগামী সেপ্টেম্বর বেশি সময় থাকতে পারে। তাই এবার মানুষকে অবশ্যই অনেক বেশি সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন এই বিশেষজ্ঞ। তিনি বলেন, তবে মনে রাখতে হবে, কেবল চিকুনগুনিয়া বা ডেঙ্গুই নয়, প্রস্রাবের সংক্রমণ, নিউমোনিয়া, টাইফয়েড থেকেও জ্বর হতে পারে। ফলে জ্বরের রোগী হলেই যেন কেবল চিকুনগুনিয়া বা ডেঙ্গুর চিকিৎসা দেয়া না হয়, অন্য বিষয়গুলোর ব্যাপারেও সতর্ক থাকা জরুরি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডেঙ্গু অথবা চিকুনগুনিয়া জ্বরই হোক তা নিয়ন্ত্রণ করতে হলে মশার বিস্তার কমাতে হবে। এডিস মশার দুটি প্রজাতি এডিস ইজিপ্টাই ও এডিস অ্যালবুপিকপকটাসের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে ছড়াচ্ছে আবার মানুষ থেকে মশার মাধ্যমে আসছে। পরে মশা থেকে আবার মানুষকে সংক্রমিত করছে। ডেঙ্গুর চিকিৎসা সম্বন্ধে ঢাকা  মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিনের অধ্যাপক ডা. খান আবুল কালাম আজাদ জানিয়েছেন, ডেঙ্গুজ্বর হলে প্রচুর পানি পান করতে হবে ও পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে। জ্বর বাড়লে প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ অথবা আরো বেশি জ্বর হলে তা কমিয়ে রাখার জন্য সাপোজিটরি ব্যবহার করতে হবে। ডেঙ্গুর চিকিৎসা বাড়িতে রেখেও হতে পারে। বেশি দুর্বল বা শরীর পানিশূন্য হয়ে পড়লে, নাক ও দাঁত দিয়ে রক্ত ঝরতে থাকলে হাসপাতালে নেয়াই ভালো। ডেঙ্গুজ্বর সাধারণত ১০ দিনের মধ্যে সেরে যায়। কিন্তু দুর্বলতা আরো কিছু দিন থেকে যেতে পারে। ভাইরাসজনিত জ্বর বলে এর কোনো চিকিৎসা নেই। কেবল লক্ষণ বুঝেই চিকিৎসা দিতে হবে। ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া রোগ বিষয়ে আগাম সতর্কতা এবং প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেয়া জরুরি উল্লেখ করে আইইডিসিআর’র পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরার বলেছেন, এবছর হঠাৎ ভারী বর্ষণ বর্ষা মৌসুমে মশার বংশ বিস্তারের কারণে মশাবাহিত ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই আমাদেরকে সচেতন হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০১৬ সালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ৬০৬০ জন, মারা গেছে ১৪ জন। ২০১৫ সালে আক্রান্ত হয়েছেন ৩ হাজার ১৬২ জন, মারা গেছে ছয়জন। ২০১৪ সালে ভর্তি হয়েছেন ৩৭৩ জন। কেউ মারে যাননি। ২০১৩ সালে ১৪৭৮ জন, ২০১২ সালে ১২৮৬ জন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত  রোগী  হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=80232