১৪ জুলাই ২০২৪, রবিবার, ৬:৩৬

সাড়ে ৫ বছরে সড়কে প্রাণ গেল ৫৬১৯ শিক্ষার্থীর

গত সাড়ে ৫ বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় ৫ হাজার ৬১৯ জন শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া একই সময়ে সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৪ হাজার ৪৭৮ জন নিহত হয়েছেন। সে হিসাবে শিক্ষার্থী নিহতের হার ১৬ দশমিক ২৯ শতাংশ। ২০১৯ সাল থেকে ২০২৪ সালের জুন মাস পর্যন্ত বাস, থ্রি হুইলার, মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহনে দুর্ঘটনায় এসব শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়।

শনিবার সকালে রাজধানীর ধানমণ্ডিতে গবেষণা প্রতিষ্ঠান রোড সেফটি ফাউন্ডেনের কার্যালয়ে ‘সড়ক দুর্ঘটনায় শিক্ষার্থী নিহত: পরিসংখ্যান ও পর্যালোচনা’ শীর্ষক আলোচনায়। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এআই মাহবুব উদ্দিন আহমেদ এই প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন।

এতে বলা হয়, ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সী স্কুল ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে ২ হাজার ৬৪১ জন (শতকরা হিসেবে ৪৭ শতাংশ)। ১৮ থেকে ২৫ বছর কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন ২ হাজার ৯৭৮ জন (শতকরা হিসেবে ৫৩ শতাংশ)। আলোচিত সময়ে ১ হাজার ৫৩৪ জন শিক্ষার্থী পথচারী হিসেবে যানবাহনের ধাক্কা বা চাপায় নিহত হয়েছেন। যানবাহনের যাত্রী হিসেবে নিহত হয়েছেন ৭২১ জন শিক্ষার্থী। মোটরসাইকেল চালক বা আরোহী হিসেবে নিহত হয়েছেন ২ হাজার ৭৮৩ জন।

গত সাড়ে ৫ বছরের দুর্ঘটনার তথ্য বিশ্লেষণ করে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন জানায়, এ সময়ে গ্রামীণ সড়কে ১ হাজার ৩৩৯ জন, শহরের সড়কে ১ হাজার ৪৮৬ জন, আঞ্চলিক সড়কে ১ হাজার ৬৫১ জন, মহাসড়কে ১ হাজার ১৪৩ জন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, মোট দুর্ঘটনার ২৩ দশমিক ৬৬ শতাংশ থ্রি হুইলার দুর্ঘটনায়; ২১ দশমিক ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থী পণ্যবাহী মোটরযান চাপায়, ৯ দশমিক ৪৬ শতাংশ বাস চাপায়, ৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ শিক্ষার্থী বাইসাইকেল ও প্যাডেল রিকশা দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন।

সড়ক দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে রোড সেফটি জানায়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে মোটিভেশনাল প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা না থাকা, সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে গণমাধ্যমে সচেতনতামূলক প্রচারণা না থাকা, শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানোর মানসিকতা ও ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা।

অধ্যাপক ড. এআই মাহবুব উদ্দিন আহমেদ বলেন, সড়ক পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার জন্য দীর্ঘমেয়দি কোনো টেকসই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন হচ্ছে না। যেসব উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে তা অনেকটা অবৈজ্ঞানিক এবং সমন্বয়হীন। তিনি বলেন, সড়ক পরিবহন খাতের স্বার্থবাদী গোষ্ঠী এসব উদ্যোগ বাস্তবায়নের পথে প্রধান বাধা। এই গোষ্ঠী নিজেদের দুর্নীতি এবং চাঁদাবাজির স্বার্থে সড়কে বিশৃঙ্খলা বজায় রাখে। মাঝে-মধ্যে গণপরিবহনে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার জন্য কমিটি গঠন এবং সুপারিশ তৈরি করা হয়। কিন্তু কোনো সুপারিশই আলোর মুখ দেখে না। মূলত কমিটি গঠন এবং সুপারিশ তৈরির মধ্যেই দেশের সড়ক পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ ঘুরপাক খাচ্ছে।
২০১১ সালের ১১ই জুলাই মিরসরাই স্টেডিয়ামে বঙ্গবন্ধু-বঙ্গমাতা গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট খেলে ফেরার পথে শিক্ষার্থীদের বহনকারী পিকআপ ভ্যান নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশের পুকুরে উল্টে ৪২ শিক্ষার্থীসহ ৪৫ জন নিহত হয়েছিল। সেই থেকে দিনটি ‘মিরসরাই ট্র্যাজেডি দিবস’ হিসেবে স্থানীয়ভাবে পালিত হয়ে আসছে। রোড সেফটি ফাউন্ডেশন দিবসটি জাতীয়ভাবে পালনের দাবি জানিয়েছে। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দিবসটি পালনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি হবে বলে সংগঠনটি মনে করে।
সংবাদ সম্মেলনে রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান ও গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ সৈয়দ জাহাঙ্গীর, ফাউন্ডেশনের ভাইস চেয়ারম্যান ও সড়ক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ফেরদৌস খান, ট্রেজারার ড. জাহিদুল ইসলাম, লিগ্যাল ইকোনোমিস্ট মোহাম্মদ শাহজাহান সিদ্দিক উপস্থিত ছিলেন।

https://mzamin.com/news.php?news=118555