১০ জুলাই ২০২৪, বুধবার, ১:৫২

কর্মবিরতিতে এগিয়ে আসেনি কেউ

সর্বজনীন পেনশন প্রত্যয় স্কিম বাতিলের দাবিতে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সর্বাত্মক কর্মবিরতি চলমান রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষক প্রতিনিধিদের সাথে সরকারের উচ্চ মহলে আলোচনা হওয়ার কথা থাকলেও এখনো তা হয়নি। ফলে আক্ষেপ প্রকাশ করে ফেডারেশনের নেতারা বলছেন, দীর্ঘ ৯টি দিন সর্বাত্মক কর্মবিরতিতে অবস্থান করছি, কেউ এগিয়ে আসেনি আলোচনায়। শিক্ষকদের এই কর্মবিরতিতে সংহতি জানিয়ে একইসাথে আন্দোলন করছে দেশের প্রায় ৪০টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও।

সর্বাত্মক কর্মবিরতির পাশাপাশি প্রতিদিন সকাল ১২টা থেকে দেড় ঘণ্টার জন্য অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। একই দাবিতে ঢাবির প্রশাসনিক ভবনের সামনে প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

গতকাল বুধবার দুপুরে ঢাবির কলাভবনের মূল ফটকে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। এ সময় অবস্থান কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি প্রফেসর ড. আখতারুল ইসলাম। তিনি বলেন, গত কয়েকদিন ধরে আমরা এই আন্দোলন করে যাচ্ছি। কেউ যোগাযোগ করেনি, কেউ এগিয়ে আসেনি আলোচনার জন্য। স্পষ্টত শিক্ষকদের এই পেশাকে অবনমিত করা হচ্ছে। ভেরি স্যাড!

আক্ষেপ প্রকাশ করে একই সুরে কথা বলেন ফেডারেশনের আরেক অন্যতম নেতা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. জিনাত হুদা। তিনি বলেন, দীর্ঘ ৯টা দিন আমরা এ ধরনের সর্বাত্মক কর্মবিরতির মধ্যে অবস্থান করছি। কেউ এগিয়ে আসেনি আলোচনার জন্য। কেউ কেউ বলার চেষ্টা করছেন আমাদের শিক্ষকদের এই আন্দোলনকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। আমরা গুরুত্ব চাই না, আমাদেরকে আমাদের প্রাপ্য ফিরিয়ে দিন।

প্রফেসর আখতারুল ইসলাম আরো বলেন, আমাদের এই আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য কেউ কেউ আমাদের শিক্ষকদের চরিত্র হরণের চেষ্টা করা করছেন, তাদের রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে কথা তুলছেন। আমি তো তাদের পরিচয় জানতে চাইনি! আমরা স্পষ্ট করতে চাই আমাদের এই আন্দোলনে বাংলাদেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা রয়েছেন, কেউই এর বাইরে নয়।

ঢাবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর জিনাত হুদা বলেন, আমাদের এই আন্দোলন নিয়ে অনেক প্রশ্ন, অনেক ধরনের অপপ্রচার, অনেক বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। ভয় পাই না, আন্দোলনে আমরা নতুন কেউ নই। রাজনৈতিকভাবে ও পরীক্ষিত শক্তি আমরা। তিনি বলেন, আমাদেরকে বলা হচ্ছে আমরা নাকি আমাদের স্বার্থের জন্য আন্দোলন করছি। আমরা বলি- বিশ্বের টপ রাঙ্কিং ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি করে এসে, এমফিল করে এসে, রেকর্ড মার্ক পেয়ে, জাতির স্বার্থে, আমার সন্তান তুল্য শিক্ষার্থীদের স্বার্থে এই পেশায় আছি। আমাদের যে সিভি আছে সেটার ওজন করুন, মেধার নীতিতে মাপুন আমাদের, তারপরে কথা বলুন। তাহলেই বুঝবেন আমরা আমাদের স্বার্থের জন্য করছি নাকি স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে করছি।

আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে ড. জিনাত হুদা বলেন, যতদিন আপনারা আমাদের সাথে না বসবেন, যতদিন আপনারা ৪০ টা বিশ্ববিদ্যালয়কে অচল অবস্থায় দেখতে চান, যতদিন আপনারা হাজার হাজার শিক্ষার্থীর ভবিষ্যতকে অনিশ্চয়তার মধ্যে রাখতে চান ততদিন পর্যন্ত আমাদের এই আন্দোলন চলবে।

সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহাসচিব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. নিজামুল হক ভূঁইয়া বলেন, যারা বলছেন আমরা শিক্ষার্থীদেরকে জিম্মি করে রেখেছি, তারা তো আসলে জিম্মি শব্দের মানেই বুঝেনা। জিম্মি কাকে বলে সেটা বুঝার জন্য গাজার দিকে তাকান। তবেই বুঝতে পারবেন। সুতরাং যারা আমাদের নামে এসব অপপ্রচার ছড়াচ্ছেন আমরা তার তীব্র নিন্দা জানাই। দয়া করে আপনারা আর এই শব্দটাকে ব্যবহার করবেন না।

এসময় সরকারি আমলাদের উদ্দেশ্য করে ড. ভূঁইয়া বলেন, আজকে আমাদের মাঝে বিভাজনের সৃষ্টি করা হচ্ছে। আমরা বলতে চাই আমরা ৪০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাড়ে ১৬ হাজার শিক্ষক আত্মমর্যাদার লড়াইয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এ আন্দোলন করছি। আমলাদের কাজই হচ্ছে যারা নীতি নির্ধারকের দায়িত্ব আছেন তাদেরকে ভুল বুঝিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি করা। আমরা আবারো স্পষ্ট করে বলছি- যতদিন না আমাদের দাবি মেনে নেওয়া হবে ততদিন পর্যন্ত আমরা ৪০টা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা একযোগে তিন দফা দাবি নিয়ে এগিয়ে যাব। সুতরাং আমাদের দাবি মেনে নেন। আমাদেরকে ২০১৫ সালের প্রতিশ্রুত সুপার গ্রেড দেন। প্রত্যয় স্কিম বাতিল করুন। আমাদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল চালু করুন।

https://dailyinqilab.com/national/article/670298