খাদ্য মূল্যস্ফীতি গত ৫ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠেছে। এমনি পরিস্থিতিতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাজার থেকে টাকার প্রবাহ কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে চালু হওয়া ব্যাংক থেকে ডলার সংগ্রহ স্থগিত করা হয়েছে। উপরন্তু ব্যাংকগুলো থেকে ধার নেয়া ১১০ কোটি ডলার ফেরত দিয়ে ১২ হাজার ১০০ কোটি টাকা তুলে নেয়া হবে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এর ফলে বাজারে টাকার প্রবাহ আরো কমে যাবে। এতে সুদহার বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আগামী মাস অর্থাৎ জুনের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনতে হবে। যেখানে এপ্রিলে মূল্যস্ফীতি রয়েছে ৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ। এর মধ্যে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে হয়েছে ১০ দশমিক ২২ শতাংশ, যা গত ৫ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। জুনের মধ্যে মূল্যস্ফীতির পূর্ব নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা প্রায় অসম্ভব হবে। তার পরেও বাজার থেকে টাকার প্রবাহ কমিয়ে যতটুকু সম্ভব মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে ধরে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে ডলার ধার নিয়ে বিপরীতে টাকা সরবরাহ করার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এর ফলে আপাতত নতুন করে ব্যাংকগুলো থেকে ডলার ধার করা হবে না। এতে এক দিকে ডলারের বিপরীতে নগদ টাকা ব্যাংকের হাতে যাওয়া বন্ধ হবে। পাাশাপাশি ব্যাংকগুলো থেকে ইতোমধ্যে ১০ কোটি ডলার ধার নেয়া হয়েছিল। তার বিপরীতে ১১০ টাকা হিসেবে ১২ হাজার ১০০ কোটি টাকা ব্যাংক থেকে তুলে নেয়া হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রানীতি প্রণয়নের সাথে সম্পৃক্ত এক সূত্র গতকাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রানীতির অন্যতম উদ্দেশ্য হলো বাজারে টাকার প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে মূল্যস্ফীতি সহনীয় রাখা। আর এ জন্য চলতি মুদ্রানীতি সঙ্কোচনমুখী করা হয়েছিল। কিন্তু ব্যাংকিং খাতে টাকার সঙ্কট প্রকট আকার ধারণ করে। প্রায় প্রতিদিনই ২০ হাজার কোটি টাকা থেকে ২৬ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত ধার দেয়া হয় সঙ্কটে পড়া ব্যাংকগুলোকে। এটা কমাতেই ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা ধার করার সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হয়। ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে ডলার ধার নেয়ার বিপরীতে টাকা দেয়া হয়। এতে ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে ডলার সংগ্রহ করে বিপরীতে টাকা দেয়ায় সঙ্কট কিছুটা কমে যায়। কিন্তু বাজারে টাকার প্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য ডলার ধার নেয়া বন্ধ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আপাতত এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হয়েছে।
এ দিকে ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, অনেক ব্যাংকেরই এখন টাকার সঙ্কট রয়েছে। এ কারণে সুদহার বেড়ে গেছে। সুদহার নিয়ন্ত্রণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নতুন এক পদ্ধতি চালু করেছিল তা স্থগিত করেছে। নীতি সুদহার অর্থাৎ রেপোর হার ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে। চালু করা হয়েছে বাজারভিত্তিক সুদহার। এতে এমনিতেই সুদহার বেড়ে যাওয়ার এক ধরনের চাপ থাকবে। এর ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকার প্রবাহ কমানোয় ব্যাংকগুলোর টাকার সঙ্কট আরো প্রকট আকার ধারণ করবে। এতে ব্যাংক ঋণের সুদহার আরো বেড়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এ দিকে টাকার সঙ্কট বেড়ে গেলে বন্ধ হয়ে যাওয়া আন্তঃব্যাংকে ডলার লেনদেন আবার চালু হবে বলে ব্যাংকাররা জানিয়েছেন। তবে, রেমিট্যান্সের ডলার কেনার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো এখন থেকে নিজেরা কোনো প্রণোদনা দিতে পারবে না। তবে সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া ২.৫ শতাংশ প্রণোদনা অব্যাহত থাকবে।
২০২৩ সালের অক্টোবরে এবিবি ও বাংলাদেশ ফরেইন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) মাধ্যমে ব্যাংকগুলোর নিজেদের তহবিল থেকে রেমিট্যান্সের ডলারে সর্বোচ্চ ২.৫ শতাংশ প্রণোদনা দেয়ার নির্দেশনা দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংকাররা জানান, ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে এবিবি ও বাফেদার মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলারের দাম নির্ধারণ করে দেয়া চালু করার পর থেকে আন্তঃব্যাংকে ডলার লেনদেন এক প্রকার বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এখন ডলারের দাম বাজারদরের কাছাকাছি আসায় এখানে লেনদেন আবার চালু হতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে বিভিন্ন মেয়াদে এসব ডলার জমা রেখেছে। মেয়াদ শেষ হলে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো এসব ডলার ফিরিয়ে নেবে।