১৩ মে ২০২৪, সোমবার, ৮:৫৬

বিদ্যুতের দাম কতো বাড়বে?

ডলারের দর বৃদ্ধির কারণে এর প্রভাব পড়বে বিদ্যুৎ ও জ্বালানিতে। এই দাম সমন্বয়ের প্রক্রিয়া এবং পরিমাণ নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় শিগগিরই নতুন সিদ্ধান্ত আসছে। চলতি মাসেই আরেক দফা দাম বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ দফায় ৫ থেকে ৮ শতাংশ বাড়তে পারে বলে ধারণা দিয়েছেন কর্মকর্তারা। গত ফেব্রুয়ারিতে বিদ্যুতে খুচরা দাম সাড়ে ৮ শতাংশ বাড়ানো হয়।

সর্বশেষ ডলারের দাম এক লাফে ৭ টাকা বাড়ানো হয়। এতে কয়লা, গ্যাস, জ্বালানি তেলের মতো পণ্যের আমদানি ব্যয় বাড়বে। বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর বিলের বড় অংশই পরিশোধ করতে হয় ডলারে। এ খাতেও খরচ বাড়বে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, টাকার এই অবমূল্যায়ন ডলার ও নগদ অর্থ সংকটে ভোগা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতকে আরও চাপে ফেলবে।

শুধু বিদ্যুৎ ও জ্বালানির বকেয়া পরিশোধেই ৩ হাজার কোটি টাকার উপরে ব্যয় হবে। সরবরাহ পর্যায়ে খরচ বাড়লে সরকারের ভর্তুকিও বাড়বে। অন্যদিকে সরকার যেহেতু ভর্তুকি থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছে-ফলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম আরও বাড়াবে। এতে মূল্যস্ফীতি আরেক দফা বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বাড়তে পারে লোডশেডিংও।

ডলার সংকট, উৎপাদন সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও নানা কারণে চাহিদার বিপরীতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাচ্ছে না। যার প্রভাব পড়ছে শিল্পকারখানাসহ ব্যক্তিজীবনে। ফলে ব্যাহত হচ্ছে উৎপাদন। বাড়ছে ব্যয়ও। দিনশেষে যা আঘাত হানছে সামষ্টিক অর্থনীতিতে।

গত ১০ই মে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ডলারের দর বৃদ্ধির কারণে বাড়বে বিদ্যুতের দাম-এমন আভাস দিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। সেই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, সংকট তৈরি হলে প্রয়োজনে রাজধানী ও আশপাশের এলাকায় লোডশেডিং করা হবে। এবারের গরমে চাহিদামতো বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যর্থতার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, সব কাজে অর্থের প্রয়োজন। অর্থনৈতিক টানাপড়েন চলছে, যার কারণে গত মাসে কিছু সমস্যা হয়েছে।

দেশে গ্যাসের চাহিদা দিনে ৩৮০ কোটি ঘনফুট। এর মধ্যে ১০৩ কোটি ঘনফুট এলএনজি আমদানি করা। ১২৩ কোটি ঘনফুট পাওয়া যায় দেশের অভ্যন্তরে কাজ করা শেভরনসহ বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে। এই ২২৬ কোটি ঘনফুট গ্যাসের দাম ডলারে পরিশোধ করতে হয়। ডলারের দাম বৃদ্ধিতে এ খাতে খরচ বাড়বে। আইএমএফ’র পরামর্শে গ্যাসের দাম কয়েক দফা বাড়িয়ে ভর্তুকি থেকে প্রায় বেরিয়ে এসেছে সরকার। ডলারের কারণে খরচ বৃদ্ধি পেলে আবার গ্রাহক পর্যায়ে দাম বাড়াতে হবে। শুধু ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের কারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পিডিবি’র লোকসান হয় ১ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা। সে সময় ডলারের গড় বিনিময় হার ছিল ৯৯ টাকা ৪৫ পয়সা।

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) প্রতি মাসের শুরুতে বেসরকারি পর্যায়ের এলপি গ্যাসের খুচরা দাম নির্ধারণ করে। বিদ্যুতের দাম নির্ধারণে এখন আর বিইআরসিতে গণশুনানিতে যেতে হয় না। নির্বাহী আদেশেই সরকার দাম নির্ধারণ করে। ডিজেল, অকটেন ও পেট্রোলের দাম বর্তমানে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে নির্ধারণ করা হয়। এর প্রায় পুরোটুকুই আমদানি করা হয়। বিপিসি’র এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ডলারের দাম বাড়ায় লিটারে তেলের দামও বাড়বে। অর্থ বিভাগের হিসাব বলছে, ডলারের দাম এক টাকা বাড়লে বিদ্যুতে ভর্তুকি বাড়ে প্রায় ৪৭৪ কোটি টাকা। ডলারের দাম ৭ টাকা বাড়ায় ভর্তুকি বাড়বে প্রায় ৩ হাজার ৩১৮ কোটি টাকা। বেসরকারি বিদ্যুৎ উদ্যোক্তারা বলেন, ডলার সংকট ও বকেয়ার কারণে ঠিকমতো এলসি খোলা যাচ্ছে না। ডলার সাপোর্টে তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের সহযোগিতা চেয়েছেন। এখন আবার দাম বাড়লো।

বিদ্যুতের দাম কতো করে বাড়তে পারে-জানতে চাইলে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক (ডিজি) প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন মানবজমিনকে বলেন, খুচরা পর্যায়ে গত দফায় ৮ শতাংশ বেড়েছে। এটা হয়তো এই দফায় ৫ থেকে ৮ শতাংশ হতে পারে। বছরে ৪ থেকে ৫ বার বিদ্যুতের দামের সমন্বয়ে এরকম বৃদ্ধিরও ইঙ্গিত দেন তিনি।

প্রসঙ্গত, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণপ্রাপ্তির শর্ত মেনে গত বুধবার ডলারের নতুন দর নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে ডলারের দাম ১১০ টাকা থেকে বেড়ে ১১৭ টাকা হয়ে যায়। অর্থাৎ ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমেছে ৬ দশমিক ৩৬ শতাংশ। তবে খোলাবাজারে প্রতি ডলারের দাম ১২৫ টাকার কম নয়।

https://mzamin.com/news.php?news=109627