১৭ এপ্রিল ২০২৪, বুধবার, ৫:৪২

অস্থিরতায় আলুর বাজার

আলুর বাজার কোন ভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না বরং যতই দিন যাচ্ছে ততই পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। বাজার সংশ্লিষ্টরা জানাচ্ছেন, উৎপাদন মৌসুম শেষ হতে না হতেই এবার আলুর বাজার বেশ চড়া। বাজারে ইতিমধ্যে আলুর দাম কয়েক দফা বেড়েছে। আর তা এখনো অব্যাহতই রয়েছে। তাতে আলু এবার মোটা চালের দামকে পেছনে ফেলে দিয়েছে বলে মন্তব্য করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী বাজারে প্রতি কেজি মোটা চাল (স্বর্ণা ও চায়না ইরি) ৫০ থেকে ৫২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর রাজধানীতে খুচরা পর্যায়ে প্রতিকেজি আলুর সর্বনিম্ন দামই এখন ৫০ টাকা। এলাকা বা বাজারভেদে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়ও বিক্রি হওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে।

রাজধানীর বাজারে ঈদের আগেই আলুর কেজিপ্রতি দাম বেড়ে ৫০ টাকার আশপাশে চলে আসে। ঈদের পরে আরেক দফা দাম বেড়েছে। এখন বড় বাজারগুলোয় প্রতি কেজি আলু ৫০ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে দোকান কম খোলায় পাড়ামহল্লা ও বাজারের বিক্রেতাদের কেউ কেউ খুচরায় ভালো মানের প্রতিকেজি আলু ৬০ টাকা পর্যন্ত রাখছে। বাজার সংশ্লিষ্টরা জানাচ্ছেন, প্রতি পাল্লা (৫ কেজি) আলু বিক্রি হচ্ছে ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা। তাতে করে পাইকারিতেই প্রতি কেজি আলুর দাম পড়ছে ৪৮ থেকে ৫০ টাকা, যা খুচরা পর্যায়ে আরও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।

ব্যবসায়িরা জানাচ্ছেন, বাজারে আলুর সঙ্কট রয়েছে। আর দামও আগে থেকেই বাড়তির দিকে ছিল। সব মিলিয়ে ঈদের পরে পাইকারিতে দাম নতুন করে ৪ থেকে ৫ টাকার মতো বেড়েছে। বাজার সংশ্লিষ্টরা দাবি করছেন, ঈদের পরে পাইকারি বাজার থেকে প্রতিকেজি আলু ৫ টাকা বেশি দিয়ে কিনতে হয়েছে। খুচরায় আমরাও সেই ৫ টাকাই বাড়িয়েছি। এবার ভরা মৌসুমেও আলুর দাম বেশি ছিল।

বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন বা হিমাগার সমিতি সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিল, এবার বছরব্যাপী প্রতিকেজি আলু ৫০ টাকার ওপরে কিনতে হবে। কিন্তু মৌসুম শেষ হতে না হতেই বাজারে আলুর দাম কয়েক দফা বেড়েছে। টিসিবির তথ্যমতে, গত বছরের এই সময়ে বাজারে আলুর কেজিপ্রতি দাম ছিল ২৪ থেকে ৩০ টাকা; অর্থাৎ এ বছর আলু প্রায় দ্বিগুণ দামে কিনতে হচ্ছে ভোক্তাদের।

বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, এবার কৃষকের কাছ থেকেই বেশি দামে আলু বাজারে এসেছে। হিমাগারে রাখা আলুর দামও বেশি পড়ছে। এ ছাড়া গত বছর আলুর যে সংকট হয়েছিল, তা কাটিয়ে ওঠার জন্য বাড়তি যে উৎপাদন দরকার ছিল, সেটা হয়নি। সব মিলিয়ে এবার আলুর দাম বেশি থাকবে বলে ধারণা দেন তিনি।

সরকার অবশ্য দেশের বাজারে আলুর সংকট নিরসনে এটি আমদানির অনুমতি দিয়ে রেখেছে। তবে পার্শ্ববর্তী দেশেও আলুর দাম বেশি থাকায় আমদানিকারকদের মধ্যে তেমন আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, কিছু আমদানিকারক সামান্য পরিমাণে আলু নিয়ে আসছেন। ঈদের আগে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে ভারত থেকে আমদানি করা আলু রাজশাহীর কয়েকটি হিমাগারে মজুত করা হয়েছে। বস্তা পরিবর্তন করে ওই আলু দেশি আলুর সঙ্গে হিমাগারে রাখা হয়েছে। কিন্তু এতেও পরিস্থিতির তেমন কোন উন্নতি হয় বরং বাজারে আলুর দাম এখন অকাশ ছুঁয়েছে।

মওসুম শেষ হতে না হতেই আলুর এমন মূল্যবৃদ্ধি কোন ভাবেই যৌক্তিক ও কাক্সিক্ষত নয়। এজন্য বাজার সংশ্লিষ্টরা সিন্ডিকেট ও অসাধু ব্যবসায়িদের দায়ি করলে সরকার বা সরকারি সংস্থাগুলো এদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। ফলে লাগামহীনভাবে বেড়েছে আলুর দাম। যা কোন ভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যা্েছ না। এমতাবস্থায় আলুর বাজার নিয়ন্ত্রণে অসাধু ব্যবসায়ি ও সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। অন্যথায় আগামী দিনে পরিস্থিতির আরো অবনতি হতে পারে।

https://www.dailysangram.info/post/553731