২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, মঙ্গলবার, ১১:২৮

চুড়িহাট্টায় অগ্নিকাণ্ডের ৫ বছর

ঝুঁকিপূর্ণ কারখানা দিব্যি বহাল

পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পাঁচ বছর পরও সেখান থেকে ঝুঁকিপূর্ণ রাসায়নিক কারখানাগুলো কেরানীগঞ্জে স্থানান্তর করা হয়নি। এতে ওই এলাকায় আবার বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ড ঘটার মতো ঝুঁকি রয়ে গেছে।

এ ব্যাপারে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ভাষ্য, তারা মন্ত্রিপরিষদ সভার সিদ্ধান্ত ও নির্দেশ অনুযায়ী ঝুঁকিতে থাকা কারখানাগুলোর তালিকা করে পাঠিয়েছে। বাকি কাজ শিল্প মন্ত্রণালয়ের।

শিল্প মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বলছে, এ বিষয়ে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। এর মেয়াদ এখনো শেষ হয়নি।
২০১৯ সালে ২০ ফেব্রুয়ারি চুড়িহাট্টার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৭১ জনের মৃত্যু ঘটে। এ ঘটনায় পুরান ঢাকার সব রাসায়নিক কারখানা (কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি) কেরানীগঞ্জে সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

সে অনুযায়ী ২০২০ সালের ৮ অক্টোবর মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে পুরান ঢাকার রাসায়নিক পণ্যের গুদামগুলোর তালিকা তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়।

ডিএসসিসি সূত্র জানায়, তাদের আওতাধীন এলাকায় বিস্ফোরকজাতীয় প্লাস্টিক ও কেমিক্যাল ব্যবসা পরিচালনা করা প্রতিষ্ঠানগুলোর তালিকা করতে ২০২০ সালের ২০ ডিসেম্বর থেকে জরিপকাজ শুরু হয়। ২০২১ সালের এপ্রিলে প্রতিষ্ঠানগুলোর তালিকা পাঠায় তারা। তালিকায় অঞ্চল ৩, ৪ ও ৫ এলাকায় অনুসন্ধান চালিয়ে এক হাজার ৯২৪টি রাসায়নিক দ্রব্যের গুদাম ও কারখানার তথ্য দেওয়া হয়।
এর মধ্যে অঞ্চল-৩-এ এক হাজার ৩০১টি, অঞ্চল-৪-এ ৫৮৫টি এবং অঞ্চল-৫-এ ৩৮টি গুদাম ও প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব কারখানা এখনো পুরান ঢাকার আগের জায়গায় ব্যবসা পরিচালনা করছে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবু নাছের কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘২০২১ সালের এপ্রিলে মন্ত্রিপরিষদের কাছে আমরা কেমিক্যাল কারখানার ধরন অনুযায়ী একটি তালিকা পাঠিয়েছি। এখন যা কাজ, সব শিল্প মন্ত্রণালয়ের। সিটি করপোরেশন বাণিজ্য পরিচালনার যে ট্রেড লাইসেন্স দিয়ে থাকে, সেটি বন্ধ রেখেছি।

এতে ব্যাপক রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। সরকারি সিদ্ধান্তের আলোকে আমাদের পদক্ষেপ চালু রয়েছে।’
বিভিন্ন সময় দক্ষিণের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেছেন, ‘আমি দায়িত্ব নিয়ে বলতে পারি, আমি অবাক হই, সিটি করপোরেশন থেকে বাণিজ্যিক অনুমতি ছাড়াই কিভাবে তারা এই রাসায়নিক দ্রব্য আমদানি করে, কিভাবে গুদামজাত করে এবং কিভাবে তারা ব্যবসা পরিচালনা করে চলেছে?’

সিটি করপোরেশন সূত্র বলছে, কেরানীগঞ্জে এসব গুদাম স্থানান্তরের একটি প্রকল্প নিয়েছে শিল্প মন্ত্রণালয়। অবৈধ রাসায়নিক গুদামের তালিকা করার কথা বলা হয়েছিল। তা সম্পন্ন করা হয়েছে অনেক আগে। কিন্তু আজও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি) এটি দেখে থাকে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা জানান, ব্যবসায়ীদের সরে যেতে উৎসাহিত করতে শুরুতে যে দাম ধরা হয়েছিল, সেটি কমানো হয়েছে। পরিমাণে তা প্রায় অর্ধেকে নামানো হয়েছে। এরপর দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। দরপত্রের মেয়াদ শেষ হলে কোন ব্যবসায়ীরা যাচ্ছেন, তা বোঝা যাবে।

বিচারের অপেক্ষায় নিহতদের পরিবার
চকবাজারের চুড়িহাট্টায় অগ্নিকাণ্ডে ৭১ জনের প্রাণহানির ঘটনায় নিহত জুম্মন নামের এক ব্যক্তির ছেলে মো. আসিফ বাদী হয়ে চকবাজার মডেল থানায় মামলা করেন। ওয়াহেদ ম্যানশনের মালিকের দুই ছেলে হাসান ওরফে হাসান সুলতান ও সোহেল ওরফে সোহেল শহীদসহ অজ্ঞাতনামা ১০ থেকে ১২ জনের বিরুদ্ধে এ মামলা করা হয়। এই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পাঁচ বছর পূর্ণ হয়েছে আজ। কিন্তু মামলার বিচার এখনো শেষ হয়নি, বিচারের অপেক্ষায় নিহতদের পরিবার।

https://www.kalerkantho.com/online/national/2024/02/20/1365218