২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, মঙ্গলবার, ১১:২৮

টেকনাফের মানুষ আতঙ্কে

রাতভর শান্ত থাকার পর টেকনাফ সীমান্তের ওপারে মিয়ানমার থেকে গতকাল সোমবার সকালে বেশ কয়েকবার বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া গেছে। স্থানীয়দের ভাষ্য, বিস্ফোরণের শব্দ তাদের কাছে ভূমিকম্পের মতো মনে হয়েছে। এই সংঘর্ষের মধ্যে গত শনিবার বিকেলে একজন গুলিবিদ্ধ নারীসহ পাঁচজন রোহিঙ্গা একটি ছোট নৌকা নিয়ে শাহপরীর দ্বীপ জেটিতে আসেন। তাদের ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। তবে আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, গুলিবিদ্ধ ওই নারীকে চিকিৎসাসেবা দেয়া হয়েছে।

স্থানীয়রা বলছেন, মিয়ানমারের এপারে বাংলাদেশের কক্সবাজার টেকনাফ উপজেলার শাহপরীর দ্বীপ ও এর আশেপাশের এলাকায় এই আওয়াজ শোনা গেছে। টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের নয় নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আব্দুস সালাম জানান, সোমবার সকাল আটটা থেকে ১০টা পর্যন্ত তারা তিনবার বিকট বিস্ফোরণের আওয়াজ পেয়েছেন। বিস্ফোরণের শব্দের সময় ভূমিকম্পের মতো মনে হয়েছে। এতে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা না থাকলেও সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। তিনি আরও জানান, এখনো রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশের বড় কোনো ঘটনা ঘটেনি। তবে ওপারে সংঘর্ষের মাত্রা বাড়লে আবারও বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের ঢল নামতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন। কোস্টগার্ডের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা শনিবার তিনজন রোহিঙ্গাকে শাহপরীর দ্বীপ থেকে ফিরিয়ে দিয়েছেন। ওই রোহিঙ্গাদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ নারীর স্বামীও ছিলেন।

টেকনাফ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, সোমবারও সীমান্তের বিভিন্ন জায়গায় গোলাগুলির শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। তবে সেটি মিয়ানমারের অনেক ভেতরে। তবে নতুন করে যাতে কেউ সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ করতে না পারে সেজন্য আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছি। সীমান্তে গোলাগুলিতে নিরাপত্তার কারণে নাফ নদের শাহপরীর দ্বীপ জেটিতে মানুষ চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, রোববার পর্যন্ত শাহপরীর দ্বীপসহ কয়েকটি সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশকালে ১৬৫ জন রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি সীমান্তে বসবাসকারী লোকজনকে জরুরি কাজ ছাড়া সীমান্তে ঘোরাঘুরি করতে নিষেধ করা হয়েছে।

শাহপরীর দ্বীপ জেটি ঘাটের টোল আদায়কারী সিদ্দিক আহমদ বলেন, নাফ নদের বুকে জেটিঘাটে ভ্রমণে প্রতিনিয়ত মানুষের আনাগোনা ছিল। কিন্তু সীমান্তের গোলাগুলি বেড়ে যাওয়ায় নিরাপত্তার কারণে এই জেটিতে দুই দিন ধরে যাতায়াত বন্ধ রাখা হয়েছে। কিছুদিন আগেও টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে পর্যটকবাহী জাহাজ বন্ধ ছিল। আমরা যারা সীমান্তের বাসিন্দা রয়েছি, তাদের ওপর ওপারের গোলাগুলির ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। টেকনাফের হ্নীলার বাসিন্দা মো. সাইফুল বলেন, আমার এলাকায় রাতে অনেক ভারী গোলার শব্দ পাওয়া গেছে। সকাল থেকে গোলার শব্দ কমেছে। কিন্তু থেমে থেমে গোলার শব্দ পাচ্ছে সীমান্তের লোকজন। ফলে মানুষের মাঝে ভয়ভীতি কমেনি।
এদিকে, মিয়ানমারের রাখাইনে জান্তা বাহিনী এবং সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির মধ্যে যুদ্ধে রাখাইনের মংডু শহরের বাঘগোনা, হাদিবিল, নলবনিয়া নয়াপাড়া গ্রামে হেলিকপ্টার দিয়ে হামলা চালানো হয়েছে। এ জন্য কয়েকদিন ধরে এসব এলাকার প্রায় চার হাজার লোক বাড়িঘর ছেড়ে সীমান্তবর্তী সিকদারপাড়া ও মন্নিপাড়া গ্রামে আশ্রয় নিয়েছেন। তারা সুযোগ বুঝে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের জন্য অপেক্ষা করছে বলে জানা গেছে। টেকনাফের জাদিমুড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা হাসমত উল্লাহ বলেন, মংডু শহরের এতিল্লাপাড়ায় বসবাসরত চাচাতো ভাই আব্দুল্লাহর সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান, তাদের অবস্থা খুবই খারাপ। মিয়ানমার জান্তা সরকার তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে বলেছে।

অস্ত্রসহ আটক ২২ রোহিঙ্গার ১১জন রিমান্ড শেষে কারাগারে: উখিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নাছির উদ্দিন মজুমদার বলেন, দুইধাপে ২২ রোহিঙ্গাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের সিদ্ধান্ত হয়। তারই ধারাবাহিকতায় প্রথমধাপে ১১ জন রিমান্ড শেষে আদালতে তোলার পর দ্বিতীয় ধাপে বাকি ১১ জনকে নেয়া হচ্ছে। মিয়ানমারের জান্তা সরকার ও বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) মধ্যে চলমান সংঘাতের জেরে অস্ত্রসহ বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী দেশটির ১১ রোহিঙ্গা নাগরিককে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ। একইসঙ্গে অপর ১১ রোহিঙ্গাকে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। গত ১২ ফেব্রুয়ারি ২২ রোহিঙ্গা নাগরিককে তিন দিন করে রিমান্ডে নেয়ার আদেশ দেন কক্সবাজারের জেষ্ঠ বিচারিক হাকিম শ্রীজ্ঞান তঞ্চঙ্গা।

গত ৯ ফেব্রুয়ারি রহমতের বিল সীমান্ত দিয়ে অস্ত্রসহ অনুপ্রবেশের পর তাদের আটক করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ৩৪ ব্যাটালিয়নের পালংখালী বিওপির নায়েক সুবেদার মো. শহিদুল ইসলাম উখিয়া থানায় অস্ত্র আইনে মামলা করেন। সে মামলা আরও তদন্ত ও অস্ত্রসহ কেন তারা বাংলাদেশে প্রবেশ করছিলেন, তা জানার জন্য আটককৃতদের ১০ দিন করে রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। এদের কাছ থেকে মোট ১২টি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে এসএমজি পাঁচটি, জি-৩ রাইফেল একটি, পিস্তল দুইটি, রিভলভার চারটি। এছাড়া ১৯৮ রাউন্ড এসএমজি গুলি, ৯৮ রাউন্ড এমজি গুলি, ২৭৬ রাউন্ড রাইফেলের গুলি, ১০৩ রাউন্ড জি-৩ রাইফেলের গুলি, ১৯৩ রাউন্ড পিস্তলের গুলি ইত্যাদি।

https://dailyinqilab.com/national/article/640004