২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, মঙ্গলবার, ১১:২৫

আগুনে পুড়লো ঝিলপাড় বস্তির ৬শ’ ঘর

এখানেই আমার ঘর ছিল, সব পুড়ে ছাই

এখানেই আমার ঘর ছিল। ঘরে টিভি, ফ্রিজ, আসবাবপত্র সব ছিল। এখন কিছুই নেই। সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আব্দুল হালিমের মতো আরও অনেকেই এভাবে বিলাপ করছেন। সোমবার দুপুর ১টার একটু আগে হালিমের মতো রাজধানীর মিরপুর-১২ নম্বরের ঝিলপাড় বস্তির ৬শ’ ঘর আগুন পুড়ে যায়।

আগুন নেভাতে যোগ দেয় ফায়ার সার্ভিস। পরে যোগ দেয় সেনাবাহিনীও। ফায়ার সার্ভিসের ৮ ইউনিটের ঘণ্টাখানিকের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও পুড়ে গেছে বস্তির প্রায় ৬শ’ ঘর। পোড়া টিনের মাঝে এখন শুধু দাঁড়িয়ে আছে কংক্রিটের পিলারগুলো। আগুনে সর্বস্ব হারিয়ে বিলাপ করছে অনেকে।

কেউ আবার পোড়া ধ্বংসাবশেষের মধ্যে খুঁজছেন নিজের শেষ সম্বল। খোলা আকাশের নিচে বউ-বাচ্চা নিয়ে রাত পার করা নিয়ে দুশ্চিন্তায় বেশির ভাগ মানুষ।

সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, দুপুর দু’টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পরপরই পোড়া বস্তিতে প্রবেশ করেন বাসিন্দারা। এমনই একজন আব্দুল হালিম। পুড়ে যাওয়া ধ্বংসাবশেষ দেখিয়ে অশ্রুসিক্ত হয়ে তিনি বলেন, এখানেই আমার ঘর ছিল। ঘরে টিভি, ফ্রিজ, আসবাবপত্র সব ছিল। এখন কিছুই নেই। সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এখন বউ-বাচ্চা নিয়ে কোথায় যাবো? কি করবো? কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না! আনোয়ারা বেগম নামে ষাটোর্ধ্ব এক নারী বলেন, আগুন লাগার সময় আমি আর আমার মেয়ে শুধু জীবনটা নিয়ে বের হয়েছি। কিছুই বাঁচাতে পারিনি। সব শেষ হয়ে গেছে। তিল তিল করে কয়টা টাকা জমিয়েছিলাম তাও পুড়ে গেছে। এখন সারাটা জীবন কীভাবে চলবো, মেয়েটার কীভাবে বিয়ে দেবো তা ভেবে ভেবে কূল- কিনারা পাচ্ছি না। এদিকে পুড়ে যাওয়া ঘরের আসবাবপত্রের মধ্যে কি যেন খুঁজছিলেন লিয়াকত আলী। কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করতেই কেঁদে ওঠেন। বলেন, খাট, টিভি, আলমারি, দৈনন্দিন বাসন থেকে শুরু করে সব পুড়ে গেছে। ব্যবসার জন্য কিছু টাকা জমিয়েছিলাম। তাও ছাই হয়ে গেছে। মাত্র এক ঘণ্টার আগুনে সর্বস্ব হারিয়ে আমি নিঃস্ব। এখন লোনের কিস্তির টাকা কীভাবে শোধ করবো আর বউ-বাচ্চাকে কী খাওয়াবো কিছুই বুঝতে পারছি না। এদিকে আগুন লাগার বিষয়ে ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, সোমবার দুপুর ১২টা ৫৭ মিনিটে মিরপুর ঝিলপাড় বস্তিতে আগুন লাগার সংবাদ পাই আমরা। খবর পেয়ে প্রথমে ৪টি ইউনিট ঘটনাস্থলে যায়। এরপর আরও ৪টি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। ৮টি ইউনিটের সমন্বিত চেষ্টায় এক ঘণ্টার মধ্যেই আগুন নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। তিনি বলেন, কোথাও আগুন লাগলে আমাদের প্রথম কাজ থাকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা। তবে টিন-কাঠের অবকাঠামো হওয়ায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এরপরও ফায়ার সার্ভিস সদস্যের প্রচেষ্টায় দ্রুত সময়ের মধ্যেই আগুন নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। তবে ঠিক কী কারণে আগুন লেগেছে বা আগুনের সূত্রপাত কীভাবে হয়েছে তা প্রাথমিকভাবে বলা যাচ্ছে না। তদন্তের পরই আগুনে ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে বলা যাবে। আগুনে হতাহত বা আহত-নিহতের কোনো খবরও পাওয়া যায়নি বলে জানান ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের এই কর্মকর্তা। প্রসঙ্গত, গত বুধবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে রাজধানীর মিরপুর-১৪ নম্বরে বাগানবাড়ী বস্তিতে আগুন লাগে। পরে খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি ইউনিট প্রায় আধাঘণ্টা চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। ওই ঘটনায় কেউ হতাহত না হলেও বস্তির প্রায় ৩০টির মতো বাড়িঘর পুড়ে যায়।

https://mzamin.com/news.php?news=98475