৫ মার্চ ২০১৬, শনিবার, ১০:৫৮

ভারতীয় বিজেপির দুই শীর্ষ নেতার বক্তব্যে বাংলাদেশের জনগণ দারুণভাবে বিস্মিত ও হতবাক

ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি’র কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাম মাধব বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী এবং পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর উপস্থিতিতে ৪ মার্চ “বাংলাদেশে গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত রয়েছে” এবং পশ্চিম বঙ্গের বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ বীরভূম জেলার সিউড়িতে সাংবাদিকদের সামনে “প্রয়োজনে লাথি মেরে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়া হবে” এবং “বুলেট দিয়ে প্রয়োজনে বাংলাদেশকেও ঠাণ্ডা করে দেয়া হবে” মর্মে যে সব বক্তব্য দিয়েছেন সে সম্পর্কে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারী জেনারেল ডাঃ শফিকুর রহমান আজ ৫ মার্চ প্রদত্ত এক বিবৃতিতে বলেন, “ভারতীয় বিজেপির দুই শীর্ষ নেতার বক্তব্যে বাংলাদেশের জনগণ দারুণভাবে বিস্মিত ও হতবাক।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারীর বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনকে বিশ্বের কোন দেশই নৈতিকভাবে স্বীকৃতি দেয়নি। কারণ এ নির্বাচনে বাংলাদেশের জনগণ অংশগ্রহণ করেনি। ১৫৪ জন বিনা ভোটে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন, যা বিশ্বের গণতান্ত্রিক ইতিহাসে কখনো ঘটেনি। যদিও সে সময় ভারত সরকারের ভূমিকা বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য মোটেই সহায়ক ছিল না।

যেহেতু এ নির্বাচন বাংলাদেশ এবং বিশ্বে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি সে কারণে ঐ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সরকারকে কোনভাবেই গণতান্ত্রিক সরকার বলা যায় না এবং এ সরকার গত দুই বছরে সর্ব ক্ষেত্রে তারই প্রমাণ দিয়েছে।

বহুদলীয় গণতন্ত্রকে হত্যা করে একদলীয় শাসন কায়েমের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য গণবিরোধী সকল কর্মকাণ্ড এ সরকার পরিচালনা করে যাচ্ছে। শুধু জাতীয় নির্বাচনই নয়, স্থানীয় সরকার নির্বাচনের বিভিন্ন পর্যায়ে তারা গায়ের জোরে একদলীয় রাজনীতি চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের অধীনে কোন নির্বাচনই সুষ্ঠু হচ্ছে না। এ সব বিষয়ে বিশ্বের প্রায় সকল গুরুত্বপূর্ণ দেশ এবং সংস্থা তাদের মনোভাব দফায় দফায় এ সরকারকে জানিয়ে আসছে এবং অবিলম্বে গণতান্ত্রিক ধারা ফিরিয়ে আনার স্বার্থে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য এবং সকল দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের আয়োজন করার জন্য তাগিদ দিয়ে আসছে।

আমরা আশা করি ভারত আমাদের নিকটতম প্রতিবেশি দেশ হিসেবে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ধারা ফিরিয়ে আনা ও বিকাশের স্বার্থে তাদের নিজস্ব অবস্থান থেকে সম্ভাব্য সব কিছু করবে। ভারত সরকারের প্রতি আমাদের অনুরোধ আপনারা গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের পাশে দাঁড়াবেন, কোন ব্যক্তি বা দল বিশেষের পাশে নয়।

পশ্চিম বঙ্গের বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ “প্রয়োজনে লাথি মেরে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়া হবে” এবং “বুলেট দিয়ে প্রয়োজনে বাংলাদেশকেও ঠাণ্ডা করে দেয়া হবে” মর্মে যে সব বক্তব্য দিয়েছেন তাতে বাংলাদেশের জনগণ দারুণভাবে বিস্মিক ও হতবাক হয়েছে। ভারতের অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃক্সখলা, স্বাধীনতা ও অখণ্ডতা বিঘ্নকারী কোন কাজে তাদের দেশের কোন নাগরিক জড়িত থাকলে ভারতের বিদ্যমান আইনে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার পূর্ণ অধিকার এবং দায়িত্বও সে দেশের সরকারের রয়েছে। এ বিষয়ে আমাদের বলার কিছু নেই। কিন্তু ভারতের অভ্যন্তরীণ কোন বিষয়ের সাথে আমাদের প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশকে জড়িয়ে পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নেতা “প্রয়োজনে লাথি মেরে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়া হবে” এবং “বুলেট দিয়ে প্রয়োজনে বাংলাদেশকেও ঠাণ্ডা করে দেয়া হবে” মর্মে যে সব বক্তব্য দিয়েছেন তা খুবই দুঃখজনক, অনাকাক্সিখত, অন্যায্য এবং অগ্রহণযোগ্য।

আমরা ভারতের সরকার, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, বিশিষ্ট নাগরিক এবং ভারতের জনগণের কাছ থেকে কেবল সৎ প্রতিবেশি সুলভ আচরণই আশা করি। ভবিষ্যতে দুই দেশের জনগণ এবং সরকারের মধ্যে ভুল বুঝাবুঝি সৃষ্টি হয় কিংবা পারস্পরিক সম্পর্ক বিঘ্নিত হওয়ার কারণ ঘটতে পারে এ ধরনের বক্তব্য প্রদান করা থেকে বিরত থাকার জন্য আমরা ভারত সরকার ও বিজেপির নেতৃবৃন্দসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আন্তরিকভাবে আহবান জানাচ্ছি।”