সারাদেশে গণগ্রেফতার, হামলা-মামলা ও রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন এবং মিথ্যাচার বন্ধের আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা’ছুম ২৬ জুলাই এক বিবৃতি প্রদান করেছেন।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, “বাংলাদেশের জনগণ ও বিশ্ববাসীর নিকট এটা দিবালোকের মত স্পষ্ট যে, সরকারের মন্ত্রীগণ আন্দোলনকারী ছাত্রদের মোকাবেলার জন্য ছাত্রলীগই যথেষ্ট বলে ঘোষণার পর থেকেই সারাদেশে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা শুরু হয়। সরকার পরিকল্পিতভাবে গণহত্যা চালানোর কারণে জনগণ সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। জনগণের ক্ষোভ দমনের জন্য সেনা মোতায়েন ও কারফিউ জারি করা হয়। সরকারের বিরুদ্ধে শিল্পী, অভিনেতা—অভিনেত্রী, নির্মাতা, প্রযোজক, বুদ্ধিজীবীসহ সর্বস্তরের জনগণ অবস্থান নেয়ায় সরকার দিশেহারা হয়ে জনরোষ থেকে বাঁচার জন্য জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ছাত্রশিবির ও বিরোধী রাজনীতির ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা চালাচ্ছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার বলেছেন, ‘অনেক লোক সরকারের সঙ্গে সম্পৃক্ত গোষ্ঠীগুলির দ্বারা সহিংস আক্রমণের শিকার হয়েছিল এবং তাদের সুরক্ষার জন্য কোনো প্রচেষ্টা করা হয়নি।’ অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের ভিডিও ও ছবির ক্রমাগত যাচাই ও বিশ্লেষণ করে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে যে, ‘প্রতিবাদ দমনে আইন—শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রাণঘাতী ও মৃদু প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার করেছে এবং সেখানকার এক ভয়াবহ চিত্র ফুটে উঠেছে। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে যে, র্যাবের কর্মকাণ্ডে আশস্ত হওয়া যায় না যে, আন্দোলনকারীদের অধিকার সুরক্ষিত থাকবে।’ দেশবাসী মনে করে, সরকার নিজেদের সৃষ্ট বিভৎস তাণ্ডবতা ধামাচাপা দেয়ার জন্য মিথ্যাচার শুরু করেছে। মিথ্যাচার চালিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করা যাবে না।
বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্রের আইন—শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সারাদেশে গণগ্রেফতার অভিযান পরিচালনা করছে। জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ বিরোধীদলের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়ে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হচ্ছে। দেশের জনগণকে ভয়ভীতি দেখিয়ে এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে। আমরা সরকারের অন্যায় গণগ্রেফতার, মিথ্যা মামলা দায়ের এবং জুলুম—নির্যাতনের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, দেশবাসী ভাল করেই জানে যে, সরকার নিজেই দেশে অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করেছে। উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে নেহায়েত একটি অরাজনৈতিক শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে সহিংসতায় রূপ দেয়া হয়েছে। ছাত্রদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে দমনের জন্য বিরোধী রাজনৈতিক দলকে জড়িয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের অপচেষ্টা চালানো হয়েছে। ছাত্রলীগ, যুবলীগ, শ্রমিকলীগ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের মাঠে নামিয়ে দেশে গণহত্যা সংঘটিত করা হয়েছে। দেশের শান্তিপূর্ণ ক্যাম্পাস ও রাজপথ রক্তে রঞ্জিত করা হয়েছে। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের নির্মমভাবে নিহত করে শতশত মায়ের বুক খালি করেছে এবং হাজার হাজার মানুষকে পঙ্গু করে দিয়েছে। এখনো বহু শিক্ষার্থী নিখোঁজ রয়েছে।
সরকার মিডিয়ার সামনে মায়াকান্না করে জনগণকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টায় নিয়োজিত আছে। মিথ্যা প্রপাগান্ডা চালিয়ে দেশের নাগরিকদের এবং বিশ্ববাসীকে বিভ্রান্ত করা যাবে না। সহিংসতার সকল দায়—দায়িত্ব সরকারকেই বহন করতে হবে এবং জনগণের নিকট জবাবদিহি করতে হবে। দিতে হবে প্রতিটি গণহত্যার হিসাব। নির্মম গণহত্যার দায় আওয়ামী লীগ কখনো এড়াতে পারবে না।
আমরা সরকারের উদ্দেশে বলতে চাই, হুমকি—ধমকি দিয়ে কোনো লাভ হবে না। সরকারের সমস্ত চক্রান্ত—ষড়যন্ত্র ফাঁস হয়ে গিয়েছে। দেশের জনগণ তাদের প্রতিবাদী কণ্ঠ উচ্চকিত করেছে। দেশের নাগরিকদের আর কষ্ট দিবেন না। বিভ্রান্তি না ছড়িয়ে দেশে শান্তি—স্বস্তি ফিরিয়ে আনুন।
আইন—শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উদ্দেশে বলতে চাই, আপনারা রাষ্ট্রের সেবক। দেশের আইন—শৃঙ্খলা রক্ষা করা আপনাদের দায়িত্ব। কারো লেজুরবৃত্তি করা আপনাদের দায়িত্ব নয়। কাজেই জালিম সরকারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত না হয়ে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করুন এবং প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেফতার করে আদালতের হাতে সোপর্দ করুন।
গণগ্রেফতার বন্ধ, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং সারাদেশে সৃষ্ট সহিংসতার দায় জামায়াতে ইসলামীসহ বিরোধীদলের ওপর চাপানোর অপচেষ্টা বন্ধ করে ছাত্রদের সকল যৌক্তিক দাবি মেনে নিয়ে দেশে শান্তি ও স্বস্তির পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য আমরা সংশ্লিষ্ট মহলের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।”