২৪ জুলাই ২০২৪, বুধবার, ৬:৩০

অবিলম্বে কারফিউ প্রত্যাহার এবং ছাত্রসমাজের দাবি মেনে নিয়ে দেশে শান্তি ও স্বস্তির পরিবেশ ফিরিয়ে আনার আহ্বান

-মাওলানা এটিএম মা’ছুম

দেশব্যাপী গণগ্রেফতার, সরকারের উস্কানিমূলক বক্তব্যের প্রতিবাদ, অবিলম্বে কারফিউ প্রত্যাহার এবং ছাত্রসমাজের দাবি মেনে নিয়ে দেশে শান্তি ও স্বস্তির পরিবেশ ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা’ছুম ২৪ জুলাই এক বিবৃতি প্রদান করেছেন।

বিবৃতিতে তিনি বলেন, “ছাত্রসমাজের অরাজনৈতিক আন্দোলনকে দমনের জন্য সরকার তার দলীয় ক্যাডার ও পুলিশ বাহিনীকে দিয়ে দেশে গণহত্যা চালিয়ে এক রক্তাক্ত পরিবেশ তৈরি করেছে। সরকার প্রধান প্রকৃত সত্য আড়াল করে দেশে গণহত্যার দায় জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবির এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলের ওপর চাপানোর চেষ্টা করেছেন। শুধু তাই নয়, সারাদেশে গণগ্রেফতার চালিয়ে রাজনৈতিক নিপীড়ন শুরু করেছেন। প্রধানমন্ত্রী ‘সহিংস ঘটনা ঘটিয়েছে জামায়াত—শিবির’ মর্মে যে মিথ্যাচার চালিয়েছেন, তা জনগণ গ্রহণ করেনি। নিজের দলীয় ক্যাডারদের সৃষ্ট সন্ত্রাসের দায়ভার বিরোধী রাজনৈতিক দলের ওপর চাপানোর ঘৃণ্য কৌশলে জনগণ হতবাক হয়েছে।

২৪ জুলাই দেশের প্রায় সকল জাতীয় দৈনিকে দেশের বুদ্ধিজীবী, কলামিস্ট, সাংবাদিক, আইনজীবীগণ স্পষ্ট উল্লেখ করেছেন ছাত্রসমাজের অরাজনৈতিক দাবিকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করার লক্ষ্যেই প্রধানমন্ত্রী বিরোধী রাজনৈতিক দলের ওপর দোষ চাপাচ্ছেন। দেশের জনগণ দেখেছে কারা এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করেছে। সহিংস ঘটনা, অগ্নিসংযোগ ও রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি ধ্বংস করার কাজে কারা নিয়োজিত তার বর্ণনা গত কয়েক দিন যাবৎ গণমাধ্যমে প্রচারিত হচ্ছে। প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবরে বলা হয় চট্টগ্রামে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে গ্রেফতারকৃত এক যুবক স্পষ্ট উল্লেখ করেছেন যে, শ্রমিকলীগ নেতার নির্দেশে তিনি বিআরটিসি বাস ডিপোতে আগুন দেন। তাকে চার লাখ টাকা দেয়ার কথা বলে অগ্রিম ৫০০ টাকা দিয়ে এ অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটানো হয়। গ্রেফতারকৃত যুবকের বক্তব্যে প্রমাণিত হলো যে, অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটিয়েছে আওয়ামী লীগ সমর্থিত সংগঠন। অথচ প্রধানমন্ত্রী তার দায় চাপাচ্ছেন জামায়াত—শিবিরের ওপর।

বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায় ‘তাণ্ডবের গডফাদার কে?’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ছাত্রসমাজের অরাজনৈতিক আন্দোলনে সরকারের উস্কানিতে হিংসাত্মক পরিবেশ তৈরি হওয়ার পর কারা রাষ্ট্রীয় স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে তার একটি বিশ্লেষণ তুলে ধরা হয়েছে। এ বিশ্লেষণে জামায়াত ও বিরোধীদলের ওপর দায় চাপানোর অপচেষ্টার বিরুদ্ধে বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে।

দেশের শীর্ষস্থানীয় আইনজীবীগণ সরকারের দলীয় ক্যাডারদের হামলার কারণেই দেশে গণহত্যার ঘটনা ঘটেছে বলে মন্তব্য করেছেন। এসব মন্তব্য ও বক্তব্যের দ্বারা স্পষ্ট হয়েছে মূলত সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ‘সহিংস ঘটনার’ দায় অন্যদের ওপর চাপানোর বক্তব্য দিয়ে চরম মিথ্যাচার করেছেন। জনগণ তার এই বক্তব্য মেনে নেয়নি। দেশের প্রধান পুলিশ কর্মকর্তা ও ডিবি কর্মকর্তা পৃথক পৃথক বক্তব্যে জামায়াত—শিবির ও অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ারকে জড়িয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা সত্যের অপলাপ ছাড়া আর কিছু নয়।

কোটা আন্দোলনের সমন্বয়কগণ সংবাদ সম্মেলনে স্পষ্ট বলেছেন, ছাত্রলীগের হামলায় তারা যখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিলেন, তখন তারা দেশের জনগণ ও রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদেরকে তাদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছিলেন।

দেশবাসী অবগত আছেন, সেতুমন্ত্রী সাধারণ ছাত্রদের মোকাবেলার জন্য ছাত্রলীগই যথেষ্ট বলে বক্তব্য দেয়ার পরই দেশে নিরস্ত্র ছাত্রদের ওপর হামলা শুরু হয়। ১৬ জুলাই সারাদেশে ৭ জন সাধারণ ছাত্র প্রাণ হারায়। এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী ১৭ জুলাই জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। ১৮ জুলাই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জামায়াতে ইসলামী দেশব্যাপী সৃষ্ট নৈরাজ্য ও ছাত্র হত্যার ঘটনার নিন্দা জানিয়ে ছাত্রদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানায় এবং ছাত্রদের দাবি মেনে নেয়ার আহ্বান জানায়।

সরকারের ক্যাডার বাহিনী সারাদেশে ছাত্রদের ওপর হামলা চালায়। তারই ধারাবাহিকতায় গাজীপুরের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর তার বাহিনী নিয়ে নিরস্ত্র ছাত্রদের ওপর হামলা চালালে রাজধানী ঢাকার উত্তরা এলাকায় রক্তাক্ত ঘটনা ঘটে এবং ৩০ জনের প্রাণহানী ঘটে। আওয়ামী ক্যাডার জাহাঙ্গীর ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর তাণ্ডবতার দায় অবশ্যই সরকারকে বহন করতে হবে।

অনির্বাচিত, অবৈধ ও অগণতান্ত্রিক সরকার দেশে হত্যাকাণ্ড চালিয়ে এবং রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে ক্ষমতায় থাকার যে অপকৌশল গ্রহণ করেছে তা জনগণ সফল হতে দিবে না।

আইন—শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তাগণ রাজনৈতিক নেতার মত বক্তব্য দিয়ে পরিস্থিতি আরও জটিল করার চেষ্টা করছেন। আমরা তাদেরকে রাজনৈতিক বক্তব্য পরিহার করে পূর্ণ পেশাদারিত্বের সাথে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানাচ্ছি।

অবিলম্বে কারফিউ প্রত্যাহার, গণগ্রেফতার বন্ধ এবং হামলাকারী ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী ক্যাডারদের গ্রেফতার করে তাদেরকে বিচারের আওতায় আনা ও ছাত্রদের যৌক্তিক সকল দাবি মেনে নিয়ে দেশে শান্তি ও স্বস্তির পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য আমরা সংশ্লিষ্ট মহলের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।”