দেশব্যাপী গণগ্রেফতার, মামলা ও মিথ্যাচার বন্ধের আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা’ছুম ২৫ জুলাই এক বিবৃতি প্রদান করেছেন।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, “সরকার সারাদেশে গণগ্রেফতার চালিয়ে ও গ্রেফতারকৃতদের মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে আটক রেখে এক ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সরকারের মন্ত্রীগণ হুমকি দিচ্ছেন যে, এবার কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। হুমকি-ধমকি ও ভয়ভীতি সৃষ্টি করে এবং কারাগারে আটক রেখে গণহত্যার দায় এড়ানো যাবে না। সরকার অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে গণহত্যা চালিয়ে এখন আবোল-তাবোল কথা বলছেন।
বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের মানুষ জানে, প্রধানমন্ত্রীর গণভবনে প্রদত্ত সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্য ও সেতুমন্ত্রীর বক্তব্য ‘সাধারণ ছাত্রদের মোকাবেলায় ছাত্রলীগই যথেষ্ট’ এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী ‘আরেকবার যুদ্ধ করব’ মর্মে ঘোষণা দেয়ার পরই দেশে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগ ও রাষ্ট্রের আইন—শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গণহত্যা শুরু করে। মাত্র দুই থেকে তিন দিনেই শতশত মানুষ হত্যা করা হয়েছে। বহু মানুষ গুম করা হয়েছে। এই গণহত্যার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জনগণ আজ ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিবাদ জানাচ্ছে। শিল্পী, অভিনেতা, সুরকার, কলামিস্ট, লেখক, বুদ্ধিজীবীসহ সর্বস্তরের মানুষ গণহত্যার বিরুদ্ধে। সরকার চিরুনি অভিযানের নামে হাজার হাজার মানুষ গ্রেফতার করে কারাগার ভর্তি করেছে। কিন্তু জনগণের ক্ষোভ প্রশমিত হয়নি।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, সরকার মিথ্যা মামলা দিয়ে হাজার হাজার মানুষ কারাগারের পাঠাচ্ছে এবং আইনি সহায়তার পথ রুদ্ধ করে দিয়েছে। ২৪ জুলাই ঢাকা বারের সাবেক সহ—সভাপতি এডভোকেট এসএম কামাল উদ্দিন ও ঢাকা বারের সাবেক সদস্য এডভোকেট আজমত হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সরকার আইনজীবীদের গ্রেফতার করে বিচারপ্রার্থীদের বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। আমরা সরকারের এসব অমানবিক ও অগণতান্ত্রিক কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। অবিলম্বে এডভোকেট এসএম কামাল উদ্দিন ও এডভোকেট আজমত হোসেন—এর মুক্তি দাবি করছি।
কোটা আন্দোলনের সাথে সংশ্লিষ্ট ছাত্রদের সমন্বয়কগণ সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তাদের দাবি মেনে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তারা তাদের ওপর নির্যাতনের বিবরণ তুলে ধরে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা বলেছেন। সরকার তাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন দমনের নামে গণহত্যা চালিয়ে এখন সমন্বয়কারীদের নানাভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। ভয়ভীতি দেখিয়ে সমস্যার সমাধান হবে না। তাদের সাথে আলাপ—আলোচনা করে তাদের সকল যৌক্তিক দাবি মেনে নেয়ার জন্য আমরা সংশ্লিষ্ট মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
তিনি আরও বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে বারবার হুঁশিয়ার উচ্চারণ করে গণগ্রেফতার ও বিচারের আওতায় আনার যে ঘোষণা দেয়া হচ্ছে তা অহমিকা, আত্মম্ভরিতা ও হঠকারিতা ছাড়া আর কিছুই নয়। সরকারকে বলতে চাই, দেশটা আপনাদের একার নয়। এ দেশের জনগণ আপনাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছে। আপনারা রাষ্ট্রশক্তি ব্যবহার করে নির্যাতনের পথ বেছে নিয়েছেন। এর পরিণতি আপনাদের জন্য বুমেরাং হবে। রাষ্ট্রের আইন—শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বলছি আপনারা জনগণকে হয়রানি করবেন না। প্রজাতন্ত্রের সেবক হিসেবে পেশাদারিত্বের সাথে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করুন।
জুলুম—নির্যাতন, গণগ্রেফতার ও মিথ্যাচার বন্ধ করে ছাত্রদের সকল যৌক্তিক দাবি মেনে নিয়ে দেশে শান্তি ও স্বস্তির পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য আমরা সংশ্লিষ্ট মহলের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।”