২২ মার্চ ২০১৭, বুধবার, ১০:১৪

জঙ্গি দমনের নামে নিরীহ মানুষ হত্যার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ

জনসমর্থনহীন সরকার জনগণের দৃষ্টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য জঙ্গীবাদের ধূয়া তুলছে

জঙ্গি দমনের নামে নিরীহ মানুষ হত্যার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারী জেনারেল ডাঃ শফিকুর রহমান আজ ২২ মার্চ প্রদত্ত এক বিবৃতিতে বলেন, “দেশপ্রেমিক কোন মানুষ জঙ্গীবাদকে সমর্থন করতে পারে না। আর ইসলাম তো জঙ্গীবাদকে কখনোই অনুমোদন করে না। ইসলামের নাম ভাঙ্গিয়ে যারা জঙ্গীবাদকে সমর্থন করে তারাই ইসলামের দুশমন।

জঙ্গীবাদকে নির্মূল করে দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা সময়ের দাবী। আর জঙ্গীবাদকে দমন করতে হলে প্রয়োজন জাতীয় ঐক্যের। কিন্তু আমরা বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করছি যে, সরকার জঙ্গি দমনের নামে যে পদক্ষেপ নিয়েছে তাতে জনমনে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হচ্ছে। প্রায় প্রতিটি ঘটনাই রহস্যের জন্ম দিচ্ছে। এক শ্রেণীর বুদ্ধিজীবী ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কতিপয় সদস্য জঙ্গীবাদের সাথে ইসলামের সম্পর্ক আবিষ্কারের চেষ্টা করছেন। কোন হত্যাকান্ড ঘটলেই বিশেষভাবে তারা জামায়াত ও ছাত্রশিবিরকে দায়ী করে উদ্দেশ্য প্রণোদিত বক্তব্য দিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছেন।

সম্প্রতি গাইবান্ধা জেলায় সরকার দলীয় এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনকে গুলি করে হত্যা করার পর পরই আওয়ামী লীগের এমপি ও মন্ত্রী পরিষদের সদস্যগণের অনেকেই এজন্য জামায়াত-শিবিরকে দায়ী করে মিডিয়ায় বক্তব্য প্রদান করেছেন। সবচাইতে বিস্ময়কর ব্যাপার হলো স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে এ হত্যাকাণ্ডের জন্য জামায়াত ও ছাত্রশিবিরকে দায়ী করে বক্তব্য দিয়েছেন। অবশেষে তদন্তে প্রমাণিত হয় যে, জাতীয় পার্টির সাবেক এমপি ডাঃ আবদুল কাদের খান এ হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা। এ ঘটনার সাথে জামায়াত এবং ছাত্রশিবিরের দূরতম কোন সম্পর্কও নেই।

দেশের কোথাও কোন জঙ্গি ঘটনা সংঘটিত হলেই সংশ্লিষ্ট এলাকা তথা সারা দেশে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলাম ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীদেরকে নির্বিচারে গ্রেফতারের মহরা শুরু হয়ে যায়। শুধু গাইবান্ধার এমপি লিটন হত্যার ঘটনাতেই জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের ১৩৪ জন নিরীহ নেতা-কর্মীকে অপহরন ও গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ধরনের জুলুম আর কতকাল চলবে? 

দেশবাসীর নিকট এটা পরিষ্কার যে, জঙ্গীবাদ-উগ্রবাদের সাথে জামায়াত ও ছাত্রশিবিরের কোন সম্পর্ক নেই। জামায়াত ও ছাত্রশিবির গঠনমূলক রাজনীতিতে বিশ্বাসী। সরকার জঙ্গীবাদ নির্মূলের জন্য যে সব কথা বলছে বাস্তবে তার প্রতিফলন লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। জনসমর্থন হীন সরকার জনগণের দৃষ্টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য জঙ্গীবাদের ধূয়া তুলছে। আমরা অবশ্যই জঙ্গীবাদের বিপক্ষে। আমরা জঙ্গীবাদের উৎখাত চাই। কিন্তু আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যেভাবে জঙ্গী দমন করছে তার প্রতিটি ঘটনাই রহস্যের সৃষ্টি করছে। অতি সম্প্রতি প্রস্তাবিত র‌্যাব হেড কোয়ার্টারে একজন জঙ্গী তার শরীরে বিস্ফোরক বেঁধে ঢুকে পড়ে এবং বিস্ফোরণ ঘটায় বলে র‌্যাবের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। র‌্যাবের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে যে, নিহত যুবকের নাম জুয়েল রানা। তার বাড়ি ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলায়। অথচ জুয়েল রানা গত ১৯ মার্চ রাতে বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার অফিসে স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে বলেছে যে, ‘আমি কখনো র‌্যাব অফিসে যাইনি। আমি জঙ্গি নই। আমি তো মরিনি।’ নিহত যুবকের আঙ্গুলের ছাপের সঙ্গে জুয়েল রানার আঙ্গুলের ছাপ মিলল কি করে, এ প্রশ্ন দেশবাসীর মনে সৃষ্টি হয়েছে। দুই জন মানুষের আঙ্গুলের ছাপ কখনই মিলতে পারে না। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এ সব কর্মকাণ্ডের কারণে দেশবাসীর মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

ঐ ঘটনার পর পরই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঐ এলাকায় ব্যাপক তল্লাশী চালিয়ে হানিফ মৃধা নামে একজন যুবককে গ্রেফতার করেছে বলে দাবি করা হয়েছে। পরবর্তীতে র‌্যাব হেফাজতে তার মৃত্যুর খবর প্রকাশিত হয়। অথচ তার পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যে, র‌্যাব অফিসে সংঘটিত ঘটনার ১৮ দিন পূর্বে গত ২৭ ফেব্রুয়ারী সাদা পোষাকধারী একদল লোক তাকে অপহরণ করে এবং পরিবারকে ভয় দেখিয়ে ৬ লাখ ৭০ হাজার টাকার চেক লিখে নেয়। একটি জাতীয় দৈনিকে ২২ মার্চ প্রকাশিত রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে যে, জঙ্গি বিরোধী অভিযানে গত সাড়ে আট মাসে ৪১ জন লোক নিহত হয়েছে।

সম্প্রতি সরকার ও সরকার সমর্থক কয়েকটি মিডিয়া জঙ্গীদের নির্মূলের কথা বলছে। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করছি যে, সুযোগ থাকা সত্ত্বেও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জঙ্গীদের জীবিত অবস্থায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই গ্রেফতার করছে না। ফলে জনমনে দারুন উৎকণ্ঠা ও উদ্বেগের সৃষ্টি হচ্ছে। পুলিশ ও র‌্যাবের পরিচয়ে যখন যাকে খুশী তাকে অপহরণ ও হত্যা করা হচ্ছে। সাধারণ জনগণ জানতে চায় দেশের নাগরিকদের অপহরণের ও খুনের সাথে যারা জড়িত তাদের পরিচয় কি এবং এ ধরনের দুর্বৃত্তদের দমন করার দায়িত্ব কার? সরকার কি সে দায়িত্ব অস্বীকার করতে পারেন? হঠাৎ করে জঙ্গী দমনের নামে ব্যাপক তৎপরতা দেখে জনগণের মধ্যে এ ধরনের ধারণা সৃষ্টি হওয়া অস্বাভাবিক নয় যে, ভারতের সাথে প্রতিরক্ষা চুক্তি করার জন্যই কি জঙ্গীবাদকে ট্রাম কার্ড হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে?

আমরা সরকারকে এ খেলা বন্ধ করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। দেশবাসী শান্তি চায়। জঙ্গী দমনের জন্য জাতীয় ঐক্যের বিকল্প নেই। জাতীয় ঐক্য ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই জঙ্গীদের দমন করা সম্ভব। জঙ্গী দমনের নামে সাধারণ মানুষকে ধরে এনে নির্যাতন চালানো ও হত্যা করে জঙ্গী দমন সম্ভব নয়। সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হোক দেশবাসী এ কামনাই করছে।”