ঐতিহাসিক বালাকোট দিবস উপলক্ষে আজ সোমবার রাজধানীর একটি মিলনায়তনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন দলের নায়েবে আমীর অধ্যাপক মুজিবুর রহমান
৬ মে ২০১৯, সোমবার

বালাকোটের প্রেরণায় উজ্জীবিত হয়ে হক ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করতে হবে -অধ্যাপক মুজিবুর রহমান

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর অধ্যাপক মুজিবুর রহমান (সাবেক এমপি) বলেন, বিজাতীয় আগ্রাসন থেকে মুসলমানদের সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য শাহ সৈয়দ আহমদ শহীদ বেরলভীর নেতৃত্বে বালাকোট আন্দোলন ছিল এক আপসহীন সংগ্রাম। বদর-উহুদ, খায়বারের প্রেরণায় উজ্জীবিত হয়ে তিনি ঈমান-আকীদা, ইসলামী তাহযীব-তামাদ্দুনের সুরক্ষা সর্বোপরি আল্লাহর দ্বীনের ঝান্ডাকে উচ্চকিত করার এ সংগ্রামে ১৮৩১ সালের ৬ মে বালাকোটের ময়দানে এক অসম যুদ্ধে শাহাদাৎ বরণ করেন। বালাকোটের এই ঘটনার মধ্য দিয়েই ভারতে মুসলমানগণ আজাদী আন্দোলনের মাধ্যমে পৃথক আবাসভূমি লাভে উজ্জীবিত হন। তাই বালাকোটের সেই যুদ্ধ স্বাধীনতা প্রিয় মানুষের জন্য প্রেরণার উৎস, চেতনার স্মারক। তাই ঐতিহাসিক বালাকোটের প্রেরণায় উজ্জীবিত হয়ে হক ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা ও বাতিল শক্তির মোকাবিলায় আমাদের সংগ্রামী প্রয়াস চালিয়ে যেতে হবে।

আজ সোমবার রাজধানীর একটি মিলনায়তনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে ঐতিহাসিক বালাকোট দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারী ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের সভাপতিত্বে ও কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহঃ সেক্রেটারী এডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিনের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য আব্দুস সবুর ফকির, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য এডভোকেট এস এম কামাল উদ্দিন, আব্দুস সালাম, মু. আব্দুল জব্বার। উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের মজলিশে শুরা সদস্য আশরাফুল আলম ইমন, শাহীন আহমদ খান প্রমুখ।

অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, পাক-ভারত উপমহাদেশে দীর্ঘ মুসলিম শাসনের পর ইংরেজরা ক্ষমতায় গিয়ে মুসলমানদের উপর চরম অত্যাচার ও নির্যাতন শুরু করে। অপরদিকে মুসলমানরা নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষা এবং প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জনের জন্য আন্দোলন শুরু করে। তাদের আন্দোলনের লক্ষ্য ছিল একদিকে কুসংস্কার পূর্ণ সমাজ সংস্কার ও প্রকৃত ইসলামের আলোকে মুসলমানদের মন-মানসিকতা গড়ে তোলা এবং মুসলমানদের অস্তিত্ব রক্ষা ও নিখাঁদ ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। তখনই এই আন্দোলনের বিরুদ্ধে শিখ সহ স্বার্থবাদী গোষ্ঠী বিরোধিতা শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় সাইয়্যেদ আহমদ বেরলভী ১৮২৯ সালে শিখদের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করে এবং ১৮৩০ সালে ভারতের উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে ইসলামী রাষ্ট্রের আদলে একটি রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। অপরদিকে মুসলমানদের এই প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে শিখ, মারাঠা এবং ইংরেজ ত্রিপক্ষীয় ষড়যন্ত্র শুরু করে। ১৮৩১ সালের ৬ মে বালাকোটের প্রান্তরে এক অসম যুদ্ধে সাইয়্যেদ আহমদ বেরলভীসহ ১৩৫ জন মুজাহিদ শাহাদাত বরণ করেন। আজও ইসলাম, মুসলমান ও ইসলামী আন্দোলনের বিরুদ্ধে দেশী-বিদেশী শক্তির বহুমুখী ষড়যন্ত্র চলছে। আধিপত্যবাদী ও সাম্রাজ্যবাদী শক্তির সকল ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলাই হলো বালাকোট আন্দোলনের প্রকৃত চেতনা।

সভাপতির বক্তব্যে ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, বর্তমানের কঠিন ও সংকটময় অবস্থা থেকে মুসলিম উম্মাহর মুক্তি পেতে হলে ঐতিহাসিক বালাকোট আন্দোলন থেকে আমাদেরকে শিক্ষা নিয়ে ঐক্যবদ্ধ ভুমিকা পালন করতে হবে। আমাদের তরুন প্রজন্ম ইসলামের সাহসী সংগ্রামের ইতিহাস আজ ভুলতে বসেছে। উম্মাহর এই ক্রান্তিকালে তরুন প্রজন্মের মধ্যে বালাকোটের চেতনা ছড়িয়ে দেয়ার মাধ্যমে তাদেরকে উজ্জীবিত করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং ইসলামি আদর্শকে অক্ষুন্ন রাখার জন্য রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তির লক্ষ্যে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।