বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মজিবুর রহমান বলেছেন, “বাংলাদেশে কুরআনের বিধানকে বিজয়ী করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। কুরআনকে জানার ও বুঝার জন্য সকলের হাতে পবিত্র কুরআনকে উপহার হিসেবে তুলে দিতে হবে। এই রমাদানে জামায়াতের প্রত্যেক কর্মীকে অন্তত ১টি হলেও কুরআন বিতরণ করতে হবে। এভাবেই সকল মানুষের কাছে আমাদের কুরআনের বাণী পৌঁছিয়ে দিতে হবে। বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা দিয়ে একজন মুসলমানের সন্তানের ইসলাম সম্পর্কে জানার ও বোঝার সুযোগ নেই বললেই চলে৷ ফলে নিজেদের ঈমান ও তমুদ্দুনকে টিকিয়ে রাখতে শিক্ষা ব্যবস্থার সর্বস্তরে কুরআনের শিক্ষা চালু করতে হবে।”
তিনি আজ ১৭ই মার্চ ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ আয়োজিত পবিত্র মাহে রমাদান মাস উপলক্ষে আল-কুরআন উপহার প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর মো. নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি মু. দেলাওয়ার হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর আব্দুস সবুর ফকির, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি মুহাম্মদ কামাল হোসাইন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক মোকাররম হোসাইন ও ড. মোবারক হোসাইন। ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী প্রচার সম্পাদক আশরাফুল আলম ইমন, সহকারী সমাজ কল্যাণ সম্পাদক শাহীন আহমদ খানসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।
অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, “আধিপত্যবাদী শক্তি ও ইসলামের দুশমনেরা ৯২ শতাংশ মুসলমানদের দেশে শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে ইসলামের আদর্শ বাদ দিয়ে হিন্দুত্ববাদী শিক্ষা চালু করতে চাইছে। আর ক্ষমতাসীন আওয়ামী সরকার তাদের দোশর হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। আওয়ামী লীগের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, তারা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যতবার এসেছে ততবারই ইসলামের উপরে আঘাত করেছে। ইসলামী আদর্শকে মুছে ফেলার অপচেষ্টা করেছে। সংবিধানে মহান আল্লাহর উপর অবিচল আস্থা ও বিশ্বাসের কথা উল্লেখ ছিলো, অথচ এই আওয়ামী সরকার সেটাকে মুছে দিয়েছে। তারা শিক্ষা বোর্ড থেকে মহাগ্রন্থ আল কুরআনের প্রথম নাজিলকৃত আয়াত মুছে দিয়েছে। জ্ঞান বৃদ্ধির দোয়া রাব্বি জিদনি ইলমা সেটাও মুছে ফেলেছে। বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে যেসব জায়গায় কুরআনের কোনো শব্দ ছিলো তার সবই আওয়ামী লীগ সরকার এক এক করে মুছে দিয়েছে। বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী বলছেন, ‘ছোট ছোট মাদরাসা তৈরি হওয়ার কারণে দেশে স্কুল গুলোতে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি কমে যাচ্ছে’। তিনি মাদরাসার শিক্ষার্থীদের ছাত্র হিসেবেই মনে করেন না। কতটা নির্লজ্জ হলে একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী এভাবে কথা বলেন। সুতরাং বর্তমান সরকার কখনই কুরআনের পক্ষে ছিলো না। ফলে এই কুরআন বিদ্বেষী সরকারের পতন নিশ্চিত করে কুরআনের পক্ষের শক্তিকে দেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, “আওয়ামী সরকার শুধুমাত্র ইসলামেরই বিপক্ষের শক্তি নয় বরং তারা বাংলাদেশের জনগণেরও বিপক্ষের শক্তি। তারা জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকারকে পদদলিত করেছে। জনগণের মৌলিক অধিকারকে খর্ব করেছে। অথচ কুরআন সবসময় মানুষের অধিকারের পক্ষে কথা বলে। প্রত্যেকের যথাযথ হক আদায়ের কথা বলে। এজন্য বাংলাদেশের সবুজ জমিনে সকলের অধিকার রক্ষায় কুরআনের বিধান প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই।” তিনি কুরআনের সমাজ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে আত্মনিয়োগ করার জন্য সকলের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান।
সভাপতির বক্তব্যে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, “পবিত্র আল কুরআন এমনই বিস্ময় যে আজকে সাড়ে চৌদ্দশত বছর পরেও একইভাবে আমাদের সামনে বলবৎ রয়েছে। এই মহাগ্রন্থ এতটাই সুরক্ষিত যে, যার ভুল ধরা অসম্ভব। পৃথিবীতে যারাই কুরআনের ভুল ধরতে গিয়েছিলো তারা নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে কুরআনের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় নিয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ, আমরা সেই কুরআনকে ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের ১০ হাজার মানুষের হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি। সেই সাথে কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে বাংলাদেশে একটি কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমরা ঢাকাকে কুরআনের আন্দোলনের রাজধানীতে পরিণত করতে চাই।” তিনি দেশের মানুষের মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে শরিক হওয়ার জন্য সকলের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান।
আব্দুস সবুর ফকির বলেন, “কুরআনের শিক্ষা থেকে বিমুখ হয়ে মানুষ যখন বিপথে চলে যায় তখন সেখানে চরম নৈতিক অবনতি ঘটে। আজকে ইসলামী নৈতিকতার শিক্ষা ভুলে যাওয়ায় দেশের চরম অধঃপতন হয়েছে। ফলে শিক্ষকের কাছে ছাত্রী যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীরা কোথাও নিরাপত্তা পাচ্ছে না। এ অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে কুরআনের শিক্ষার আলোকে প্রণয়ন করতে হবে।”