৬ সেপ্টেম্বর ২০১১, মঙ্গলবার

ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঈদ পুনর্মিলনীতে আমীরে জামায়াত জনাব মকবুল আহমাদ

ভারতকে কিছু দেয়ার আগে আমাদের পাওনা আদায়ের বিষয়গুলোও নিশ্চিত করতে হবে

জামায়াতে ইসলামীর আমীর মকবুল আহমদ বলেছেন, চুক্তির মাধ্যমে ভারতকে কিছু দেয়ার আগে দেশের স্বার্থ বিবেচনা করে আমাদের পাওনা আদায়ের বিষয়গুলোও নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, ভারতের সাথে সম্পাদিত চুক্তিতে এ দেশের জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন না হলে চুক্তির এই ফাঁদে পড়ে আওয়ামী লীগ যেমন তাদের নিজেদের ক্ষতি করবে একইভাবে দেশ ও জাতির জন্যও বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। তাই চুক্তি সম্পাদনের আগে চুক্তির বিষয়গুলো জনগণের সামনে প্রকাশ করার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান তিনি।

গতকাল সোমবার বিকেলে রাজধানীর মগবাজারস্থ আল ফালাহ মিলনায়তনে ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি ডা. ফখরুদ্দিন মোহাম্মদ মানিকের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি জেনারেল দেলোয়ার হোসাইনের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জামায়াতের নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর জামায়াতের আমীর রফিকুল ইসলাম খান। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শিবিরের কেন্দ্রীয় দফতর সম্পাদক আব্দুল জববার, প্রকাশনা সম্পাদক নিজামুল হক নাঈম, অর্থ সম্পাদক সোহেল খান, সাহিত্য সম্পাদক মো. আতিকুর রহমান, প্রচার সম্পাদক আবু সালেহ মো. ইয়াহইয়া, সাংস্কৃতিক সম্পাদক আবু নাসের, শিক্ষা সম্পাদক শাহীনুর রহমান,

আন্তর্জাতিক ও গবেষণা সম্পাদক এইচ.এম জুবায়ের, ছাত্রকল্যাণ সম্পাদক আল মুত্তাকী বিল্লাহ, কলেজ কার্যক্রম সম্পাদক মো. মাসুদুল ইসলাম বুলবুলসহ মহানগর ও বিশ্ববিদ্যালয় নেতৃবৃন্দ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মকবুল আহমদ বলেন, আমরা ভারতের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সুসম্পর্ক অবশ্যই চাই তবে তা হবে দেশের ও জনগণের স্বার্থ অক্ষুণ্ণ রেখে। দেশের স্বার্থ পরিপন্থী কোন কাজ কিংবা আমাদের ওপর অন্য দেশের প্রভুত্ব বা দাদাগিরি চাই না। তিনি ভারতের সাথে ইতোপূর্বে সম্পাদিত ফারাক্কার চুক্তি ও বেরুবাড়ি চুক্তির তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে বলেন, ভারত আমাদের সাথে কথা রাখেনি। কাজেই তাদের সাথে কোন চুক্তিতে আবদ্ধ হতে হলে আমদের অনেক কিছুই এখন আগেভাগেই ভাবতে হবে। মকবুল আহমদ বলেন, আমরা প্রতিবেশীরাষ্ট্র প্রধানের সফর অপছন্দ করি না। কিন্তু এই সফরে যেন অমীমাংসিত বিষয়গুলোর সঠিক সমাধান পেতে পারি, এটাই আমাদের দাবি। ভারতের সহায়তায় ক্ষমতায় আসা আওয়ামী সরকার ট্রানজিটের ব্যাপারে দরকষাকষি করতে লজ্জাবোধ করে। অথচ এ দেশের জনগন দেশবিরোধী ট্রানজিটের প্রতিবাদ করে যাচ্ছে।

জনাব মকবুল আহমদ জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত বিভিন্ন অনলাইন জরিপের উদ্বৃতি দিয়ে বলেন, জনগণকে দেয়া সরকারের বিভিন্ন আশ্বাসের ওপর দেশের ৭৫ ভাগ মানুষের কোনই আস্থা নেই। ৯৩ ভাগ জনগণ মনে করে দারিদ্র্য বিমোচন প্রকল্প সরকার বাস্তবায়ন করতে পারেনি। আর মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াতের শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে আটক রাখা হলেও দেশের ৯৫ ভাগ জনগণই বিশ্বাস করে এই অভিযোগ মিথ্যা বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়েই সরকার জামায়াতের এই শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে বিনা বিচারে আটকে রেখেছে।

প্রধান অতিথি আরো বলেন, জুলুম আর অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে জামায়াতে ইসলামী সব সময়ই প্রতিবাদ জানায়। আর এই জন্যই সরকার জামায়াতকে টার্গেট করে মিথ্যা বানোয়াট অভিযোগ দিয়ে শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে জেলে দিয়ে নির্যাতন করছে। তবে জুলুম করে জামায়াত নেতৃবৃন্দকে মিথ্যা অভিযোগে বেশিদিন আটকে রাখা যাবে না বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

পবিত্র রমযান মাসকে আমাদের জন্য শিক্ষা অর্জনের মাস উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইসলামের কোন আনন্দই শুধু আনন্দ করার জন্য নয়। সব আনন্দের মধ্যেই আমাদের জন্য কিছু শিক্ষা রয়েছে। ঈদের আনন্দের মধ্যে আমাদেরকে চিন্তা করে দেখতে হবে রমযানের শিক্ষা আমরা বাকি ১১ মাসে কতটুকু কাজে লাগাতে পারছি।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে রফিকুল ইসলাম খান বলেন, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে আমাদের নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। আর যতদিন না আমরা আমাদের কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ গড়তে পারবো ততদিনই আমাদের সেই অবিরাম চেষ্টা চালিযে যেতে হবে। তিনি বলেন, ‘‘আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যেতে প্রয়োজনে আমাদের কারাগারে যেতে হবে, শত নির্যাতন সইতে হবে হয়তোবা শহীদও হতে পারি কিন্ত,ু আমাদের লক্ষ্য থেকে আমরা বিন্দুমাত্র বিচ্যুত হবো না।’’ তিনি বলেন, যে মিথ্যা অভিযোগে জামায়াতের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের আজ বিচারের নামে প্রহসন হচ্ছে সেই প্রহসন দেশের জনগণ মানে না, এই ট্রাইব্যুনালও জনগণ মানে না। রাজপথে তীব্র গণআন্দোলনের মাধ্যমে শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে সম্মানের সাথে মুক্ত করে আনা হবে বলেও ঘোষণা করেন তিনি। সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, আওয়ামী সরকারের মন্ত্রীরা দুর্নীতিবাজ হলেও তাদেরকে পরিবর্তন করা হচ্ছে না। নিজেদের দুর্নীতি ঢাকতে তারা মন্ত্রীদের আগলে রাখার চেষ্টা করছে। দুর্নীতিবাজ, নীতিহীন মন্ত্রীদের দ্বারা পরিচালিত সরকারকে জনগণ বেশি দিন মেনে নিবে না।

সভাপতির বক্তব্যে শিবির সভাপতি ডা. মো. ফখরুদ্দিন মানিক বলেন, এবার অনেক কষ্টের অনুভূতি নিয়েই আমাদেরকে ঈদ উদযাপন করতে হয়েছে। কারণ ইসলামী আন্দোলনের শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে রমযান ও ঈদেও অন্যায়ভাবে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। কারাগারে নেতৃবৃন্দকে রেখে মুসলিমসমাজ ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারেনি। আমরা শপথবদ্ধ যে, নেতৃবৃন্দকে আন্দোলনের মাধ্যমে কারাগার থেকে মুক্ত করার মধ্য দিয়েই শতভাগ আনন্দ নিয়ে ঈদ উদযাপন করব। তিনি উইকিলিকসে প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, মগবাজারে শিবিরের কার্যালয় উল্লেখের মাধ্যমে প্রতীয়মান হয় তাদের বক্তব্য সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বিভ্রান্তিমূলক। উইকিলিকিসের তথ্যে ‘ছাত্রশিবির অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের মত চাঁদাবাজি করে' উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ শিবিরের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে আজ পর্যন্ত বাংলাদেশের কোন নাগরিকই শিবিরের কোন চাঁদাবাজির একটি উদাহরণও দিতে পারেনি এবং ভবিষ্যতেও পারবে না।

কার্টেসীঃ দৈনিক সংগ্রাম