১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, শনিবার

পবিত্র মিরাজুন্নবী (সা.) উপলক্ষে ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ জামায়াতের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রকে সুশৃঙ্খল করতে মেরাজের শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে- অধ্যাপক মুজিবুর রহমান

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেছেন, রাসূল (সা.) এর মিরাজ ইসলামের ইতিহাসের তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনাগুলোর অন্যতম। ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। নবী মুহাম্মাদ (সা) এর জীবনে এই বিধানের পূর্ণতা অনুধাবনের জন্যই মিরাজের ঘটনা সংঘটিত হয়। মানুষের ব্যক্তি পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র কিভাবে সুশৃঙ্খল পন্থায় পরিচালিত হবে তার ধারণা দেওয়া হয়। মিরাজের বরকতপূর্ণ রাতে রাসূল (সা.) উম্মতের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে ১৪ দফা দিক-নির্দেশনা লাভ করেন। রাসুল (সা.)কে প্রদত্ত মূলনীতির ১টি ছাড়া বাকি ১৩টিই সমাজ ও রাষ্ট্র সম্পর্কিত। শবে মিরাজের ১৪ দফা বাস্তবায়ন করতে হলে রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব প্রয়োজন। এর ভিত্তিতেই রাসূল (সা.) মদিনায় ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন। আল্লাহর দেয়া এই ঐতিহাসিক ১৪ উপহার কিয়ামত পর্যন্ত মানবতার মুক্তি ও কল্যাণ নিশ্চিত করবে।

শনিবার বিকালে পবিত্র মিরাজুন্নবী (সা.) উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির মো. নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও মহানগরীর সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য প্রদান করেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমির অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও মহানগরীর সহকারী সেক্রেটারী মু. দেলোয়ার হোসেন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও মহানগরীর কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক মোকাররম হোসেন খান, মহানগরীর কর্মপরিষদ সদস্য আবদুস সালাম। উপস্থিত ছিলেন মহানগরীর কর্মপরিষদ সদস্যবৃন্দ সহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।

অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, বর্তমান সময়ের এই অশান্ত পৃথিবীকে শান্তির পয়গাম দিয়ে যায় রাসূলের (সা) পবিত্র শবে মি’রাজ। মুহাম্মদ (সা) এর জীবনী আমরা যদি ভালোভাবে দেখি এটা স্পষ্ট হয় যে, মহান আল্লাহ তাকে স্বশরীরে পরিভ্রমণ তথা মিরাজে নিয়ে গিয়েছেন। কুরআনেও বলা হয়েছে তাকে রাত্রে ভ্রমণ করানো হয়েছে। মিরাজ স্বশরীরেই হয়েছিল। সে কথা নির্দ্বিধায় বিশ্বাস করেছিলেন আবু বকর (রা.)। তাইতো তাকে সিদ্দিক উপাধি দেওয়া হয়েছিল। এখন আবু বকর সিদ্দিক (রা.) এর মতো ঈমানদার মানুষ প্রয়োজন। এই মহিমান্বিত রজনীতে আল্লাহ তা’য়ালা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করে দিয়েছেন। নামাজ সমাজ গড়ার সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। নামাজ মানুষকে যাবতীয় অশ্লীলতা ও অপকর্ম থেকে বিরত রাখে। আমাদের শ্লোগান হতে হবে আগে নামাজ পরে কাজ। নামাজ আমাদের সকল বিভেদ ভুলে পারস্পরিক ঐক্য, নেতৃত্বের আনুগত্য ও সামাজিক শৃংখলা শিক্ষা দেয়। তাই একটি সুখী, সমৃদ্ধ ও কল্যাণকামী সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য নামাজের ভূমিকা অপরিসীম। আমাদের দূর্ভাগ্য মুসলমান দেশে এই নামাজকে রাষ্ট্রীয়ভাবে বাধ্যতামূলক করা হয়নি। সমাজে শান্তি ফেরাতে হলে অবশ্যই নামাজকে বাধ্যতামূলক করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, সমাজের সকল স্তরে আল্লাহর দাসত্ব প্রতিষ্ঠিত না থাকায় সমাজে এত অশান্তি। আল্লাহ তায়ালা যা নিদের্শ দিয়েছেন, তার বিপরীত করা হচ্ছে। সুদকে হারাম করেছেন, তা এখন বৈধ, বরং সুদ না দিলে মামলা হয়ে যাচ্ছে। রাসূল সা. কে আল্লাহ মিরাজের দিনে অগ্রিম কিছু দৃশ্য দেখিয়ে দিয়েছেন। সেখানে একজন ধর্ষণ কারীর কি শাস্তি হবে? সুদখোরের কি হবে? ইত্যাদি সেসব বিষয়ে সরাসরি নবী সা. কে আল্লাহ দেখিয়ে দিয়েছেন। আমরা ভালো হতে চাই, দেশের অর্থনৈতিক অবস্থাকে ভালো করতে চাই, সুদ ঘুষ, জিনা ব্যভিচার থেকে রক্ষা পেতে চাই। আজকে ৯০ শতাংশ মুসলমানের এই বাংলাদেশে পাঠ্যপুস্তকের মাধ্যমে পৌত্তলিকতা শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে। আমরা এই শিক্ষাক্রম বাদ দিয়ে মুসলমানদের ঈমান ও আক্বিদার ভিত্তিতে নতুন পাঠ্যক্রম চালুর দাবী জানাচ্ছি। এজন্য অসৎ নেতৃত্ব পরিহার করে সৎ নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আল্লাহর বিধান বাস্তবায়ন করার জন্য যোগ্য লোক তৈরি ও জনমত গঠন করতে হবে, তবেই আসবে আল্লাহর সাহায্য। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সেই কাজটিই করছে। তিনি বলেন, ‘রাসূল (সা:) মক্কায় লোক তৈরি করেছেন, কিন্তু জনমত তৈরি হয়েছিল মদীনায়, সেখানে আল্লাহ সাহায্য আসে। দ্বীন বিজয়ী হয়। মূলত পবিত্র মিরাজের মাধ্যমে রাসূল (সা.) আমাদের জন্য যে দিকনির্দেশনা রয়েছে তা যথাযথ পালনের মধ্যেই রয়েছে ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তি। তিনি মিরাজের শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সকলকে জীবন গঠনের আহ্বান জানান।

সভাপতির বক্তব্যে মো. নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, এই মিরাজের আলোচনায় আমরা যা অর্জন করলাম তা যদি আমাদের ব্যক্তি জীবনে এবং সমাজ ও রাষ্ট্র পরিবর্তনে বাস্তবিকভাবে কাজে লাগাতে পারি তবেই আজকের আলোচনা সভা স্বার্থক হবে। আল্লাহর রাসূল (সা) যখন একটি কঠিন সময় অতিক্রম করছিলেন, ঠিক সেই সময়ে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে মিরাজ সংঘটিত হয়। লক্ষ্য ছিলো আকাশ ও ভূ-মন্ডলের নির্দেশনাবলী রাসূল (সা) কে দেখানো। কুরআনে বর্ণিত ১৪ দফার অন্যতম একটি দফা হচ্ছে, অন্যায় ভাবে কাউকে হত্যা করা যাবে না। আজ বাংলাদেশে জায়ামাতের কেন্দ্রীয় জাতীয় নেতৃবৃন্দকে বিচারের নামে সম্পূর্ণ অন্যায় ভাবে এই জালিম সরকার হত্যা করেছে। আল্লাহ অবশ্যই এর সঠিক বিচার করবেন ইনশাআল্লাহ। আরও একটি দফা হচ্ছে অন্যের হক নষ্ট না করা। আজ বাংলাদেশের জনগণের অধিকার হরণ করা হচ্ছে। আজকে গোটা দুনিয়ায় যারা ইসলাম প্রতিষ্ঠার কাজ করে যাচ্ছেন তাদের উপরে অমানবিক নির্যাতন নিষ্ঠুরতা নেমে আসছে। মিরাজের আলোচনায় বর্ণিত এই ১৪ দফা ব্যক্তি পরিবার রাষ্ট্র সবখানে বাস্তবায়নের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি পাওয়ার জন্য আমাদের প্রচেষ্টা চালাতে হবে।

ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, মিরাজ হচ্ছে একেবারে দুর্দিনে ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের চূড়ান্ত বিজয়ের দিক নির্দেশনা। মহান আল্লাহ বলেন, তোমাদের যেখানে শেষ আমি সেখান থেকেই তুলে এনেই গোটা রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা তোমাদের হাতে তুলে দিবো। চতুর্দিক থেকে প্রিয় রাসূল (সা) কে কাফের মুশরিকেরা যখন বিপর্যস্ত করতে লিপ্ত ছিলো। ঈমানের সাথে থাকতে গেলে গর্দান চলে যাবে এরকম অবস্থায় মিরাজ সংঘটিত হয়। বর্তমানে আমরা বাংলাদেশে একই রকম পরিস্থিতির মধ্যে অবস্থান করছি। মিরাজের শিক্ষাকে অনুধাবন করে নিজেদেরকে তৈরী করতে হবে। আমাদের ঈমান মজবুত করতে হবে।