৭ মে ২০২২, শনিবার

বালাকোট দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রাম মহানগরী জামায়াতের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

দ্বীনকে বিজয়ী শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা ও একটি কল্যাণ রাষ্ট্র গড়ে তোলাই হোক আমাদের অঙ্গীকার

ঐতিহাসিক বালাকোট দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রাম মহানগরী জামায়াতের উদ্যোগে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও চট্টগ্রাম মহানগরী আমীর জনাব মুহাম্মদ শাহজাহানের সভাপতিত্বে ৬ মে এক আলোচনা সভা ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এডভোকেট মুয়াযযম হোসাইন হেলাল।

প্রধান অতিথি বলেন, “ভারতীয় উপমহাদেশে বালাকোটের ঘটনা ইসলামী আন্দোলনের জন্য প্রেরণাদানকারী শিক্ষণীয় ঘটনা। বালাকোটের বিপর্যয়ের পরও মুসলমানরা থেমে যায়নি। জেল-জুলুম, ফাঁসি, সম্পত্তি বাজেয়াপ্তসহ বর্বরতম নির্যাতন তাদের ঈমানকে টলাতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত ইংরেজদের চলে যেতে হয়েছিল এবং ব্রিটিশ থেকে স্বাধীনতা লাভ করতে আমরা সক্ষম হয়েছি। সাইয়েদ আহমদ বেরলভী রহ. মূলত ভারতীয় উপমহাদেশে একটি পরিপূর্ণ ইসলামী সমাজ গড়তে চেয়েছিলেন। তিনি বলেন, মুসলমান ও শিখদের মধ্যে মোট ১১টি যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। অধিকাংশ যুদ্ধে মুসলমানরা জয়লাভ করে। সর্বশেষ ১৮৩১ সালের ৬ মে সম্মুখ যুদ্ধে সাইয়েদ আহমদ বেরলভীসহ মোট ১৩৫ জন আলেম শাহাদাত বরণ করেন। পরবর্তীতে বালাকোটের আদলে মাওলানা মওদূদী রহ. জামায়াতে ইসলামী প্রতিষ্ঠা করে ইসলামকে সর্বক্ষেত্রে প্রচার ও প্রতিষ্ঠার জন্যে ঐক্যবদ্ধ চেষ্টা অব্যাহত রাখেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা স্বার্বভৌমত্বকে বহুমুখী চক্রান্ত থেকে হেফাজত করা, দ্বীনকে বিজয়ী শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা এবং একটি কল্যাণ রাষ্ট্র গড়ে তোলায় হোক আমাদের অঙ্গীকার।

কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও মহানগরী সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মুহাম্মদ নূরুল আমীনের সঞ্চালনায় প্রধান আলোচক ছিলেন প্রফেসর ড. আবু ইহসান। আরো বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য যথাক্রমে নগর নায়েবে আমীর আ জ ম ওবায়েদুল্লাহ, মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম, সহকারী সেক্রেটারি মুহাম্মদ উল্লাহ প্রমুখ।

সভাপতির বক্তব্যে কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও নগর আমীর জনাব মুহাম্মদ শাহজাহান বক্তব্যের শুরুতেই সবাইকে ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা জানান। তিনি বলেন, “ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ ও আজকের বাস্তবতার প্রেক্ষিতে বালাকোটের ঘটনা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। তাদের সেই সংগ্রামের পথ ধরে ইংরেজদের বিতাড়িত করা না গেলে আমরা নিজেদের স্বাধীন জাতি হিসেবে পরিচয় দিতে পারতাম না।

নগর আমীর আরো বলেন, ইসলাম জয়-পরাজয়কে বেশি গুরুত্ব দেয় না। ইসলাম যে কোনো কাজের নিয়তকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে। সেই দিন শাহাদাতের জযবা নিয়ে ইংরেজদের বিরুদ্ধে মুসলিমরা লড়েছিল বলেই সেই আন্দোলনের ধারাবাহিকতা এখনো অব্যাহত আছে। বালাকোটের যুদ্ধে মুসলমানদের সাময়িক বিপর্যয় হলেও আজকের এই দিনে এটি একটি আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা। আজ শাহাদাতের প্রেরণায় উজ্জীবিত হওয়ার দিন। আমাদেরকেও তাদের মতো শাহাদাতের প্রেরণায় উজ্জীবিত হয়ে দ্বীন প্রতিষ্ঠার ঐতিহাসিক সংগ্রামে ভূমিকা পালন করতে হবে।”

প্রধান আলোচক ড. আবু ইহসান বলেন, “মুসলিম উম্মাহকে সবসময় তাদের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে হবে। দ্বীনের বিজয় হবে সেটি কেবল সময়ের ব্যাপার মাত্র। আলেমরাই ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিল অথচ তা আজ স্বীকার করা হয় না। আধিপত্যবাদীরাই সবসময় ইসলামের বিরুদ্ধে ভূমিকা রেখেছিল এবং বাংলাদেশে ইসলামী নেতৃত্ব শূন্য করতে চেয়েছিল কিন্তু তাদের সেই অপতৎপরতা সফল হয়নি।”

তিনি আরো বলেন, “ঈমানদাররা আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় করে না। সাইয়েদ আহমদ বেরলভী রহ. তাওহীদের পক্ষে শিরকের বিপরীতে আন্দোলনের কারণে ইংরেজদের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। আজকের এই দিনে নতুন প্রজন্মকে তাদের ইতিহাস সম্পর্কে অবহিত করতে হবে।”

জনাব আ জ ম ওবায়েদুল্লাহ বলেন, “বালাকোটের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে আমাদেরকে বাংলাদেশে দ্বীন কায়েমের সংগ্রামে নেতৃত্ব দিতে হবে।” মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, “এটা ছিল ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলন। এটা নব প্রজন্মের মাঝে চর্চা করতে হবে। শাহাদাতের তামান্না ছাড়া ঈমানকে মযবুত রাখা সম্ভব নয়।”