মুষলধারে বৃষ্টি ছিল গতকাল সারাদিন। পানি জমে যায় রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে। ছবিটি মতিঝিলের বলাকা চত্বর থেকে তোলা : নয়া দিগন্ত
১৩ জুন ২০১৭, মঙ্গলবার, ১২:৪২

বৃষ্টিতে জনজীবনে বিপর্যয়

রাঙ্গামাটি ও কাপ্তাইয়ে মাটি চাপায় ২ শিশুর মৃত্যু; হাতিয়ায় নিখোঁজ ২ জেলের লাশ উদ্ধার

 

ঘূর্ণিঝড় মোরার ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই উপকূলীয় অঞ্চলে এবার নি¤œ চাপের প্রভাবে শুরু হয়েছে প্রবল বর্ষণ। বিভিন্ন স্থানে সড়ক যোগাযোগ ও বিদ্যুৎ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া রাঙ্গামাটি ও কাপ্তাইয়ে মাটি চাপা পড়ে নিহত হয়েছে দুই শিশু। নোয়াখালীর হাতিয়ায় ২ জেলের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছে আরো ৫ জন।
রাঙ্গামাটি সংবাদদাতা জানান, প্রবল বর্ষণে পাহাড় ধসে মাটি চাপা পড়ে রাঙ্গামাটি শহরে ও কাপ্তাইয়ে ২ শিশু নিহত হয়েছে।
গতকাল সকালে রাঙ্গামাটি শহরের রিজার্ভ মুখ পুলিশ লাইন হাসপাতাল এলাকায় নাইমা আক্তার (৫) মারা যায়। অপর এক ঘটনায় কাপ্তাই উপজেলার নতুন বাজার এলাকায় বসতবাড়ির ওপর পাহাড় ধসে মাটি চাপা পড়ে মো: রমজান আলী (৮) নামে আরো এক শিশু মারা যায়। স্থানীয়রা জানান, রোববার রাত থেকে শুরু হওয়া টানা বর্ষণে এই পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে। সোমবার বেলা ১১টার সময় রাঙ্গামাটি পুলিশ লাইন হাসপাতালের পাশের পাহাড়ের পাদদেশে থাকা পাইপ মিস্ত্রি শাহজাহানের বাড়ির ওপর পাহাড় ধসে পড়লে ঘরের লোকজন বেরিয়ে আসতে পারলেও শিশুটি মাটি চাপা পড়ে। পরে স্থানীয় লোকজন শিশুটিকে উদ্ধার করে রাঙ্গামাটি সদর হাসপাতালে নিলে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
অবিরাম বর্ষণের কারণে রাঙ্গামাটিতে পাহাড় ধসের আশঙ্কা দেখা দেয়ায় লোকজনকে নিরাপদে সরে যেতে মাইকিং করা হয়।
অপর দিকে কাপ্তাই উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান দিলদার হোসেন জানিয়েছেন, অবিরাম বর্ষণে গতকাল কাপ্তাই নতুন বাজার এলাকায় পাহাড় ধসে জনৈক মো: সেলিম মিয়ার বসতঘরে তার শিশু ছেলে মো: রমজান আলী মাটি চাপা পড়ে। তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়া হলে ডাক্তাররা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
পাহাড় ধসে মাটি ভেঙে পড়ার কারণে কাপ্তাই-চট্টগ্রাম সড়ক বন্ধ হয়ে গেছে বলেও তিনি জানান।
নোয়াখালী ও হাতিয়া সংবাদদাতা জানান, নায়াখালীর হাতিয়ার মেঘনা নদীতে মাছ ধরা নৌকাডুবিতে সাত জেলে নিখোঁজ হন। তার মধ্যে গতকাল সোমবার সকালে ২ জেলের লাশ উদ্ধার করেছে হাতিয়া থানার পুলিশ। জানা গেছে সাতজন জেলের একটি দল নৌকা নিয়ে হাতিয়ার মেঘনা নদীতে মাছ ধরতে যায়। গত রোববার বিকেলে প্রচণ্ড ঢেউ ও প্রবল সামদ্রিক জোয়ারে ও ঝড়ে নৌকা ডুবে যায়। এ সময় সাতজন জেলে নিখোঁজ হন। গতকাল সোমবার মেঘনা নদীতে ভাসমান লাশ দেখে এলাকাবাসী পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ এনায়েত উল্লা (৩৮) ও আবু তাহেরের (৪০) লাশ উদ্ধার করে। নিহতরা হাতিয়ার বাসিন্দা। হাতিয়া থানার ওসি আ: মজিদ নৌকা ডুবে নিখোঁজ ও ২টি লাশ উদ্ধারের বিষয় নিশ্চিত করেন।
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, নি¤œচাপের কারণে সাগর উত্তাল থাকায় দমকা হাওয়া ও ঢেউয়ের তোড়ে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙ্গরে ডুবে গেছে সিমেন্ট কিংকার বোঝাই দুইটি লাইটারেজ জাহাজ। তবে দুই জাহাজের ২৮ জন নাবিক নিরাপদে তীরে উঠে আসতে পেরেছেন বলে বন্দর সূত্র জানিয়েছে।
সূত্র জানায়, গতকাল সোমবার চট্টগ্রাম থেকে কিংকার নিয়ে লাইটার জাহাজ দু’টি ঢাকার উদ্দেশে রাওনা দিলে বেলা সোয়া ১টার দিকে কিছুদূর যাওয়ার পর গভীর সমুদ্রে ‘হাজী কায়েস’ এবং বেলা সাড়ে ১২টার দিকে ভাটিয়ারি উপকূলের অদূরে গভীর সমুদ্রে ‘অলিম্পিক-টু’ নামের জাহাজটি ডুবে যায়।
ঝালকাঠি সংবাদদাতা জানান, বঙ্গপসাগরে সৃষ্ট নি¤œচাপ ও টানা বৃষ্টিতে ঝালকাঠির সুগন্ধা ও বিষখালী নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে ঝালকাঠি, নলছিটিসহ চার উপজেলার ২০টি গ্রামের বাসিন্দারা। গতকাল পূর্ণিমার জোয়ারের প্রভাবে সুগন্ধা ও বিষখালী নদীর স্বাভাবিকের চেয়ে দুই-তিন ফুট জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলার চারটি উপজেলার ২০ গ্রাম তলিয়ে গেছে। পানি বৃদ্ধিতে নদী তীরবর্তী ফসলের ক্ষেত তলিয়ে গেছে। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। দুই দিন ধরে কোনো কাজ করতে পারছেন না দিনমজুরেরা।
বরগুনা সংবাদদাতা জানান, গত দুই দিন ধরে বরগুনায় গুঁড়ি গুঁড়ি ও মাঝারি ধরনের বৃষ্টিতে জনজীবন ব্যাহত হচ্ছে। থেমে যাচ্ছে দৈনন্দিক কাজকর্ম।
গতকাল দুপুরে পটুয়াখালী কলাপাড়া আবহাওয়া অধিদফতরের এক বিজ্ঞপ্তিতে বন্দরগুলোকে ২ নম্বর সতর্কতা সঙ্কেত জারি করেছে। সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া ট্রলার উপকূলের বিভিন্ন স্থানে নিরাপদে এসে পৌঁছেছে।
এ দিকে বৃষ্টির কারণে ঈদকে সামনে রেখে দোকানিদের বেচাকেনাও কমে গেছে। এ ছাড়াও স্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
আগৈলঝাড়া (বরিশাল) সংবাদদাতা জানান, সাগরে লঘুচাপের কারণে বরিশালের আগৈলঝাড়ায় রোববার সকাল থেকে অবিরাম বর্ষণের ফলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে দরিদ্র দিনমজুর লোকজনের। বর্ষণের ফলে উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের অভ্যন্তরীণ কাঁচা-আধাপাকা সড়কগুলো কর্দমাক্ত হয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। কৃষকের জমিতে বোনা আমন ফসল ও শাকসবজির তে তলিয়ে গিয়ে ব্যাপক তি হয়েছে। এমনকি দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে উপজেলা প্রশাসনের মাসিক আইনশৃঙ্খলা সভা বন্ধ রাখা হয়েছে। বর্ষণের ফলে রোববার সন্ধ্যা থেকে গতকাল সোমবার ১১টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ লাইন বন্ধ ছিল প্রত্যন্ত এলাকার। এতে মানুষের ফ্রিজে রাখা নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের ব্যাপক তি হয়েছে। বর্ষণের ফলে দরিদ্র লোকজন দৈনন্দিন কাজ করতে না পেরে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। কৃষকদের আমন বীজতলা নষ্ট হয়ে গেছে। বর্ষণের ফলে লোকজনের চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
রাঙ্গাবালী (পটুয়াখালী) সংবাদদাতা জানান, পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ ভেঙে পাঁচটি গ্রাম প্লাবিত হয়ে অন্তত দুই শতাধিক পরিবারের শিশু-নারীসহ পাঁচ শতাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। রোববার রাত থেকে গতকাল সোমবার দুপুর পর্যন্ত টানা বর্ষণের কারণে জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। পটুয়াখালী আবহাওয়া অফিস ৮২.৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রের্কড করেছে বলে জানা গেছে। তবে বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ার কোনো তথ্য নাই সংশ্লিষ্ট পানি উন্নয়ন বোর্ডে।
কলাপাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: আবুল খায়ের জানান, কলাপাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় কোনো বেড়িবাঁধ বিধ্বস্ত হয়নি।
শিবালয় (মানিকগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় ব্যস্ততম পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ও আরিচা-কাজিরহাট নৌপথে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। অপর দিকে, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া রুটের কয়েকটি রো রো ফেরি চলাচল বন্ধ রাখায় পারাপারের অপেক্ষায় থাকা জানবাহনের সংখ্যা ক্রমেই বৃদ্ধি পেয়ে উভয় ঘাটে যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে পরিবহন মালিক-শ্রমিক, যাত্রীসাধারণসহ ঘাটসংশ্লিষ্টরা চরম দুর্ভোগ পোহান।
জানা গেছে, ঝড়ো হাওয়ায় নদীতে সৃষ্ট উত্তাল ঢেউয়ের কারণে সোমবার সকাল ১০টা থেকে ওই নৌরুটে সকল প্রকার লঞ্চ ও কয়েকটি ফেরি চলাচল বন্ধ থাকে। ফেরি ও লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকায় পাটুরিয়া ও দৌলতদিয়া রুটের যাত্রীরা ছোট ফেরি ও ইঞ্জিন চালিত নৌকায় ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছেন। সন্ধা ৬টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত একই অবস্থা বিরাজ করছে।
লঞ্চ মালিকদের অভিযোগÑ ঝড় বৃষ্টির আভাসে অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ পাটুরিয়া ও আরিচা রুটের লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখে। এতে লঞ্চের যাত্রীরা ফেরি ও ইঞ্জিনচালিত ছোট নৌকায় নদী পারাপার হচ্ছেন। ফলে ফেরির লুজ যাত্রী ইজারদার ও অবৈধভাবে চলাচলকারী ইঞ্জিন চালিত নৌকার মালিকেরা লাভবান হন। ফেরির লুজ যাত্রী ইজারাদার ও নৌকা মালিকদের সাথে কর্তৃপক্ষের গোপন আঁতাত থাকায় লঞ্চ মালিকেরা নিয়মিত চরম আর্থিক ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছেন।
প্রশ্ন উঠেছে, নৌ-দুর্ঘটনা এড়ানোর লক্ষ্যে বৈরী আবহাওয়ায় মাঝে মধ্যেই কর্তৃপক্ষের নির্দেশে এ রুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখা হয়। কিন্তু ঝুঁকি নিয়ে কিভাবে যাত্রীরা ইঞ্জিনচালিত নৌকায় পারাপার হয়? সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন বলে দাবি করেছেন লঞ্চ মালিক-শ্রমিকেরা।
কক্সবাজার সংবাদদাতা জানান, মওসুমি নি¤œচাপের ফলে গত রোববার রাত ৮টা থেকে কক্সবাজার উপকূল দিয়ে প্রবলবেগে বয়ে যাচ্ছে দমকা ও ঝড়ো হাওয়া। সেই সাথে বৃষ্টি। এতে শত শত কাঁচা ঘরবাড়ির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে গাছ উপড়ে গেছে। বিদ্যুৎ লাইনে গাছ পড়ে কক্সবাজার শহরসহ পুরো জেলা রোববার রাত সাড়ে ৮টা থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। বিদ্যুৎ না থাকায় কক্সবাজার শহর থেকে প্রায় ২০টি দৈনিক পত্রিকা প্রকাশিত হতে পারেনি। এ ছাড়া মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাও মারাত্মকভাবে ভোগান্তিতে পড়েছে। এ রিপোর্ট লেখার সময় (বিকেল সাড়ে ৪টা) শহরের কয়েকটি স্থানে বিদ্যুৎ সরবরাহ হলেও পুরো জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল। কক্সবাজার বিদ্যুৎ বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ রিয়াজ জানান, ঝড়ো হাওয়ার কারণে গাছ পড়ে গিয়ে কক্সবাজার শহরের ১৩টি ফিডার আক্রান্ত হয়েছে। এতে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রয়েছে। শহরের বেশ কয়েকটি টিম কাজ করে যাচ্ছে কিন্তু বেশির কাগ এলাকায় সোমবার বিকেল পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। রোজার সময়ে প্রায় ২০ ঘণ্টারও অধিক সময় বিদ্যুৎ না থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছে শহরের মানুষ। এ দিকে সাগরের অস্বাভাবিক জোয়ারের কারণে জেলার উপকূলীয় এলাকা আবারো প্লাবিত হয়েছে। প্রাপ্ত তথ্য মতে নি¤œচাপের প্রভাবে দীর্ঘসময় ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়ায় সাগর ফুঁসে উঠেছে।
কক্সবাজার (দক্ষিণ) সংবাদদাতা জানান, কক্সবাজারের দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়া, মহেশখালী ও টেকনাফের শাহপরীদ্বীপে পূর্ণিমার জোয়ারে পানি বৃদ্ধি ও প্রবল বর্ষণে বিস্তীর্ণ অঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট মওসুমি বায়ুতে প্রবল বেগে দমকাসহ ঝড়ো হাওয়ার প্রভাবে জলোচ্ছ্বাসে জেলার আট উপজেলার ২৮টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। জেলার বেশির ভাগ নি¤œাঞ্চলে ৫ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাস হয়েছে। এ ছাড়া জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে সহস্রাধিক কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। কক্সবাজার বঙ্গোপসাগর উপকূলে এতে উপকূলীয় এলাকার বেড়িবাঁধ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সাগরের ঢেউয়ের আঘাতে ভাঙন এবং প্লাবিত হয়ে দুই শতাধিক পানের বরজ, শত শত একর রবিশস্য, শতাধিক চিংড়ি ঘের এবং প্রায় এক হাজার বসতবাড়ির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
এ দিকে সেন্টমাটিনে দমকাসহ ঝড়ো হাওয়া ও জলোচ্ছ্বাসে প্রায় ১২টি কাঁচাবাড়ি সাগরে বিলীন হয়ে গেছে। সেন্টমার্টিনের সাথে টেকনাফ, মহেশখালী ও কুতুবদিয়ার উপজেলার সাথে কক্সবাজার জেলা সদরের সাথে নৌপথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় গতকাল কক্সবাজারের স্থানীয় পত্রিকা প্রকাশিত হয়নি।
মওসুমি বায়ুর প্রভাবে দমকা হাওয়া সাথে পূর্ণিমার ‘জো’ মিলে প্রবল জোয়ারে সাগরের ঢেউয়ের আঘাতে ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে সাগরের পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়ায় প্রায় এক লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। অনেক এলাকায় বাঁধের বিভিন্ন অংশে নতুন করে ভাঙন দেখা দিয়েছে।
সেন্টমার্টিন থেকে স্থানীয় ইউনিয়নের সদস্য হাবিব খান জানান, ঝড়ো হাওয়া ও পূর্ণিমার জোয়ারে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে সেন্টমার্টিনের মানুষ চরম আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। বাতাসের গতিবেগ এতই প্রবল যে, দাঁড়িয়ে থাকাও কষ্টকর হয়ে পড়েছে। দ্বীপের ১০-১২ ঘরবাড়ি সাগরে ভেসে গেছে। প্রচুর গাছপালা উপড়ে পড়েছে। ঘর থেকে বাইর হওয়ারও সুযোগ নেই। জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে চরম ঝুঁকিতে রয়েছে দ্বীপবাসী। ব্যাপক পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে।
সাবরাং ইউপি চেয়ারম্যান নুর হোসাইন জানান, বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধ দিয়ে সাগরের লোনাপানি ঢুকে শাহপরীরদ্বীপ ও সাবরাংয়ের প্রায় ৪০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। অনেকে বসতবাড়ি ছেড়ে টেকনাফসহ বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন।
কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো: সবিবুর রহমান জানান, মওসুমী বায়ুর প্রভাবে উপকূলীয় এলাকায় স্বাভাবিক পানির চেয়ে পাঁচ-ছয় ফুট পানি বেড়েছে। এ কারণে কিছু নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। জরুরি ভিক্তিতে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জেলা প্রশাসক মো: আলী হোসেন বলেন, কুতুবদিয়াসহ উপকূলীয় এলাকার খুব খারাপ অবস্থা। আমি জেনেছি। এখনো কোনো সাহায্য পাঠানো সম্ভব হয়নি। স্থানীয় প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
লামা (বান্দরবান) সংবাদদাতা জানান, পাহাড়ি ঢলে লামা উপজেলার নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। লামা-আলীকদম সড়কের বিভিন্ন পয়েন্ট পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় আলীকদমের সাথে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।
প্লাবিত এলাকাগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ লামা পৌরসভার নয়াপাড়া, উপজেলা পরিষদের আবাসিক এলাকাগুলো, লামা বাজারের একাংশ, নুনারবিল, লামা থানা এলাকা, লাইনঝিরি, ছাগলখাইয়া, ফকিরপাড়া, কলিঙ্গাবিল, হাসপাতালপাড়া, শিলেরতুয়া ও চেয়ারম্যানপাড়া। এ ছাড়া পৌর এলাকার হলিচাইল্ড পাবলিক স্কুলসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও সরকারি, বেসরকারি দফতরগুলো পাহাড়ি ঢলের পানিতে প্লাবিত হয়ে পড়েছে। অপর দিকে, গজালিয়া, রূপসীপাড়া ও ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকায় নদী তীরবর্তী ও ঝিরিসংলগ্ন এলাকায় প্রায় ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। বন্যার আশঙ্কায় শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন স্থানীয়রা।
বান্দরবান সংবাদদাতা জানান, বান্দরবানে প্রবল বর্ষণে পাহাড় ধসে বান্দরবানের সাথে রুমা উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। সকালে প্রবল বর্ষণের সময় সড়কের ওয়াই জংশন এলাকায় সড়কের উপর বড় একটি পাহাড় ধসে পড়লে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। সেনাবাহিনীর প্রকৌশল বিভাগ সড়ক যোগাযোগ চালু করার চেষ্টা করছে। সেনা প্রকৌশল ১৯ ইসিবির রুমা সড়কের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: খায়ের জানান ওয়াই জংশন থেকে ৫ কিলোমিটারের মধ্যে দু’টি জায়গায় পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। এ দিকে জেলার বিভিন্ন স্থানে প্রবল বর্ষণে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। তবে এতে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। সাগরে নিম্ন চাপের প্রভাবে বান্দরবানে গত ২৪ ঘণ্টায় প্রবল বর্ষণ হচ্ছে। এতে সাঙ্গু ও মাতামুহুরী নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/228055